ইনিংসের সূচনা করতে নেমে এ যেন অনেকটা গাওস্কর অথবা তেন্ডুলকরের প্রথম বলেই বোল্ড হওয়ার মতো ঘটনা। এই রকমই ঘটেছে ২০১২-’১৩ সালের বার্ষিক তথা শেষ ত্রৈমাসিক ফলাফল প্রকাশের সূচনা পর্বে। প্রথম বলেই ধরাশায়ী অন্যতম সেরা তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিস। ফলে বড় পতন বাজারে।
রীতি অনুযায়ী মরসুমের প্রথম দিকেই ফলাফল প্রকাশ করে ইনফোসিস। চৈত্র মাসের শেষ বেলায় ফলাফল প্রকাশ করে নববর্ষের গোড়ায় বাজারকে আরও কিছুটা মন্দা উপহার দিল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি। কোম্পানির ফলাফলে বাজার যতটা না-হতাশ, তার থেকে বেশি শঙ্কিত ২০১৩-’১৪ সাল সম্পর্কে কোম্পানির আগাম অনুমানকে কেন্দ্র করে। বিক্রি এবং মুনাফা সম্পর্কে কোম্পানির পূর্বাভাস ন্যাসকমের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প সম্পর্কে পূর্বাভাসের তুলনায় অনেকটাই কম।
বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করছেন শিল্পের সমস্যার কারণে নয়, কোম্পানির নিজস্ব সমস্যার জন্যই পূর্বাভাসে এতটা নিম্নচাপ। এর প্রভাবে এক দিনে কোম্পানির শেয়ার দরে পতন হয় ৬২২ টাকা বা ২১.৩৩%। ২০০৩ সালের পরে অর্থাৎ গত ১০ বছরে সংস্থার শেয়ারে এত বড় পতন হয়নি। এক দিনে কোম্পানির শেয়ার -হোল্ডারদের সম্পদমূল্য কমেছে প্রায় ৩৫,০০০ কোটি টাকা।
ইনফোসিসের ফলাফল বাজারকে (সেনসেক্স) টেনে নামায় ৩০০ পয়েন্ট। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। শুক্রবার শেষ বেলায় সেনসেক্স নেমে দাঁড়ায় ১৮,২৪২ অঙ্কে। সব মিলিয়ে বেশ শঙ্কিত লগ্নিকারীরা। ঝুঁকে পড়া বাজারে কিছুটা আশার আলো দেখিয়েছিল ন্যাসকম। চলতি আর্থিক বছরে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে ১২ থেকে ১৪ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে ন্যাসকম। সে ক্ষেত্রে ইনফোসিসের ৬ থেকে ১০ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস হতাশ করে লগ্নিকারীদের। আগামী দু’সপ্তাহে দু’একটি বড় মাপের সংস্থা উন্নত ফলাফল উপহার দিয়ে লগ্নিকারীদের চিত্তের উন্নতি ঘটাতে পারে কি না, সেটাই এখন দেখার।
শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির হার শূন্যের নীচে যায়নি, একে ভাল লক্ষণ বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় সরকার। অন্য দিকে, আর এক দফা সুদ কমার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে মূল্যবৃদ্ধি এক চিলতে কম হওয়ায়। ফলে শুক্রবার এত দুর্বল বাজারেও ব্যাঙ্ক শেয়ারগুলিকে সামান্য হলেও উঠতে দেখা যায়।
মার্কিন অর্থনীতির একটু একটু করে উন্নতি ঘটছে। অন্য দিকে ভারতীয় অর্থনীতির অবস্থা বেশ বেহাল। মার্কিন শেয়ার বাজারও যথেষ্ট চাঙ্গা। এই পরিস্থিতিতে অনেক বিদেশি লগ্নিকারীই বিনিয়োগ সরিয়ে নিচ্ছেন ভারত থেকে। এ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও আদৌ ভাল জায়গায় নেই। একই সঙ্গে অর্থনীতি এবং রাজনীতি দুইয়েরই হাল খারাপ হওয়ায় বাজারের হাল কবে ফিরবে, কেউই জোর দিয়ে বলতে পারছেন না। কোম্পানির বার্ষিক ফলাফল থেকেও উত্তেজক কিছু আশা করা হচ্ছে না। হাল যাতে আরও খারাপ না-হয়, তার জন্য ভাল বর্ষার প্রয়োজন।
ঋণপত্র নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ড মোটের উপর ভাল লাভ এনে দিলেও বেশ খারাপ অবস্থা ইক্যুইটি ফান্ডগুলির। বিদেশে লগ্নি করে, এমন ফান্ডগুলির অবস্থা মন্দের ভাল। পরিস্থিতি যা, তাতে বাজার আরও কিছুটা ঝুঁকতেই পারে। তখনই আসলে শেয়ার কেনার সময়। মন্দায় সঠিক সওদা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পরে মোটা লাভের সন্ধান দেয়। এই জায়গাতেই সাধারণ মানুষ ভুল করেন। এঁরা তেতে-ওঠা বাজারে শেয়ার কিনতে উদ্যত হন। লাভ দেখা দিলেও বিক্রি করেন না। পরে হঠাৎ বাজার পড়ে গেলে হতাশ হন। জলের দরে শেয়ার কিনে দুধের দরে বিক্রি করাতেই আছে সাফল্যের চাবিকাঠি।
শুধু শেয়ার নয়, পড়ে চলেছে সোনার দামও। এক শ্রেণির মানুষের কাছে এটি শুভ সংবাদ হলেও যাঁরা সোনায় মোটা লগ্নি করেছেন, তাঁরা কিন্তু চিন্তাগ্রস্ত। আশু হাল ফিরবে এমন আশা দেখাচ্ছে না বিশ্ব বাজার। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, যা অতি দ্রুত ওঠে, তা আবার দ্রুত নেমেও আসে। সোনার বড় পতন অবশ্য নববর্ষে সুযোগ করে দিয়েছে পছন্দের গয়না কেনার। |