পশ্চিমবঙ্গের গ্রামোন্নয়নে বিপুল অর্থ বরাদ্দ ও প্রকল্প অনুমোদন করে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি পাঠান কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ। আর তার মাধ্যমে রাজনৈতিক কৃতিত্ব নিতে চেয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু এই ‘ধারাবাহিক সাহায্যের’ জন্য কেন্দ্রের প্রশংসা করলেও, একই সঙ্গে রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জয়রামকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিলেন, কৃতিত্ব শুধু কেন্দ্রের নয়, সময়ের মধ্যে প্রকল্প রূপায়ণ করে সমান কৃতিত্বের দাবিদার রাজ্যও।
কেন্দ্রের ছুঁড়ে দেওয়া চ্যালেঞ্জও গ্রহণ করেছেন সুব্রত। কেননা পশ্চিমবঙ্গের সড়ক নির্মাণের জন্য অর্থ অনুমোদন করে জয়রাম রাজ্যকে সতর্ক করে বলেছিলেন, সময়ের মধ্যে প্রকল্প শেষ করতে না পারলে বাড়তি খরচের দায় রাজ্যকেই নিতে হবে। জয়রামকে দেওয়া চিঠিতে সুব্রত জানান, রাজ্য এই চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে অবগত। এবং সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে। কারণ, গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি রাজ্যের অগ্রাধিকারের বিষয়।
পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ এলাকার সড়ক নির্মাণ নিয়ে ৪ এপ্রিল কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকে কেন্দ্র-রাজ্য বৈঠক হয়েছিল। ওই বৈঠকে রাজ্যের জন্য ২৬৫১ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ ও মেরামতিতে অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। ওই প্রকল্প রূপায়ণে ১৩৯০ কোটি টাকা খরচ হওয়ার কথা। ওই বৈঠকের পরেই বিকেলে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন জয়রাম। প্রতি বারই বরাদ্দ অনুমোদনের সময়ে চিঠি লেখেন জয়রাম। এ বার জয়রাম মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, রাজ্যকে নজিরবিহীন ভাবে সাহায্য করল
কেন্দ্র। জয়রামের ওই চিঠি পাওয়ার পর ৮ তারিখ জবাব দেন সুব্রতবাবু। সেই চিঠি আজ এসে পৌঁছয় জয়রামের কাছে। ওই চিঠিতে সড়ক নিয়ে
কেন্দ্রের ধারাবাহিক সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন সুব্রতবাবু। তার পরেই চিঠিতে সুব্রতবাবু বলেছেন, “কিন্তু এটা জেনে আপনিও নিশ্চয় রাজ্যের প্রশংসা করবেন যে ১২ হাজার কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক নির্মাণের জন্য এক বছরের মধ্যে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) প্রস্তুত করেছে রাজ্য সরকার।
সম্ভবত সাম্প্রতিক ইতিহাসে কোনও রাজ্য এই ধরনের সাফল্য দেখাতে পারেনি। তাছাড়া গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬১৭৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণের জন্য টেন্ডার ঘোষণা করাও হয়ে গিয়েছে।” শুধু তাই নয়, গত ৪ এপ্রিলের বৈঠকে অনুমোদিত ২৬৫১ কিলোমিটারের জন্য অর্থ দ্রুত বরাদ্দ করতেও কৌশলে চাপ দিয়েছেন সুব্রতবাবু।
ঘরোয়া আলোচনায় জয়রাম এই চিঠির অন্য ব্যাখ্যা করছেন। তাঁর
মতে, মমতা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে যখন বঞ্চনার অভিযোগ করছেন, তখন তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য সুব্রতবাবু স্বীকার করছেন কেন্দ্রীয় সাহায্যের কথা।
কিন্তু অনেকের মতে, সময়ে কাজ শেষ করা নিয়েই জয়রামকে জবাব দিলেন সুব্রতবাবু। তৃণমূলের সঙ্গে ভবিষ্যত বোঝাপড়ার রাস্তাও যে কংগ্রেস বন্ধ করতে চায় না তাও স্পষ্ট হয়ে গেল।
|