হিমোফিলিয়ার চিকিৎসায় টাকা
‘নয়ছয়’, অভিযুক্ত শিয়ালদহ ইএসআই
হিমোফিলিয়া রোগীদের প্রয়োজনীয় ইঞ্জেকশন দেওয়ার নামে বেআইনি বোর্ড বসিয়ে কয়েক কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে শিয়ালদহ ইএসআই হাসপাতালে। ২০০৯ সালে বাম আমলে এই দুর্নীতির শুরু বলে অভিযোগ। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরেও দেড় বছর বিষয়টি চাপা ছিল। মাসখানেক আগে গোটা ব্যাপারটি সামনে আসে।
ইতিমধ্যেই শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর নির্দেশে শিয়ালদহ ইএসআই হাসপাতালের ওই চিকিৎসকদের বোর্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আলাদা করে ঘটনার তদন্তের নির্দেশও দিয়েছেন মন্ত্রী। তাঁর কথায়, হিমোফিলিয়া বিশেষজ্ঞেরাই জানিয়েছেন, ইএসআই প্রকল্পভুক্ত ৪৭ জন হিমোফিলিয়া রোগীকে ইঞ্জেকশন দিতে বছরে দু’থেকে আড়াই কোটি টাকা খরচ হওয়ার কথা। সেখানে এত দিন লেগেছে বছরে ৬ কোটি। তিন বছরে অতিরিক্ত ৩ কোটি করে ৯ কোটি টাকা কীসে খরচ হল তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে তদন্তকারী অফিসারদের।
পাশাপাশি, শ্রম দফতর শিয়ালদহ ইএসআই থেকে হিমোফিলিয়া রোগীদের নিখরচায় ‘ফ্যাক্টর-৮’, ‘ফ্যাক্টর ৭’ ও ‘ফ্যাক্টর ৯’ ইঞ্জেকশন দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, ইএসআই প্রকল্পভুক্ত হিমোফিলিয়া রোগীদের জন্য এনআরএসের হেমাটোলজি বিভাগের চিকিৎসকদের নিয়ে আলাদা বোর্ড হবে।
রোগীদের পরীক্ষা করে হেমাটোলজিস্টরা লিখে দেবেন কোন রোগীর ইঞ্জেকশন প্রয়োজন। তা দেখিয়ে ১৩টি ইএসআই হাসপাতালের যে কোনওটি থেকে বিনামূল্যে ইঞ্জেকশন মিলবে।
হিমোফিলিয়ায় মানুষের রক্ত জমাট বাঁধে না। মেয়েরা এই রোগের বাহক হয়, আক্রান্ত হয় পুরুষেরা। স্বাস্থ্য দফতরের হিসেবে, রাজ্যে ১৫ হাজার হিমোফিলিয়া রোগী আছেন। এই রোগের স্থায়ী প্রতিকার নেই। মোটামুটি সুস্থ থাকতে নির্দিষ্ট সময় পরপর প্লাজমা বা রক্তরসের কিছু বিশেষ উপাদান (যেমন ফ্যাক্টর ৮, ফ্যাক্টর ৭ বা ফ্যাক্টর ৯) দরকার হয়। এ রাজ্যে সরকারি তরফে এগুলি নিখরচায় বা কম টাকায় দেওয়ার ব্যবস্থা চালু হয়নি। ইএসআই প্রকল্পভুক্ত হিমোফিলিয়া রোগীদের এই উপাদানের ইঞ্জেকশন নিখরচায় দেওয়া শুরু হয় ২০০৯ থেকে। টাকা দেয় ইএসআই ডিরেক্টরেট।
তা হলে এর মধ্যে বেআইনি কাজ বা দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে কেন? ইএসআই ডিরেক্টরেটের ডেপুটি ডিরেক্টর (প্ল্যানিং) রাজীব গণচৌধুরী জানান, কোনও একটি ইএসআই হাসপাতালে বোর্ড তৈরি করে এই ইঞ্জেকশন দেওয়ার কথাই ছিল না। সব ইএসআই হাসপাতাল থেকে এটা দেওয়ার কথা। দ্বিতীয়ত, ইএসআই শিয়ালদহে শান্তনু বসু নামে যে চিকিৎসক কোন হিমোফিলিয়া রোগীর কত বার এই ইঞ্জেকশন লাগবে, তা ঠিক করতেন তাঁর আদতে বায়োকেমিস্ট্রিতে ডিগ্রি। অথচ তিনিই নির্ণয় করতেন, এক জন রোগী সপ্তাহে কত বার কতখানি ফ্যাক্টর ৮ বা ফ্যাক্টর ৯ নেবেন। সেই অনুযায়ী সরকারকেও খরচ মেটাতে হত।
এত দিন বিষয়টি কী করে আড়ালে রইল, তার উত্তর শ্রম দফতর বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দিতে পারেননি। শান্তনুবাবু বলেন, “আমি হেমাটোলজিস্ট নই। তবে আমার হিমোফিলিয়া রোগীদের চিকিৎসার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে।” কিন্তু যেখানে সরকারি হিসাবে ১৫-১৬ হাজার হিমোফিলিয়া রোগীকে ফ্যাক্টর-৮ বা ফ্যাক্টর-৯ দিতে বছরে ৩০ কেটি টাকা খরচ হয়, সেখানে মাত্র ৪৭ জনের ইঞ্জেকশনের জন্য ইএসআইয়ে বছরে ৬ কোটি লাগত কেন? শান্তনুবাবুর দাবি, “আমি ওঁদের অত্যাধুনিক প্রোফাইল অ্যাকটিভ থেরাপি দিতাম। এই চিকিৎসার যে গাইডলাইন, তা মেনেই কার কতটা ইঞ্জেকশন দরকার ঠিক করা হত।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.