প্রায় ৫০ পাতার হলফনামা। কিন্তু তাতে পুরোটাই পুরনো কথা। এত দিন ধরে রাজ্য সরকার বারবার বলছিল, কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়াই পঞ্চায়েত ভোট করা সম্ভব। শুক্রবার হলফনামাতেও সেই কথাই জানিয়েছে তারা। রাজ্যের তরফে বলা হয়েছে, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এতটাই ভাল যে, রাজ্য পুলিশ দিয়েই অবাধ, মুক্ত ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব। এর পাশাপাশি পঞ্চায়েতমন্ত্রী জানিয়েছেন, মামলার জন্য যদি শেষ পর্যন্ত সময়ে ভোট না হয়, তা হলে প্রশাসক বসাতে অর্ডিন্যান্স জারি করার জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানাবে সরকার।
নির্বাচন কমিশন প্রথম থেকে জানিয়ে আসছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া পঞ্চায়েত ভোট করা যাবে না। আদালতেও তারা সে কথা জানিয়েছে। রাজ্যের বক্তব্য অনুযায়ী, তাদের হাতে মোট ৫৫ হাজার নিরাপত্তাকর্মী রয়েছে। এদের মধ্যে রাজ্যের আইজি মর্যাদার অফিসার থেকে শুরু করে মহিলা পুলিশ, এমনকী কনস্টেবল ও হোমগার্ড পর্যন্ত সকলেই রয়েছেন। নির্বাচন কমিশন সব বুথে দু’জন করে সশস্ত্র রক্ষী রাখার কথা বলেছে। অথচ রাজ্য যে ৫ মে প্রথম দফায় ১১ জেলায় ভোটের কথা ঘোষণা করেছে, সেখানে বুথের সংখ্যা ৪২ হাজার। রাজ্যের হাতে মোট নিরাপত্তারক্ষী ৫৫ হাজার। তা হলে প্রতি বুথে কী ভাবে সশস্ত্র পুলিশের ব্যবস্থা করবে রাজ্য?
হলফনামায় সরকার এ সম্পর্কে একটিও কথা বলেনি। তাদের বক্তব্য, যদি পরে দেখা যায় আরও বাহিনী লাগবে, তা হলে অন্য রাজ্য থেকে তা আনা হবে। হলফনামার ২৭ ও ৩১ পৃষ্ঠায় রাজ্য সরকার এই সব তথ্য জানিয়েছে। পাশাপাশি রাজ্যের সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর যুক্তি হিসেবে তারা বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রসঙ্গ তুলেছে। বলা হয়েছে, অন্ধ্রপ্রদেশে মাওবাদী আক্রমণে মৃত্যুর সংখ্যার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যা মিলিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে, এই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার অবস্থা। তাই অবাধ ও মুক্ত শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য রাজ্য পুলিশই যথেষ্ট। হলফনামার অন্য অংশে সরকার তাদের আইনগত অবস্থান এবং কমিশনের সঙ্গে চিঠি আদানপ্রদানের বিষয়টি জানিয়েছে।
আইনগত অবস্থান সম্পর্কে কী জানানো হয়েছে? পঞ্চায়েত আইনের ৪২ ধারা উল্লেখ করে হলফনামায় রাজ্য সরকারের ঘোষণা, ওই ধারা অনুযায়ী কমিশনের নাক গলানোর কোনও জায়গা নেই। রাজ্য সরকার দিন ঘোষণা করার পরে কমিশন নির্ঘণ্ট ঘোষণা করবে। তখন থেকেই কমিশনের দায়িত্ব। মনোনয়নপত্র জমার সময় থেকে কমিশনের কাজ।
কমিশন অভিযোগ করেছিল, চেয়েও প্রয়োজনমতো পর্যবেক্ষক পায়নি তারা। আদালতে তারা বলেছিল, পর্যবেক্ষকদের নাম না জানালে তাদের প্রশিক্ষণও দেওয়া যাচ্ছে না। হলফনামায় সরকার জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় সংখ্যক পর্যবেক্ষক তাদের আছে।
কিছু বিডিও-র বদলি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল কমিশন। বলা হয়েছিল, ওই বিডিওরা বিভিন্ন পঞ্চায়েত সমিতির রিটার্নিং অফিসার। তাই কমিশনের সঙ্গে আলোচনা না করে তাঁদের বদলি করা যায় না। হলফনামায় সরকারের জবাব, সরকার জনস্বার্থে বদলি করেছে। রাজ্য সরকার বলেছে, তাদের এক্তিয়ার রয়েছে বদলি করার। কমিশন এখানে কোনও প্রশ্ন করতেই পারে না।
পরে এই নিয়ে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী লক্ষ্মীচাঁদ বিয়ানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হলফনামায় কি বলা হয়েছে, তা তিনি জানেন না। তবে তিনি জানান, বাণিজ্য মহলে যে কথাটি চালু আছে, এ ক্ষেত্রেও সেটা প্রযোজ্য। এই মামলায় কমিশনের জিতলেও জয়, হারলেও। কেন? আইনজীবীর বক্তব্য, জিতলে তো জয় আসছেই। আর হারলেও সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী ভোট ঘোষণার পরের যাবতীয় দায়িত্ব তাদের। ফলে তারা সরকারের কাছে কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইতেই পারবে তখন।
অন্য দিকে, পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেছেন, “আমরা হলফনামায় জানিয়ে দিয়েছি যে, নির্বাচন কমিশনকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে বারবার আলোচনা করা হয়েছে। সব নথি দেওয়া হয়েছে। এর পরেও সময়ে ভোট না হলে আদালতকে জানিয়েই প্রশাসক বসাতে অর্ডিন্যান্স জারি করতে হবে। পঞ্চায়েতের কাজ চালাতে এ ছাড়া কোনও উপায় নেই।”
|