দুর্ঘটনার পরে জনতার হাতে মার খেয়ে দুই পুলিশকর্মী ভর্তি হয়েছিলেন এগরা মহকুমা হাসপাতালে। সেই সূত্রে সামনে এল হাসপাতালের খাবার পরিবেশন নিয়ে চরম অব্যবস্থার ছবি। কোনও রোগী খাবারই পান না। কেউ পেলেও তা এতই নিম্ন মানের যে মুখে তুলতে পারেন না।
রবিবার হাসপাতালে ওই দুই পুলিশকর্মীকে দেখতে গিয়েছিলেন এগরা শহরের তৃণমূল নেতা জয়ন্ত সাহু। তিনি বলেন, “দুপুরে গিয়ে জানতে পারি, ওই দুই পুলিশকর্মীকে সকালে ও দুপুরে খেতে দেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্মীদের জিজ্ঞাসা করার সময়ই আরও কয়েক জন রোগী ও তাঁদের আত্মীয়রা একই অভিযোগ তোলেন। যাঁরা খাবার পেয়েছেন, তাঁদের খাবারের মানও দেখে অবাক হয়ে যাই।” ঘটনাচক্রে তখনই ওই দুই পুলিশ কর্মীকে দেখতে আসেন ওসি গণেশ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সিআই প্রদীপ সমাদ্দার। খাবার দেওয়া হয়নি জেনে তাঁরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁরা বলেন, “চিকিৎসা পরিষেবার কথা বাদই দিলাম। রোগীদের খেতেও দেওয়া হয়নি। খালি পেটেই তাঁরা ওষুধ খাচ্ছেন। স্বাস্থ্যকর্মীদের বিষয়টি জানালেও তাঁরা গুরুত্বই দেননি।” |
হাসপাতালে মামুদ হোসেন।—নিজস্ব চিত্র। |
তৃণমূল নেতা ও পুলিশ আধিকারিকরা সরব হওয়ায় সাহস পেয়ে এ দিন খাবারের থালা নিয়ে বিক্ষোভ দেখান রোগী ও তাঁদের আত্মীয়রা। দেখা যায়, থালায় রয়েছে ছোট এক কুচি মাংস, সামান্য ভাত, অল্প কুমড়োর ঘণ্ট ও নিম্ন মানের সামান্য ডাল।
পাঁচরোলের বাসিন্দা পুলিন প্রধান যক্ষ্মা রোগগ্রস্ত। তিনি বলেন, “এই রোগে ভাল খাবার খেতে হয়। হাসপাতাল থেকে ভাল খাবার দিচ্ছে না বলেই বাধ্য হয়ে বাড়ি থেকে আনাতে হয়।” মহাবিশ্রা গ্রামের খোকন পাত্র, প্রতিবন্ধী স্বপন ভুঁইয়া বলেন, “আমাদের খাবারই দেওয়া হয়নি। রান্না ঘরে খাবার আনতে না গেলে খাবার দেওয়া হয় না। অথচ নিয়ম মতো শয্যায় খাবার পৌঁছে দেওয়ার কথা।”
কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগও জানান রোগী ও তাঁদের আত্মীয়রা। অবস্থা খতিয়ে দেখতে জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেন ও এগরা মহকুমার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অমিতেন্দু পাল হাসপাতালে যান। মামুদ হোসেনের অভিযোগ, “মূলত ঠিকাদার, সাব ঠিকাদার ও রান্নার লোকেরাই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সব জেনেও প্রতিবাদ করছেন না। হয়তো তাঁদের মধ্যে আর্থিক বোঝাপড়া আছে।” মামুদ হোসেন বলেন, “বিষয়টি স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীকেও জানানো হয়েছে।”
যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন ধরেননি এগরা মহকুমা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার প্রিয়তোষ জানা। সাব ঠিকাদার প্রদীপ জানা ত্রুটি স্বীকার করে বলেন, “অন্যায় হয়েছে। আগামী দিন থেকে ভাল খাবার দেওয়া হবে।” তাঁর সাফাই, “রান্নার জিনিসপত্র আমি যথাযথ ভাবে কিনে দিই। কিন্তু তা যে রোগীদের ঠিক মতো দেওয়া হয় না, তা জানি না।”
অমিতেন্দু পাল বলেন, “সরকারি টাকা বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও এই ভাবে রোগীদের খাবার খেকে বঞ্চিত করা অমানবিক ঘটনা।”
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ভারপ্রাপ্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুধীর কীর্তনিয়া বলেন, “তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |