ভারতে ভোগান্তির কথা ভুলবেন না জাপানি পাইলট
কাশ থেকে নামতেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে।
বিমানে জ্বালানি ভরার টাকা নেই, এ দিকে ভারত থেকে ওড়ার অনুমতির মেয়াদ শেষ। ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে আসছে। শুক্রবার সকালে ৬৩ বছরের জাপানি পাইলট, ক্যাপ্টেন তেরাবারু মাৎসুয়াকি হতোদ্যম হয়ে বসেছিলেন বিমানবন্দরের ম্যানেজারের ঘরে। বিধ্বস্ত, হতাশ।
কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না মাৎসুয়াকি। একটি জাপানি সংস্থার জন্য আমেরিকা থেকে একটি ছোট বিমান নিয়ে দেশে ফেরার কথা তাঁর। বিভিন্ন বিমানবন্দরে থামতে থামতে আসছেন, জ্বালানি ভরে নিচ্ছেন। কোথাও সমস্যা হয়নি। ভারতেই সব গণ্ডগোল হল। এতটাই যে, মাৎসুয়াকি বলছেন, আর কোনও দিন ভারতে আসতেই চান না। “আমার দেশের কোনও পাইলট ছোট বিমান নিয়ে উড়লে বারণ করব ভারতে আসতে।”
অথচ এতটা সমস্যা হওয়ার কথা ছিল না। পাইপার সংস্থার কেনা নতুন বিমান নিয়ে আমেরিকার বাহামা থেকে জাপানের ওসাকার উদ্দেশে মাৎসুয়াকি রওনা হন ১৩ মার্চ। কানাডা, আইসল্যান্ড, ব্রিটেন, পোল্যান্ড, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি হয়ে ভারতে এসেছেন ৬ এপ্রিল। ভারতে আমদাবাদ এবং কলকাতায় নামার কথা ছিল তাঁর। সেই মতো আমদাবাদেই নেমেছিলেন মাৎসুয়াকি। বিপদের শুরু নরেন্দ্র মোদীর রাজ্যেই।
তেরাবারু মাৎসুয়াকি। —নিজস্ব চিত্র
মাৎসুয়াকির বিমানের জন্য চাই গ্যাসোলিন। কিন্তু আমদাবাদ বিমানবন্দরে গ্যাসোলিন পাওয়াই যায় না! মাৎসুয়াকির দাবি দিল্লির একটি সংস্থা ঠিক করে দিয়েছিল তিনি আমদাবাদ ও কলকাতায় জ্বালানি ভরবেন। আমদাবাদে যে গ্যাসোলিন পাওয়া যায় না, সেটাও সেই সংস্থার জানার কথা। মাৎসুয়াকির প্রশ্ন, তা হলে কেন তাঁকে আদৌ আমদাবাদে নামতে বলা হল? যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই ‘কুইক অ্যাভিয়েশনে’র করন নটিয়াল দাবি করছেন, “ভারতের কোথায় নামবেন, তা ওই পাইলটই ঠিক করেছিলেন। গ্যাসোলিন ভরবেন কি না সে কথা চুক্তিতে লেখা ছিল না।” ডিজিসিএ-র বক্তব্য, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু মাৎসুয়াকির ভোগান্তির দাম এখন কে দেবে?
ভোগান্তির বহরটা শুনলে সত্যিই পিলে চমকে যেতে বাধ্য! জ্বালানির খোঁজে চড়া দামের টিকিট কেটে গো-এয়ারের উড়ানে আমদাবাদ থেকে মুম্বই যেতে হয়েছে মাৎসুয়াকি-কে। মুম্বই থেকে দুই ব্যারেল গ্যাসোলিন কিনে তা লরিতে চাপিয়ে পাঠাতে হয়েছে আমদাবাদে। বিমানে যাতায়াত, মুম্বই ও আমদাবাদে দু’দিন করে থাকা বাবদ তাঁর খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। আর মুম্বই থেকে আমদাবাদে গ্যাসোলিন বয়ে আনতে গচ্চা গিয়েছে ৮৫ হাজার টাকা! ফলে, মাৎসুয়াকি এখন কপর্দক-শূন্য। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত দু’টো দিন হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়াতে ভিসা এবং ভারত থেকে ওড়ার জন্য ডিজিসিএ-র অনুমতি, দুয়েরই মেয়াদ শেষের মুখে!
