রাজ্যে নবজাতক-স্বাস্থ্যের হাল ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ এ বার এ রাজ্যেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শিশু-স্বাস্থ্যের মানোন্নয়নের একটি আন্তর্জাতিক প্রকল্প। নরওয়ে সরকারের আর্থিক সহায়তায় এসএসকেএম হাসপাতালের নিওনেটোলজি বিভাগে ওই প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল। নরওয়ে সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, তাঁরা প্রকল্পের ব্যাপারে আস্থা হারিয়েছেন। তাই এটি টেনে নিয়ে যাওয়ার কোনও যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না। কলকাতার বদলে এ বার ওই প্রকল্প পেতে পারে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এইমস্)।
নরওয়েতে বছরে প্রতি হাজারে শিশুমৃত্যুর সংখ্যা ৩। এ রাজ্যে সেটাই ৩২। শিশুর নিরাপদ জন্ম, মা ও সদ্যোজাতের পরিচর্যা, ছ’মাস বয়স পর্যন্ত শুধু বুকের দুধই খাওয়ানোর মতো মাপকাঠিতে নরওয়ে গোটা বিশ্বের মধ্যে প্রথম সারিতে। তাই সেই দেশের সঙ্গে কোনও যৌথ প্রকল্প হলে পশ্চিমবঙ্গে শিশুমৃত্যুর হার অনেকটাই কমানো যাবে বলে আশা দেখিয়েছিলেন স্বাস্থ্যকর্তারা। আচমকাই তা বন্ধ হতে বসায় তাঁরাও মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
এসএসকেএম তথা ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ-এর অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে বলেন, “খুবই ভাল প্রকল্প ছিল। বন্ধ হয়ে যাওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক। নিওনেটোলজি বিভাগের যন্ত্র কেনার জন্য নরওয়ে থেকে টাকা এসেছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা কেনা না হওয়ায় টাকা ফেরত যাচ্ছে।”
কেন কেনা হয়নি? বিভাগীয় চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, যন্ত্র কেনার জন্য স্বাস্থ্য ভবন থেকে সময়মতো ছাড়পত্র আসেনি। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা অবশ্য জানান, বিভাগের চিকিৎসকদের টালবাহানাতেই সময়মতো প্রস্তাব জমা পড়েনি। এসএসকেএম সূত্রের খবর, এমন একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রকল্প চালু রাখতে যে উদ্যোগ প্রয়োজন, বিভাগে তার যথেষ্ট অভাব।
এসএসকেএমে নিওনেটোলজিস্ট অরুণ সিংহের তত্ত্বাবধানে বছর দেড়েক আগে এই প্রকল্পটি শুরু হয়। কী রয়েছে এই প্রকল্পে? এসএসকেএম সূত্রের খবর, নরওয়ে থেকে দু’জন চিকিৎসক এবং এক জন নার্সকে এখানে পাঠানো হত চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। এখান থেকে চিকিৎসক ও নার্সদের ওই দেশে পাঠানো হত হাতেকলমে সব শিখে আসার জন্য। এসএসকেএমের এক শিশু চিকিৎসকের কথায়, “নবজাতকের চিকিৎসা যে কোন মানে পৌঁছেছে, না দেখলে বিশ্বাস হয় না। সেই চিকিৎসাই এখানকার শিশুদের দিতে পারতাম। আমাদের দুর্ভাগ্য সেটা আর হবে না।” এসএসকেএমের নবজাতক বিভাগের সামগ্রিক উন্নয়নে আর্থিক বরাদ্দও করেছিল নরওয়ে সরকার। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তা-ও।
প্রকল্প যে তাঁরা চালু রাখতে চান না, কয়েক মাস ধরেই তা নরওয়ের তরফে জানানো হচ্ছিল। চিকিৎসক অরুণ সিংহকে আচমকাই বদলি করে দেওয়া হয় সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে, যেখানে নিওনেটোলজি বিভাগটিই নেই। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, তার পর থেকেই নরওয়ের ওই সংস্থার কর্তারা অসন্তোষ প্রকাশ করতে শুরু করেন। অরুণ সিংহের অনুপস্থিতিতে ওই প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তাঁরা।
অরুণবাবুর বক্তব্য, “নতুন করে আর কী বলব? যা কাজ করার করেছি। এখন কী হয়েছে, বলতে পারব না।” |
