গচ্চা যা দেওয়ার আর হয়রানি যা হওয়ার, সেই পর্ব শেষ হল কলকাতাতেই। ভিসার মেয়াদ বাড়াতে ব্যাঙ্কক যাওয়ারও দরকার হল না। তাই শেষ মুহূর্তে ব্যাঙ্কক-যাত্রা বাতিল করে ছোট বিমানটি নিয়ে মায়ানমার উড়ে গেলেন জাপানি পাইলট, ক্যাপ্টেন তেরাবারু মাৎসুয়াকি। বিমানের জ্বালানি গ্যাসোলিনের আশায় ৬ এপ্রিল নরেন্দ্র মোদীর রাজধানী আমদাবাদে নেমে তিনি যে-ঝামেলায় পড়েছিলেন, শনিবার তার অবসান হল কলকাতায়।
অথচ ১০ এপ্রিল কলকাতায় নেমেই ভয়ানক বিপদে পড়ে গিয়েছিলেন ৬৩ বছরের এই জাপানি পাইলট। রেস্ত আর ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় জেলে যাওয়ার মতো পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন তিনি। সমস্যা শুরু হয় আমদাবাদে। এক জাপানি সংস্থার জন্য আমেরিকা থেকে একটি ছোট বিমান নিয়ে উড়তে উড়তে জ্বালানি ভরার জন্য ৬ এপ্রিল আমদাবাদে নামেন মাৎসুয়াকি। কিন্তু সেখানে যে গ্যাসোলিন মেলেই না, কেউ বলেনি তাঁকে। অগত্যা মুম্বই থেকে আনাতে হয় সেই জ্বালানি। সেই কাজে আমদাবাদ-মুম্বইয়ে কেটে যায় চার-চারটি দিন। ফুরিয়ে যায় সঙ্গের সমস্ত পুঁজি। আর সেখান থেকে উড়ে ১০ তারিখে কলকাতায় নামার পরেই শেষ হয়ে যায় তাঁর ভিসা। ফুরিয়ে যায় ওড়ার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতির মেয়াদও। |
অকূলপাথারে পড়ে যান জাপানি পাইলট। বিমানবন্দরের অফিসারদের বক্তব্য, শনিবার সকালের আগেই পাওনাগণ্ডা মিটিয়ে এবং প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়ে উড়ে গেলে তাঁর সমস্যা আর বাড়ার কথা নয়। কিন্তু না-গেলে ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরেও ভারতে থাকার দায়ে যেতে হতে পারে জেলে। অগত্যা কলকাতা থেকে অর্থের জন্য জাপানে ফোন করেন তিনি। সেই অর্থ পেয়ে যান শুক্রবার সন্ধ্যায়। ঠিক করেছিলেন, ভিসা সংক্রান্ত সমস্যা মেটাতে কলকাতায় না-থেকে ব্যাঙ্কক চলে যাবেন। সেখান থেকে ভারতে থাকার ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে নিয়ে ফিরে আসবেন কলকাতায়। তত দিন পর্যন্ত ছোট বিমানটি থাকবে এই শহরের বিমানবন্দরেই। শুক্রবার রাতে ব্যাঙ্ককের বিমানের টিকিটও কেটে ফেলেন তিনি। তবে রাতেই সেই যাত্রা বাতিল করে থেকে যান কলকাতায়।
কেন ঝুঁকি নিলেন মাৎসুয়াকি?
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, এখানে তাঁর বিমানের দেখভাল করার দায়িত্ব নিয়েছিল ‘ভদ্র ইন্টারন্যাশনাল’। মাৎসুয়াকির অনুপস্থিতিতে ছোট ছয় আসনের বিমান যে তাদের হেফাজতে থাকবে, তার জন্য মাৎসুয়াকিকে চুক্তি করতে বলেছিল ওই সংস্থা। কিন্তু মাৎসুয়াকি রাজি হননি। ভদ্র ইন্টারন্যাশনাল জানায়, চুক্তি ছাড়া তিনি বিমানটি কলকাতায় ফেলে চলে গেলে তারা দায়িত্ব নেবে না। তার পরেই ব্যাঙ্কক-যাত্রা বাতিল করেন মাৎসুয়াকি। কেন ওই সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হল না, তার ব্যাখ্যা মেলেনি।
শুক্রবার রাতেই ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবার আবেদন করেন মাৎসুয়াকি। নিজের বিমান নিয়ে উড়ে যাওয়ার অনুমতিও শনিবার সকালে পেয়ে যান তিনি। শনিবার দুপুরের মধ্যে গ্যাসোলিন কিনে এবং বিমানবন্দর ও ভদ্র ইন্টারন্যাশনালের পাওনা মিটিয়ে নিজের বিমান নিয়েই মায়ানমার উড়ে যান মাৎসুয়াকি।
|