এমতাবস্থায় ১০ তারিখ রাতে মাৎসুয়াকি যখন কলকাতায় নামেন, তখন এখানে বিমান রাখার ভাড়া, গ্যাসোলিন ভরার টাকা কিছুই তাঁর কাছে নেই। সে দিন রাতেই ভিসার মেয়াদও শেষ! কলকাতায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের অফিসারেরা এগিয়ে আসেন সাহায্যে। ৭২ ঘণ্টার জন্য ভিসার মেয়াদ বাড়ে। মাৎসুয়াকি চলে যান শহরের হোটেলে। বৃহস্পতিবার সারা দিন ধরে জাপানে ফোন করে টাকা আনানোর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত জাপান থেকে টাকা এসে পৌঁছয়নি।
কলকাতা থেকে মাৎসুয়াকির উড়ে যাওয়ার কথা তাইল্যান্ডের উবং-এ। জ্বালানি ছাড়া যাবেন কী করে? এর মাঝে বৃহস্পতিবারের কালবৈশাখী ঝড়ে কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁড় করানো তাঁর ছ’আসনের বিমান এক চক্কর ঘুরে গিয়ে উল্টো মুখে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। সেই বিমানের ক্ষতি হয়েছে কি না, তখনও পর্যন্ত তিনি জানেন না। এ দিকে বর্ধিত ভিসার মেয়াদ রয়েছে শনিবার সকাল পর্যন্ত। ডিজিসিএ-র অনুমতির মেয়াদও প্রায় শেষ।
বিমানবন্দরের অফিসারদের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে হয় মাৎসুয়াকিকে শনিবার সকালের আগেই যে কোনও ভাবে সমস্ত টাকা মিটিয়ে প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়ে ভারত ছেড়ে উড়ে যেতে হবে। নয়তো ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরেও ভারতে থাকার অপরাধে জেলে যেতে হবে। আবার ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করলে যদি তা মঞ্জুর হয়, একমাত্র তবেই এ যাত্রা বেঁচে যাবেন মাৎসুয়াকি। সব মিলিয়ে ন যযৌ ন তস্থৌ অবস্থা!
শেষে সাময়িক পথ বেরোল। পাইপার এয়ারক্র্যাফ্ট-এর একটি দফতর রয়েছে শ্রীলঙ্কায়। এক বার ভাবা হয়েছিল, মাৎসুয়াকি বিমানটি কলকাতায় রেখে শ্রীলঙ্কা চলে যাবেন কি না! সেখান থেকে নতুন করে ভারতের ভিসা নিয়ে আসবেন! মাৎসুয়াকির কাছে শ্রীলঙ্কার ভিসা ছিল। কিন্তু কলকাতা থেকে সরাসরি শ্রীলঙ্কার উড়ান নেই। চেন্নাই ঘুরে যেতে হবে। অতএব শুক্রবার সন্ধ্যায় মাৎসুয়াকি গেলেন ব্যাঙ্কক। বিমান কলকাতাতেই রইল! ব্যাঙ্কক থেকে নতুন করে ভিসা আনবেন মাৎসুয়াকি। তত দিনে হাতে পেয়ে যাবেন টাকাও! আগামী সপ্তাহে ডিজিসিএ-র অফিস খুললে নতুন করে অনুমতি করিয়ে তবে ফের পাড়ি দেবেন তিনি! ব্যাঙ্কক যাওয়ার আগে হাতে এক তোড়া কাগজ দেখিয়ে মাৎসুয়াকি একটাই কথা জিজ্ঞেস করলেন, “কানাডা, আইসল্যান্ড, ইংল্যান্ড, পোল্যান্ড, কুয়েতে তো এত কাগজে সই করতে হয়নি? এত বার বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে অনুমতি চাইতে হয়নি?” জ্বালানি ভরতে যেখানেই নেমেছেন, বিমানের কাছে ট্যাঙ্কার চলে এসেছে। গ্যাসোলিন ভরেছেন, টাকা মিটিয়েছেন। উড়ে গিয়েছেন। প্রয়োজনে বিমান রেখে সে দিনের মতো সেই শহরে থেকে গিয়েছেন। কিন্তু ভারতের অভিজ্ঞতাটাই একেবারে আলাদা হল। কোনও মতে ছাড়া পেলে এখন কেঁদে বাঁচেন মাৎসুয়াকি! ঠিকই করে ফেলেছেন, আর কোনও দিন ভারতমুখো হবেন না!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.