সঙ্কটে কয়েক হাজার শিল্পী
আধুনিকতায় পিছিয়ে ধুঁকছে কাঁসা-তাঁত শিল্প
য়েক বছর আগেও শহরে ঢুকলে এক ভাবে কানে বাজত কাঁসার বাসন পেটানোর টুংটাং...টুংটাং, তাঁত চালানোর খটাখট্ শব্দ। এখন সেই শব্দগুলি ক্ষীণ হতে হতে মিলিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়।
পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের রামজীবনপুরের ঐতিহ্যময় তাঁত, কাঁসা শিল্প এখন প্রবল অস্তিত্ব সঙ্কটে। বংশ পরম্পরায় চলে আসা এই শিল্প দু’টির উপর এক সময় প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে নির্ভর করতেন বিস্তীর্ণ এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। কিন্তু, তীব্র প্রতিযোগিতা ও বাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি-সহ নানা সমস্যায় হারাতে বসেছে শিল্পগুলি।
এক সময় রামজীবনপুরে সাদা তাঁতের শাড়ি তৈরি হত। সেই শাড়ি কলকাতা-সহ বহু জেলার ব্যবসায়ীরা নিয়ে যেতেন। এমনকী তা পাড়ি দিত বিদেশেও। তখন, শিল্পীরা নিজেরাই কাঁচামাল কিনে শাড়ি তৈরি করে কলকাতা-সহ বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করতেন। লাভও ছিল ভাল। এলাকায় প্রায় সকলেরই ঘরে ছিল তাঁত। কিন্তু, ক্রমশ বাড়ল কাঁচামালের দাম। কমতে থাকল লাভ। ধীরে ধীরে পরের প্রজন্ম সরতে থাকল অন্য লাভজনক পেশায়। ফলে এখন সেখানে তৈরি হয় মহাজনদের অর্ডার অনুযায়ী রঙ-বেরঙের ফরমায়েশি চেক ও ছাপা শাড়ি। কিন্তু, এখনও ঐতিহ্যের টানে এই পেশায় থেকে গিয়েছেন গুটি কয়েক শিল্পী। এঁদের মধ্যে কয়েকজন হলেন রামজীবনপুরের বাসুদেব খাঁ, তরুণ বীট, বনমালি দাস, কৃষ্ণ দাস। তাঁদের বক্তব্য, “এখনও শাড়ির জনপ্রিয়তা আছে বাজারে। কিন্তু, কাঁচামালের খরচ খুব বেড়ে গিয়েছে। সরকার যদি পাশে দাঁড়ায়, তা হলে তাঁত শিল্পে পুনরজ্জীবন সম্ভব। পরিবর্তন হবে আর্থ-সামাজিক অবস্থারও। বাড়ির ছেলে-মেয়েদের আর পেটের টানে বাইরে যেতে হবে না।” তাঁরা প্রত্যেকেই নিজেরা কিছু কিছু করে শাড়ি তৈরি করেন। কিন্তু তা নিয়ে ধনেখালি বা অন্যত্র বিক্রি করতে গেলে সমস্যায় পড়েন। তাঁদের অভিযোগ, মহাজন ও আড়তদারের যোগসাজশে বাজারে নিজেদের তৈরি শাড়ি বিক্রি করতে পরাছেন না। ক্ষোভ, বছরে দু’একবার সরকার আধুনিক শাড়ি তৈরির প্রশিক্ষণ দিলেও প্রতিশ্রুতি মতো কাঁচামাল থেকে যন্ত্রপাতি কিছুই দেয়নি।
একই রকম ভাবে ধুঁকছে খড়ারের কাঁসা শিল্পও। এখানকার কাঁসাও যেত বিদেশে। এখানে মূলত খাঁটি কাঁসার থালাই তৈরি হয়। শিল্পীদের বক্তব্য, স্টিলের বাসনের বাড়বাড়ন্তে রাঙ, তামা দিয়ে তৈরি এই থালার চাহিদা কিছুটা কমলেও এর বাজার এখনও শেষ হয়ে যায়নি। কিন্তু মূলধন, কারিগর ও আগেকার মতো বাজারজাত করার সুবিধা না থাকায় শতাধিক বছরের পুরোনো এই শিল্প প্রায় নষ্টই হয়ে গিয়েছে। অথচ, আগে খড়ারে সত্তর ভাগ পরিবারের এই শিল্পেই ছিল একমাত্র ভরসা। প্রাক্তন শিক্ষক তথা শিল্পী পরিবারের সদস্য আশি ছুঁইছুঁই নিরঞ্জন দাস স্মৃতি হাতড়ে আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, “ছোট বেলায় বাবা-কাকারা রাং ও তামা গলিয়ে খাঁটি কাঁসার থালা তৈরি করতেন। এত চাহিদা ছিল যে সারা রাত কাজ করেও অর্ডার দেওয়া যেত না। এখন সব শেষ।” কাঁসা ব্যবসায়ী সুশীল বর্ধন বলেন, “শুনেছি বর্তমান সরকার ক্ষুদ্রশিল্পের বিষয়ে উৎসাহী। সরকার যদি একটু উদ্যোগ নেয় তা হলে শিল্পটিকে ফের বাঁচানো সম্ভব হবে।”
সমস্যার কথা মানছে প্রশাসনও। মিলেছে আশ্বাসও। ঘাটালের মহকুমাশাসক অংশুমান অধিকারী বলেন, “দু’টি শিল্পেই সমস্যা রয়েছে। তবে সরকার থেকে শিল্পীদের ঋণ এবং বাজার তৈরির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুরোনো এই শিল্পগুলিকে একটা স্বাভাবিক চেহারায় ফেরাতে আমরা জোর দিচ্ছি।” একই বক্তব্য রামজীবনপুর পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের শিবরাম দাস এবং খড়ারের চেয়ারম্যান উত্তম মুখোপাধ্যায়েরও। দু’জনই বলেন, “স্থানীয় শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে কী ভাবে ফের শিল্পগুলিকে পুনরুজ্জীবন দেওয়া যায় তা দেখব। পুরসভা থেকে সব রকম সাহায্যই করা হবে।”

দিঘায় তাঁত শিল্পের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
সৈকত শহর দিঘায় রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কিুটর শিল্প দফতর তন্তুবায়ীদের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও তাঁত বস্ত্রে আকর্ষণ বাড়াতে শো-রুম তৈরি করবে। শনিবার দিঘায় এ কথা জানান রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তিনি বলেন, “দিঘায় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মন্ত্রকের প্রায় ৩০ ডেসিমিলের দু’টি জায়গা আছে। দু’টি জায়গাতেই বতর্মানে অবশ্য জবর দখল রয়েছে। সেই জবর দখল সরিয়েই প্রকল্প দু’টি হবে।” স্বপনবাবু শনিবার দিঘায় দফতরের জায়গা দু’টি ঘুরে দেখেন। সঙ্গে ছিলেন দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা কাঁথির তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারী।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.