সম্পাদকীয় ২...
অল্পে সুখমস্তি
ষোলো বছরের মার্কিন কিশোর এলি রাইমার সম্প্রতি এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে উঠিয়াছেন। এলি ডাউন সিনড্রোম নামক জিনঘটিত সমস্যায় আক্রান্ত। ঘটনাটি গুরুত্বপূর্ণ। তাৎপর্যপূর্ণও। শুধু তাঁহার পক্ষে নহে, সাধারণ ভাবে মানবজাতির পক্ষে। এক জন মানুষের নিজেকে অতিক্রম করিয়া যাওয়ার সামর্থ্য কতখানি, এই দৃষ্টান্ত তাহা দেখাইয়া দেয়। মানুষ সচরাচর নিজেদের ক্ষমতা যথাসাধ্য প্রয়োগ করে না। বস্তুত, সাধ্য যতটা, তাহার দুই বা তিন শতাংশ প্রয়োগ করিয়াই মানুষ ভাবে, ইহার অধিক এক জনের পক্ষে সম্ভব নহে। এবং তাহা ভাবিয়া নিশ্চিন্ত ও পরিতৃপ্ত থাকে। কিন্তু মাঝে মাঝে এই ধরনের অ-সাধারণ উদাহরণ সাধারণের অন্তরাত্মাকে নাড়া দেয়। তখন মানুষ বুঝিতে পারে, এক জন মানুষের পক্ষে কী করা সম্ভব। কঠিন শারীরিক সমস্যা লইয়া যদি কেহ ১৭৫০০ ফুট উচ্চতায় পৌঁছাইতে পারেন, তাহা হইলে যে কোনও ‘স্বাভাবিক’ মানুষ চাহিলে কত কঠিন কাজই না সাধন করিতে পারে!
সাধারণত মানুষের নিজেকে যথেষ্ট অতিক্রম করিবার তাগিদ থাকে না কেন? সে ‘স্বাভাবিক’ বলিয়াই কি? ওই কিশোরের শারীরিক সমস্যা ছিল বলিয়াই কি তিনি নিজেকে অনেক দূর অতিক্রম করিতে সমর্থ হইয়াছেন? হয়তো সেই কারণেই তিনি বুঝিয়াছেন, জীবন কত মূল্যবান, কত সুন্দর, জীবনের অতি সামান্য কাজগুলিও কতখানি গুরুত্বপূর্ণ। এই বোধ হয়তো তাঁহার দৈনন্দিন জীবনাচরণ হইতেই আসিয়াছে। যখন অতি সাধারণ কাজ সম্পাদনের জন্যও তাঁহাকে কষ্ট করিয়া নিজেকে প্রয়োগ করিতে হয়, তখন সেই অনুশীলনের গুরুত্বও তাঁহার মস্তিষ্ক উপলব্ধি করিতে পারে। ‘স্বাভাবিক’ মানুষের ক্ষেত্রে এমন বিশেষ প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না বলিয়াই হয়তো সে অনুশীলনের গুরুত্ব যথেষ্ট অনুধাবন করে না। নিত্য কাজ অভ্যাসমাত্র হইলে এই বোধই জন্মায় যে, ‘অল্পে সুখমস্তি’। সেই বোধ ব্যক্তিকে উদ্বুদ্ধ করিতে উদ্যোগী হয় না। সে অল্পে সন্তুষ্ট আলস্যের বৃত্তে ঘুরিতে থাকে।
পরিশ্রমের বিকল্প নাই। সত্য ইহাই যে, ঝকঝকে কাগজে মোড়া জীবন নামক উপহারটি বিনা পরিশ্রমে লাভ করিলে নিজেদের প্রস্তুত করিবার তাগিদ থাকে না। যেটুকু প্রস্তুত ছিল, তাহাকে নিংড়াইয়া লইয়াই আত্মার শান্তি হয়, তাহার বাহিরে গিয়া আপন ক্ষমতা উপলব্ধি করিবার উদ্যোগ জন্মায় না। এমনকী জীবন কতটা সম্ভাবনা লইয়া প্রস্তুত ছিল, তাহা জানার প্রচেষ্টাও ঠিক মতো হইয়া উঠে না। ‘চালাইয়া দেওয়া’ই জীবনের লক্ষ্যে পরিণত হয়। ইহাতে জীবনের অনেকটাই ফাঁকি পড়িয়া যায়। অল্পে সন্তুষ্টির মায়া অবশ্য সেই ফাঁকিও বুঝিতে দেয় না। যথা পশ্চিমবঙ্গের গড়পড়তা বাঙালি। কচুরিপানার পুকুরই যাহার স্বর্গ, সে কেন এভারেস্টের বেস ক্যাম্পের কথা ভাবিবে?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.