নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
এলাকায় সন্ত্রাস ছড়াতে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হচ্ছে তাঁদের কর্মীদের। দলের কর্মসূচি থেকে তাঁদের সমর্থকদের সরিয়ে রাখার চেষ্টাও করছে তৃণমূল, পুলিশের কাছে এমনই অভিযোগ করেছেন সিপিএমের দুর্গাপুর (পূর্ব) জোনাল সম্পাদক বিভু চক্রবর্তী। তৃণমূল অবশ্য এ সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। পুলিশ জানায়, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।
সিপিএম নেতারা জানিয়েছেন, দুর্গাপুরের বিধাননগর, কালীগঞ্জ, শঙ্করপুর, টেটিখোলা ইত্যাদি এলাকায় দলের অনেক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে নানা অভিযোগ করা হয়েছে। বিভুবাবু জানান, গত ৭ এপ্রিল বিকেলে বিধাননগরের একটি প্রেক্ষাগৃহে একটি কর্মিসভার আয়োজন করা হয়। ছিলেন দলের জেলা সম্পাদক অমল হালদার। বিভুবাবুর অভিযোগ, “সভায় শঙ্করপুর, কালীগঞ্জ, টেটিখোলা এলাকার অনেকে যোগ দেন। রাতে বাড়ি ফিরতেই তাঁদের শাসানো হয়।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, ৮ এপ্রিল রাতে টেটিখোলায় সিপিএম কর্মী তরুণ করের বাড়ি গিয়ে তাঁর খোঁজ করে তৃণমূলের কিছু কর্মী। তাঁকে না পেয়ে তাঁর স্ত্রীকে কটূক্তি করে তারা। বিভুবাবুর দাবি, “হুমকি দেওয়া হয়, পঞ্চায়েত ভোটে যেন দলের হয়ে প্রচার না করে, প্রার্থী হওয়ারও চেষ্টা না করে। এ ভাবেই সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে তৃণমূল।”
দলের লোকজনকে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর অভিযোগ তুলেছেন সিপিএমের জেমুয়া-বিধাননগর লোকাল সম্পাদক পঙ্কজ রায়সরকার। দোলের দিন রং খেলা নিয়ে দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে অমরাবতীর ভ্যামবে কলোনিতে। সিপিএম দাবি করে, তাদের সমর্থক এক পরিবারের লোকজনকে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা মারধর করে। হাসপাতালে এক জনকে ভর্তি করতে হয়। তৃণমূল কাউন্সিলর দীপঙ্কর লাহার দাবি, পঙ্কজবাবু আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছেন। পুলিশের কাছে তৃণমূলের তরফে এই অভিযোগ দায়ের করা হয়। পঙ্কজবাবুর দাবি, “আমি পরিস্থিতি শান্ত করতে গিয়েছিলাম। অথচ আমার বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হল।”
দিল্লিতে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে নিগ্রহের প্রতিবাদে সোমবার রাতে বিধাননগর এলাকায় শান্তি মিছিল করে তৃণমূল। নিউ টাউনশিপ থানায় সেই মিছিলের উপরে অস্ত্র-সহ হামলা এবং মহিলাদের শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগ করা হয়েছে পঙ্কজবাবু, কবি ঘোষ, সুখেন সরকার, বিনয়েন্দ্রকিশোর চক্রবর্তী-সহ বেশ কিছু সিপিএম নেতার বিরুদ্ধে। বিভুবাবুর দাবি, অভিযোগ ভিত্তিহীন। পঙ্কজবাবুর কথায়, “সুখেনবাবু প্রবীণ নেতা। তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। তাঁকেও ছাড়া হয়নি। এতেই পরিষ্কার হচ্ছে, অভিযোগের সারবত্তা কতটা!” তাঁর দাবি, জেমুয়া-বিধাননগর লোকাল কমিটি এলাকায় পঞ্চায়েতের ১৩টি, পঞ্চায়েত সমিতির তিনটি এবং জেলা পরিষদের একটি আসন রয়েছে। সেই সব আসনে যাতে সিপিএম বিপাকে পড়ে সে জন্যই তৃণমূল পরপর এই ধরনের অভিযোগ ও সন্ত্রাস ছড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। পঙ্কজবাবু আরও অভিযোগ করেন, কালীগঞ্জে কৃষকসভার অফিস বিধানসভা ভোটের পরে বন্ধ করে দেওয়া হয়। মাঝে তিন-চার বার খোলার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু লাভ হয়নি। মঙ্গলবার রাতে সেই বন্ধ অফিসে ঢুকেও ভাঙচুর চালিয়েছে তৃণমূল। অভিযোগ অস্বীকার করে সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদার বলেন, “শুধু দুর্গাপুরে নয়, জেলা জুড়েই সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে তৃণমূল। কিন্তু এ ভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ করা যাবে না।”
তৃণমূল অবশ্য সিপিএমের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দলের ৩ নম্বর ব্লক সভাপতি সুনীল চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “এ সব সিপিএমের অভ্যাস ছিল। আমরা তাতে বিশ্বাসী নই।” পুলিশ সিপিএমের অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে। |