শিলিগুড়িতে ধৃত কর্মীর মায়ের দেহ নিয়ে ‘মিছিল’ সিপিএমের
সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষের ঘটনায় ধৃত অমিত দে-র মা বাণীদেবীর হৃদরোগে মৃত্যুর ঘটনাকে সামনে রেখে শহরে ‘শোক মিছিল’ করল সিপিএম। রবিবার বিকেল সাড়ে ৩টে থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে শিলিগুড়িতে ওই শোক মিছিল হয়। কিন্তু শনিবারই প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য ঘোষণা করেছিলেন, শহরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পুরোপুরি শান্ত না-হওয়া পর্যন্ত তাঁরা প্রকাশ্যে কোনও মিটিং-মিছিল করবেন না। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অবশ্য অবস্থান বদলে মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছেন অশোকবাবু। তাঁর যুক্তি, “অমিত জেলে যাওয়ার পরে অসুস্থ হয়ে পড়েন বাণীদেবী। হৃদরোগে তাঁর মৃত্যু হয়। দলের জন্য যে কর্মী জেলে গিয়েছেন, তাঁর মায়ের মৃত্যুর পরে শেষ যাত্রায় সামিল হয়েছেন অনেক মানুষ। এটাকে মিছিল বলা ঠিক নয়।”
অমিত একমাত্র সন্তান। তাঁর বাবার আগেই মৃত্যু হয়েছে। বাড়িতে মা বাণীদেবী একাই থাকতেন। অনেকদিন ধরেই হৃদরোগে ভুগছিলেন। ছেলে গ্রেফতার হওয়ার পরে তিনি অশোকবাবুর সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে শনিবারই শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়।
শিলিগুড়িতে সিপিএমের মিছিল। রয়েছেন অশোক ভট্টাচার্য। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
জেলখানা থেকে তার দশ ঘন্টা আগে মাকে চিঠি লিখেছিলেন ডিওয়াইএফের দেশবন্ধুপাড়ার শাখা কমিটির সদস্য অমিত। চিঠিতে তিনি লেখেন, “আমি অপরাধী নই। আমি রাজনৈতিক বন্দি। আমার জন্য কষ্ট পাবে না। গর্ব অনুভব করবে। তুমি সময় মতো ওষুধ খেয়ো। তোমার শরীর খারাপ হলে আমার কষ্ট হবে।” মায়ের শেষকৃত্য করার জন্য এই দিন ছ’ঘণ্টার জন্য অমিতকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়। মায়ের দেহের সামনে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে অমিত বার বার বলছিলেন, “আমি অপরাধী নই।” তখন সেখানে ছিলেন অশোকবাবু, জীবেশবাবুরাও। এর পরেই সেখান থেকে মৃতদেহ নিয়ে শেষ যাত্রা শুরু হয়। শ্মশানে কাজকর্ম শেষ হওয়ার ফের অমিতকে জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। আইনজীবী মিলন সরকার জানান, এ দিন অমিতের অন্তর্বর্তী জামিনের জন্য আবেদন করা হয়। কিন্তু বিচারক জামিন নাকচ করে দেন।
অশোকবাবুদের দাবি, “এই মৃত্যু কাম্য ছিল না। এটাকে ডেকে আনা হয়েছে। এর জন্য তৃণমূল সরকার, তাদের মন্ত্রী এবং পুলিশ দায়ী। বিনা কারণে অমিত সহ ৫১ জনকে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। সে চাপ থেকেই অমিতের মায়ের মৃত্যু হয়েছে। এবার অন্তত সবাইকে মুক্তি দেওয়া উচিত।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব অবশ্য দাবি করেন, রাজনৈতিক লাভের জন্য সিপিএম মিথ্যে বলছে, কুৎসা রটাচ্ছে। তাঁর কথায়, “অমিতের মায়ের মৃত্যুতেও আমরাও শোকাহত। অমিতকে সমবেদনা জানাই। আমাদের কাউন্সিলর সেখানে গিয়েছেন। তবে যে মামলায় অমিত গ্রেফতার হয়েছেন, তা বিচারাধীন। বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাই না।” বুধবার শিলিগুড়িতে ওই সংঘর্ষের পরে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের নামে যে ৬টি অভিযোগ দায়ের করে সিপিএম, তা নিয়েও ‘মামলা বিচারাধীন’ মন্তব্য করে কথা বলতে চাননি গৌতমবাবু।
গত বুধবার শিলিগুড়িতে এক ঘণ্টার ব্যবধানে সিপিএম-তৃণমূলের মিছিল ঘিরে দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশ, পথচারী, সাংবাদিক সহ অন্তত ৩৫ জন জখম হন। তৃণমূলের মিছিলে ও পুলিশের উপরে হামলার অভিযোগে সিপিএমের দলীয় অফিস থেকে অশোকবাবু, জীবেশবাবু সহ ৫৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। রাতেই অশোকবাবু সহ তিন শীর্ষ নেতাকে ব্যক্তিগত জামিনে ছেড়ে দেয় পুলিশ। ৫১ জনকে পর দিন আদালতে পাঠানো হয়। সে দিন তাঁদের মধ্যে অমিত সহ ৪৬ জনের জামিনের আর্জি নাকচ হয়। ১৮ এপ্রিল ফের শুনানি হওয়ার কথা।
তবে শিলিগুড়ির মানুষ এই দিন নানা দলের চাপানউতোরের মধ্যেই রাজনৈতিক সৌজন্যও ফিরে আসতে দেখেছেন। বাণীদেবীর মৃত্যুর পরে দেশবন্ধুপাড়ার তৃণমূলের কাউন্সিলর স্বপন দাস আগাগোড়া সেই পরিবারের পাশে ছিলেন। অশোকবাবু সহ সিপিএম নেতাদের সঙ্গে কথাবার্তাও বলেছেন। শ্মশানেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। কংগ্রেসের কাউন্সিলর তথা পুরসভার মেয়র পারিষদ সঞ্জয় পাঠকও শেষ যাত্রায় সামিল হয়েছিলেন।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.