ছুটির ঘণ্টা বাজতেই স্কুল থেকে হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে এল কচিকাঁচার দল। কোনও ইউনিফর্ম নেই। সকলেরই পরনে সালোয়ার-কামিজ, মাথা হিজাবে ঢাকা।
কাবুলের কাছে যুদ্ধবিধ্বস্ত কোয়ালা-ই-গুদার গ্রামটাতে এই একটাই মাত্র মেয়েদের স্কুল। ২৫০ জন ছাত্রী। “জানো, তোমাদের স্কুল কে বানিয়েছেন?” স্কুলের এক পড়ুয়াকে প্রশ্ন করতেই লাজুক হেসে বছর তেরোর হোমাইরা বলল, “জানি, খুব সুন্দর দেখতে এক মার্কিন মহিলা।”
এই সুন্দরী মহিলা হলেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। যদিও গোটা গ্রাম, এমনকী স্কুলে শিক্ষকরাও কেউ জানেন না তিনি যে হলিউডের নামজাদা অভিনেত্রী। গোটা দুনিয়া এক ডাকে তাঁকে চেনে। সবাই জানেন, অ্যাঞ্জেলিনা রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিনিধি। সেবামূলক কাজের জন্যই তাঁর আফগানিস্তানে আসা। |
আফগানিস্তানে স্কুলের ছাত্রীদের সঙ্গে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি।—ফাইল চিত্র |
তবে অভিনেত্রী হিসেবে জনপ্রিয়তা না থাকলেও, কাবুলিওয়ালাদের দেশের প্রত্যন্ত গ্রামেও কিন্তু তাঁর অগণিত ভক্ত। কারণ, আফগানদের মেয়েদের জন্য যে স্কুল বানিয়ে দিয়েছেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, নিজের জুয়েলারি সংস্থার টাকা থেকে ফের নতুন স্কুল তৈরির কথাও ভাবছেন অ্যাঞ্জেলিনা। আফগানিস্তানে মেয়েদের অভিনয় করা একেবারে অধর্মীয় কাজ। যৌনপেশার সামিল বলেই গণ্য করা হয়। সেখানে যে মেয়েটি তাঁদের এত কাছের, তাঁদের জন্য এতকিছু করেছেন, মেয়েদের জন্য দু’তলা স্কুল বানিয়েছেন, সে কি না অভিনেত্রী! সন্ধিগ্ধ চোখে তাকালেন প্রধানশিক্ষক গুল রহমান আয়াজ। বললেন, “তাই নাকি?” তার পর কিছু ক্ষণ থেমে ফের বলতে শুরু করলেন, “সে যাই হোক, উনি ভাল মানুষ, খুব দয়ালু মহিলা।”
কাবুল থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে স্কুলটা। হালকা নীল রঙের বাড়ি। সামনে লেখা প্রতিষ্ঠাত্রীর নাম। দু’তলা বাড়িটায় বড় বড় জানলা। পড়ুয়াদের জন্য সুন্দর সাজানো গোছানো চেয়ার-টেবিল, ক্লাসঘর। আগে মসজিদের পিছনে খোলা মাঠটায় ক্লাস বসতো।
আয়াজ জানালেন, ২০১১ সালে অ্যাঞ্জেলিনা যখন এসেছিলেন, মসজিদের পিছনে ওই মাঠটা ঘুরে দেখেন। সে কথায় হোমাইরাও বলে, “ওই রকম খোলা জায়গায় বসে পড়াশোনা করা এখানে খুব কঠিন। এখন আমাদের স্কুল রয়েছে। স্কুল খুব সুন্দর জায়গা।”
আয়াজ জানালেন, সে বারে যখন অ্যাঞ্জেলিনা এসেছিলেন, গ্রামের লোকের সঙ্গে পা-মুড়ে মাটিতে বলে গল্প করেছিলেন। আলোচনা করেছিলেন তাঁদের নানা সমস্যার কথা। তাঁর কথায়, “ভীষণ ভদ্র মহিলা। মাটিতে ধুলোবালির উপরেই বসতেন, কখনও তারকাসুলভ ব্যবহার করতে দেখিনি।” রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতীক লাগানো গাড়িতে চেপে এসেছিলেন অ্যাঞ্জেলিনা, পোশাকও খুব ভদ্র, মাথায় স্কার্ফ লাগানো।
সাবিরা, স্কুলের এক মাত্র শিক্ষিকা। বাকি সকলেই শিক্ষক। তিনি জানতেন, অ্যাঞ্জেলিনা ইঞ্জিনিয়ার। স্কুল তৈরির কাজে এসেছিলেন। তালিবান জঙ্গিদের সঙ্গে যুদ্ধে আফগানিস্তানে গ্রামের পর গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। পুনর্গঠনের কাজে তাঁদের দেশে আসা আর পাঁচ জন মার্কিন নাগরিকের মতোই কেউ একটা। পরিচয় পাওয়ার পরও ওঁর ছবি দেখা নিয়ে বিশেষ উৎসাহ দেখাননি সাবিরা। শুধু বললেন, “উনি নিশ্চই আবার আসবেন!” |