প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের বিশাল পরীক্ষা এই সবে হয়েছে। এরই মধ্যে ওই চাকরি নিয়ে টাকার খেলা শুরু হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ করলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র।
শুক্রবার সল্টলেকে বামপন্থী প্রাথমিক শিক্ষকদের এক সমাবেশে সূর্যবাবু অভিযোগ করেন, প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি নিয়ে ইতিমধ্যেই ‘রেটিং’ শুরু হয়েছে। এই রেটিংয়ের ব্যাখ্যাও দেন তিনি। ওই সিপিএম নেতা বলেন, “কোনও প্রার্থী যদি নিজের পছন্দের স্কুলে চাকরি করতে চান, তা হলে তাঁকে দিতে হচ্ছে ১০ লক্ষ টাকা। আবার নিজের ব্লকের কোনও স্কুলে নিয়োগ চাইলে লাগছে আট লক্ষ টাকা। এবং নিজের জেলার মধ্যে যে-কোনও স্কুলে চাকরি চাইলে পাঁচ লক্ষ টাকায় রফা হয়ে যাচ্ছে।” |
বামপন্থী শিক্ষক সংগঠনের সভায় ভাষণ দিচ্ছেন
সূর্যকান্ত মিশ্র। শুক্রবার সল্টলেকে।—নিজস্ব চিত্র |
সূর্যবাবু জানান, প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি নিয়ে এ ভাবে টাকা লেনদেনের কথা তিনি শিক্ষামন্ত্রীকেও বলেছেন। মন্ত্রী তাঁকে জানিয়েছেন, সরকার এ ব্যাপারে সতর্ক আছে। বিরোধী দলনেতার অভিযোগ, “মন্ত্রী সতর্ক থাকার কথা জানানোর পরেও এই টাকার খেলা চলছেই।” এই নিয়ে উদ্বেগের সঙ্গে সঙ্গেই যাঁরা এ বছর প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে চাকরি পাবেন, ২০১৫-র ৩১ মার্চের মধ্যে তাঁদের সকলকে কী ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া যাবে, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন সূর্যবাবু। তাঁর মতে, “রাজ্যে সব ক্ষেত্রেই নৈরাজ্য চলছে। শিক্ষাও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে হাঙ্গামাও কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।” আবার প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিয়েও সংশয় রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বিক্রির অভিযোগ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “এই ব্যাপারে বিরোধী দলনেতা যদি নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ জানাতে পারেন, তা হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রাজ্যের বিভিন্ন প্রাথমিক স্কুলে ৩৫ হাজার শূন্য পদের জন্য প্রায় ৪৫ লক্ষ প্রার্থীর পরীক্ষা নেওয়া হয় ৩১ মার্চ। রাস্তায় যানবাহনের গোলমালে ঠিক সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে না-পারা এবং অন্যান্য বিভ্রাটে অনেকে পরীক্ষা দিতে পারেননি। পরীক্ষার দিনেই পুলিশ-প্রশাসনের কাছে এই মর্মে অভিযোগ নথিভুক্ত করা থাকলে ফের সেই সব প্রার্থীর জন্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করার কথা ভাবা হতে পারে বলে সরকারের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখনও সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না-হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন সূর্যবাবু।
চুক্তি-ভিত্তিক শিক্ষকদের চাকরির নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিরোধী দলনেতা। শিক্ষকদের দাবিদাওয়া নিয়ে আলাদা আলাদা আন্দোলনের চেয়ে জোটবদ্ধ হয়ে পথে নামাটা বেশি কার্যকর হতে পারে বলে মনে করেন সূর্যবাবু। তাঁর পরামর্শ, “শিক্ষকদের উচিত অন্যান্য শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে আন্দোলন করা। যে-ভাবে সিটু দেশের অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে একযোগে আন্দোলন করে।”
|