যুব-ছাত্র ফ্রন্টের বিতণ্ডায় বাতিল যৌথ কর্মসূচি
লকাতায় সুদীপ্ত-কাণ্ড এবং দিল্লিতে অমিত-নিগ্রহ দুই শহরের এই দুই ঘটনার জের এ বার এসে পড়ল বামেদের যুব ও ছাত্র ফ্রন্টে। সিপিএমের শাখা সংগঠনের ‘একাধিপত্যে’র বিরুদ্ধে শরিকদের প্রতিবাদের চোটে বিতণ্ডায় আপাতত ভেস্তে গেল যৌথ কর্মসূচি!
দীনেশ মজুমদার ভবনে বৃহস্পতিবার দুই অর্ধে আলাদা বৈঠক বসেছিল বামফ্রন্টের যুব ও ছাত্র সংগঠনগুলির। ছাত্র সংগঠনগুলি আপাতত ১৭ এপ্রিল নজরুল মঞ্চে সুদীপ্ত গুপ্তের স্মরণসভা যৌথ ভাবে করার ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছতে পেরেছে। কিন্তু যুবদের কর্মসূচি স্থগিত রাখতে হয়েছে। আর দুই ক্ষেত্রেই নতুন জটিলতা তৈরি করেছে দিল্লিতে ২৪ ঘণ্টা আগে এসএফআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংবাদিক সম্মেলন!
সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের তরফে এ দিনের বৈঠকে শরিকদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, কর্মসংস্থানের দাবিতে কলকাতায় একটি মিছিল করা হোক। এতেই বেঁকে বসেন শরিকদের যুব নেতৃত্ব। তাঁদের বক্তব্য, শাসক দলের আক্রমণের জেরে জেলায় জেলায় কর্মী-সমর্থকেরা আক্রান্ত। এই অবস্থায় অন্যান্য দাবি সরিয়ে রেখে আগে শান্তি মিছিল করা দরকার। ফরওয়ার্ড ব্লকের সংগঠন যুব লিগের রাজ্য সম্পাদক অনির্বাণ চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করেন দিল্লিতে বুধবার ঋতব্রতের বক্তব্য নিয়ে। তাঁর বক্তব্য, ঋতব্রত বলেছিলেন দিল্লিতে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে শারীরিক নিগ্রহ এসএফআই করেনি। অন্যান্য গণসংগঠন ওখানে ছিল। তাদের কথা তিনি বলতে পারবেন না। অনির্বাণবাবুর মতে, এর ফলে সব বাম সংগঠনের দিকেই আঙুল উঠছে! কারণ বামেদের একসঙ্গে আন্দোলন করতে দেখতেই মানুষ অভ্যস্ত। এই বিভ্রান্তি কাটাতে ঋতব্রতকেই স্পষ্ট করে বলতে হবে, তিনি কাদের বোঝাতে চেয়েছেন।
যদি তা না করা হয়, তা হলে একটা নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষা করে শরিক সংগঠনগুলি প্রেস বিবৃতি দিয়ে নিজেদের বক্তব্য জানিয়ে দেবে বলে হুঁশিয়ারিও দেয় যুব লিগ।
অনির্বাণবাবু আরও অভিযোগ করেন, যৌথ কর্মসূচি হলেও ডিওয়াইএফআই বারেবারে ‘একাধিপত্যের মানসিকতা’ দেখিয়ে চলেছে। যৌথ দাবিপত্র দেওয়ার সময় দিনের পর দিন ব্যবহার করা হচ্ছে ডিওয়াইএফআইয়ের প্যাড। অবিলম্বে যুবদের সমন্বয় কমিটি করে তার প্যাড ছাপাতে হবে। বাম সূত্রের খবর, তাঁকে সমর্থন করেন আরওয়াইএফের রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এআইওয়াইএফের তাপস সিংহ। রাজীব দাবি করেন, অতীতে ছাত্র আন্দোলনের জন্য যেমন সংগ্রাম কমিটি ছিল, তেমন এখন যুব সংগ্রাম কমিটি গড়া হোক। শরিকদের আক্রমণে কোণঠাসা ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক জামির মোল্লা বলার চেষ্টা করেন, সব দায় তাঁরা একা কেন নেবেন? জেলায় জেলায় যৌথ কর্মসূচি করার সময় কার্যক্ষেত্রে শরিকদের পাওয়া যায় না বলে তিনি পাল্টা অভিযোগ করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আরএসপি, ফ ব, সিপিআইয়ের যুবরা মিলিত ভাবে জানতে চান, কোন জেলায় কবে এমন হয়েছে, জানানো হয়নি কেন? শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি আভাস রায়চৌধুরী শরিকদের কাছে আর্জি জানান, কোনও ভুলের জবাবে আবার ভুল করা উচিত হবে না! শরিক নেতারা তাঁর কাছে দাবি জানান, ভবিষ্যতে সুদীপ্ত-কাণ্ড বা দিল্লির মতো ঘটনা এড়াতে যে কোনও মিছিল থেকে শুরু করে যৌথ কর্মসূচি বিশদে আলোচনা করে খুঁটিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে।
স্বভাবতই এমন পরিস্থিতিতে শান্তি মিছিল বা অন্য কোনও কর্মসূচিই চূড়ান্ত হয়নি। বৈঠকের পরে এই নিয়ে কেউ মুখ খুলতেও চাননি। ডিওয়াইএফআইয়ের এক রাজ্য নেতার কথায়, “আমাদের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলি কিছু সমস্যার কথা জানিয়েছে। আশা করছি, সমস্যা মিটিয়ে প্রয়োজন মতো যৌথ কর্মসূচি নেওয়া যাবে।”
দিল্লির ঘটনার দায় নিয়ে সিপিএমের অন্দরে চাপানউতোরের ফল তাদের কেন ভুগতে হবে, সেই প্রশ্নও উঠেছিল যুবদের বৈঠকে। শরিকদের চাপের মুখে দিল্লিতে অমিত-নিগ্রহ এবং তার প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের তাণ্ডব দুইয়ের বিরুদ্ধেই নিন্দা প্রস্তাব নেওয়া হয় বৈঠকে। একই ভাবে ঋতব্রতের বক্তব্যে বামপন্থী সব ছাত্র সংগঠন সন্দেহের তালিকায় চলে আসছে বলে কথা ওঠে ছাত্র সংগঠনগুলির বৈঠকে। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়েছে, ১৭ তারিখ সুদীপ্তের স্মরণসভা হয়ে গেলে আবার এই নিয়ে বসা হবে।
বাম শিবিরে এমন সার্বিক টানাপোড়েনের মধ্যেই সল্টলেকে প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের এক সভায় এ দিন দিল্লি প্রসঙ্গ তুলেছিলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনি বলেন, “দিল্লির ঘটনাকে আমরা তুচ্ছ ঘটনা বলিনি। আমরা প্রকাশ্যে তার নিন্দা করেছি। আমাদের দলের পদ্ধতি মেনে যা ব্যবস্থা নেওয়ার, তা নেওয়া হবে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর দলের লোকেরা কী করছে? অন্ধকারের জীবেরা বেরিয়ে পড়েছে!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.