সেচ পাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগে ভর্তুকি হুগলি জেলায়
প্রচার নেই, আবেদনই করছেন না চাষিরা
সেচের পাম্পে বৈদ্যুতিকরণের জন্য ভর্তুকি ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু ওই প্রকল্পের যথাযথ প্রচার নেই। তথ্য জানতে চেয়েও হয়রান হচ্ছেন চাষিরা। হুগলিতে ২৬০০ চাষিকে বিদ্যুৎচালিত পাম্পসেটের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে আবেদনপত্র জমা পড়েছে সাকুল্যে ৫৮টি।
সরকারি সূত্রের খবর, গত বছরের ৩০ নভেম্বরে কৃষি দফতর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। চাষিদের আবেদনের ভিত্তিতে পাম্পসেট বৈদ্যুতিকরণে এককালীন ৮ হাজার টাকা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। ওই টাকা কৃষি দফতর সরাসরি রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানিকে দেবে বলে ঠিক হয়। রাজ্য প্রশাসনের বক্তব্য, চাষিরা নিজেরাই পাম্পসেট বসালে সেচের ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা হবে। খরচ কমবে। অন্যের কাছ থেকে শ্যালো বা মিনি ডিপ টিউবওয়েলের জল কিনতে হবে না।
কৃষিপ্রধান হুগলিতে সেচপাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগের লক্ষমাত্রা ধরা হয় ২৬০০টি। মোট খরচ হওয়ার কথা ২ কোটি টাকার কিছু বেশি। আবেদন জমার শেষ দিন ছিল গত ১৫ মার্চ। জেলায় দু’টি কমিটি গড়া হয়েছিল এই কাজে। একটি ব্লক স্তরে। অন্যটি জেলা স্তরে। প্রতি ব্লকে ৩ সদস্যের স্ক্রিনিং কমিটি (বিএলএসসি) করা হয়। কমিটির চেয়ারম্যান বিডিও। এই কমিটি আবেদনপত্র যাচাইয়ের পরে তা পাঠিয়ে দেয় জেলায়। সেখানে জেলা থেকে ওই আবেদনের ভিত্তিতে অনুমোদন দেওয়ার কথা। এই কমিটির মাথায় আছেন জেলাশাসক।
তবে বাস্তব হচ্ছে, পরিকাঠামো এবং টাকা থাকলেও যথেষ্ট সংখ্যক আবেদনই জমা পড়েনি। আবেদন পত্র যাচাইয়ের পরে মাত্র ৩৬টি আবেদন ব্লক থেকে জেলায় অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। আপাতত সমস্ত আবেদন বিদ্যুৎ দফতরে পাঠানো হয়েছে।
এত কম আবেদন জমা পড়ল কেন? এর পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ উঠে আসছে। প্রথমত, কৃষি দফতরের তরফে পর্যাপ্ত প্রচারের কথা বলা হলেও বহু চাষিদের কানে বিষয়টি পৌঁছয়নি। দ্বিতীয়ত, যে দু’টি কমিটি গড়া হয়েছে, তার কোনওটিতেই জনপ্রতিনিধিদের রাখা হয়নি। প্রশাসনেরই একাংশের বক্তব্য, এই সমস্ত প্রকল্পের ক্ষেত্রে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতকে অবশ্যই জড়িয়ে নেওয়াটা রীতি। এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। জেলা পরিষদের কাছে সার্কুলার পর্যন্ত পাঠানো হয়নি। পঞ্চায়েত সমিতি বা পঞ্চায়েতগুলিকেও কিছু জানানো হয়নি। এই অবস্থায় শুধুমাত্র কৃষি আধিকারিক বা বিডিও দফতরের পক্ষে চাষিদের বিষয়টি জানানো সম্ভব হয়নি। তৃতীয়ত, প্রশাসনের একাংশের মতে, হুগলি জেলায় সেচের জলের তেমন সমস্যা নেই। মূলত নদী বা সেচ খালের জল দিয়েই সেচের প্রয়োজন মিটে যায়। তাই এ ব্যাপারে চাষিদের ততটা আগ্রহ নেই। তা ছাড়া, চাষিদের একাংশের হুকিংয়ের প্রবণতাও রয়েছে।
জেলাশাসক মনমিত নন্দা অবশ্য প্রচারে ঘাটতির কথা মানেননি। তিনি বলেন, “বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির নির্দিষ্ট ফর্মে আবেদন জমা করার কথা। অনেক ক্ষেত্রে তা হয়নি। তাই হয় তো আবেদন গ্রাহ্য হয়নি।”
চাষিদের অভিজ্ঞতা অবশ্য ভিন্ন।
পোলবা-দাদপুর ব্লকের গোস্বামী-মালিপাড়া গ্রামের চাষি কাশীনাথ ঘোষের বিঘে পনেরো জমি রয়েছে। তিনি বলেন, “বিষয়টি শুনে বিডিও অফিসে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওখান থেকে ভাল করে জানতেই পারলাম না। মেশিন ভাড়া নিয়ে জমিতে জল দিই। নিজের সেচ পাম্প থাকলে তো ভালই। কিন্তু আদৌ বিদ্যুতে সাশ্রয় হবে কতটা, সেটাও তো জানা জরুরি। কোথায় তা জানতে পারব?” দাদপুরের পুঁইনান গ্রামের বাসিন্দা শেখ লাল্টুর বক্তব্য, “বিদ্যুৎচালিত পাম্পে কতটা সুবিধা হবে, তা জানা দরকার। পঞ্চায়েত থেকে তো কিছুই জানানো হয়নি। দিন দু’য়েক আগে লোকমুখে শুনেছি।” তাঁর সংযোজন, “কোথায় গেলে এ ব্যাপারে জানতে পারব, তা-ই বুঝতে পারছি না।” লাল্টুবাবুদের পারিবারিক জমির পরিমাণ প্রায় ৪০ বিঘা। গুপ্তিপাড়ার জামতলার চাষি চরণ মুর্মুও বলেন, “এ নিয়ে কিছুই শুনিনি। পাম্প ভাড়া নিয়ে সেচ করি। আগে ঘণ্টায় ৬০ টাকা ভাড়া ছিল। এ বছর ১০০ টাকা। বিদ্যুৎচালিত পাম্পের সুবিধা পাব কিনা, যদি পাই তা হলে কত খরচ হবে সে সব তো জানতে হবে!”
সেচ পাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগের দাবিতে সারা বাংলা বিদ্যুৎ গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন দীর্ঘ আন্দোলন করছে। তাদের বক্তব্য, কৃষি দফতরের সঙ্গে বিদ্যুৎ দফতরের সমন্বয়ের অভাবে অনেকে আবেদন জমা দিতেই পারেননি। সংগঠনের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক প্রদ্যুৎ চৌধুরী বলেন, “ভর্তুকি দেওয়ার ভাবনা ভাল। তবে, চাষিদের প্রকৃত ভাল চাইলে বিদ্যুতের দাম কমানো হোক। ৩ একর পর্যন্ত যাঁদের জমি আছে, তাঁদের নিখরচায় এবং তার উপরে ৫০ পয়সা প্রতি ইউনিট দরে বিদ্যুৎ দেওয়া হোক। যেমনটা করে অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ুর মতো কয়েকটি রাজ্য।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.