সেবাব্রত মুখোপাধ্যায় • বেলডাঙা |
আশার আলো নিয়েই বাংলা নববর্ষে পা রাখছেন সোনা ব্যবসায়ীরা।
গত পাঁচ মাসে সোনার দাম প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা কমেছে। গত শীতে বিয়ের ভরা মরসুমেও দশ গ্রাম গয়না সোনার দাম ছিল ৩০ হাজার ৬০০ টাকা। তা চলতি এপ্রিলে ২৭ হাজারেই বিকোচ্ছে। কিন্তু ২০১২ সালের নভেম্বরে সোনার দাম ছিল ৩১ হাজারের কাছে। তা বাংলা বছরের শেষ দিনে এসে ঠেকেছে ২৭ হাজার ৮৫ টাকায়। এতে খুব স্বাভাবিক ভাবে নতুন বছরে ভাল ব্যবসার আশায় বুক বাঁধছেন মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক টগরচন্দ্র পোদ্দার বলেন, “সোনার দাম গত কয়েক মাসে বেশ খানিকটা হ্রাস পেয়েছে। তবে এতেই বাজার পুরোপুরি ঘুড়ে দাঁড়াবে তা এখনই বলা যাবে না। বাজারের ক্রেতারা এখনও ভাবছেন সোনার দাম আরও কমবে। ফলে তাঁরা অপেক্ষা করছেন। তবে এটুকু বলা যায় সোনার ব্যবসায়ী ও শিল্পীদের অবস্থা আগের থেকে কিছুটা ভালই।”
নববর্ষে সোনার অলঙ্কার উপহার দেওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএসসি-র ছাত্র ছন্দক চক্রবর্তী তাঁর বান্ধবী ঋতুপর্ণাকে নববর্ষে একটি দুল কিনে উপহার দিয়েছেন। ছন্দকের কথায়, “কিছু উপহার কিনব বলে ভাবছিলাম। তখনই দেখলাম, সোনার দাম কমেছে। কয়েকদিন আগেও যে দুলের দাম চার হাজার টাকা ছিল, তা এখন তিন হাজার সাড়ে সাতশো টাকায় মিলছে। তাই ওই দুলই কিনলাম।”
স্বর্ণশল্পী সাধন মণ্ডলের কথায়, “গত কয়েক মাস আগেই আটপৌরে গলার হার বিক্রি করেছি ন্যূনতম ২৩ হাজার টাকায়। তার দর কমে সাড়ে বাইশ হাজার টাকারও নীচে নেমেছে।” বর্ষারম্ভে সেই হারের চাহিদা রয়েছে। বেলডাঙার ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, তাই কম সোনা লাগে এমন অলঙ্কারের বাজার ক্রমশ উঠছে। কুটীর শিল্প হিসাবে নাকছাবির একটা বিরাট বাজার রয়েছে। হাতে তৈরি নাকছাবি ভারতের অনেক প্রদেশেই বিক্রি হয়। অসম, বিহার, ওড়িশা, দিল্লি তো বটেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতেও এই নাকছাবির যথেষ্ট কদর রয়েছে। আটশো টাকা থেকে শুরু করে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত দামে এই নাকছাবি বিক্রি হয়। অনেক মানুষ এই শিল্পে যুক্ত থাকায় এই দাম কমাটা তাঁদের কাছে অনেকটা আশার আলো দেখাচ্ছে। তবে বেলডাঙার মতো ছোট শহর বা গ্রামকেন্দ্রীক এই ব্যবসায় অনেক সমস্যা রয়েছে। বর্তমানে প্রায়ই ক্রেতারা সোনার বড় ব্যবসায়ীদের হলমার্কের বিজ্ঞাপন দেখে ছোট দোকানগুলোতেও হলমার্কযুক্ত গয়না কিনতে আসছেন। কিন্তু ছোট ব্যবসায়ী ও স্বর্ণশিল্পীদের কাছে এই হলমার্কযুক্ত গয়না দেওয়া যথেষ্ট সমস্যার। কারণ হলমার্ক নথিভুক্ত করার কেন্দ্র হাতেগোণা। অন্য কোনও প্রতিষ্ঠান থেকে করাতে গেলেও কলকাতা ছুটতে হয়। যাতায়াত খরচ, সারা দিন দোকান বন্ধ রাখা কিংবা রাস্তায় চুরি ডাকাতির মতো ঝুঁকিও নিতে হয় ব্যবসায়ীদের। ফলে ছোট শহর বা মফসসল গুলিতে এই হলমার্ক সরবরাহ কেন্দ্র থাকলে সমস্যা কমে যায়।
বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক টগরচন্দ্র পোদ্দার বলেন, “এটা একটা বড় সমস্যা। এই সমস্যার সমাধানে আমরা সমিতির পক্ষ থেকে দিল্লি যাচ্ছি ১৭ এপ্রিল। ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে আলোচনা করতে সারা দেশে ছোট শহর ও মফসসল বাজারে এই কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে। বর্তমানে হলমার্ক রেডিস্ট্রেশন ফি তিন বছরের জন্য ২৫ হাজার টাকা। আমাদের দাবি বছরে সেটা কমিয়ে বছরে পাঁচশো টাকা করতে হবে।” স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কথায়, “ক্রেতারা আসছেন। কিন্তু তাঁরা আশা করছেন আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তাল রেখে ভারতের বাজারেও সোনার দাম আরও কয়েক হাজার টাকা কমবে। ফলে তাঁরা এখনই সোনা কেনায় পুরোপুরি লগ্নি করতে চাইছেন না।”
তবু সোনার দোকানে লোক আসছেন, এইটুকুই বড় কথা ছোট শহরের ব্যবসায়ীদের কাছে। সামনে রয়েছে বিয়ের মরসুম। তাই আশায় বুক বাঁধছেন তাঁরা। |