আন্দোলনে রাশ তৃণমূলের
মহাকরণে চিঠি আক্রান্ত বামেদের, ক্ষুব্ধ কংগ্রেসও
সিপিএম-সহ বাম নেতা-কর্মীদের উপর তৃণমূলের আক্রমণ এবং তাঁদের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর অবিলম্বে বন্ধ করতে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবকে চিঠি দিল বামফ্রন্ট। সেইসঙ্গে রাজ্যপালের কাছেও এ ব্যাপারে মৌখিক আবেদন জানিয়েছেন ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। শুক্রবার আলিমুদ্দিনে বিমানবাবু বলেন, “রাজ্যের প্রতিটি জেলায় সিপিএম-সহ বাম নেতা-কর্মীরা আক্রান্ত। তৃণমূলের পক্ষ থেকে আজ পর্যন্ত এ কাজের নিন্দা করা হয়নি। পুলিশকে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে বলা হয়নি। উল্টে পুলিশ আক্রান্তদের গ্রেফতার করছে। আক্রমণকারীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে।”
কেবল বামফ্রন্টই নয়, কংগ্রেসেরও অভিযোগ, আক্রান্ত তারাও। দিল্লিতে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেস নেতা শাকিল আহমেদ বলেন, “রাজ্য জুড়ে যে ভাবে তৃণমূল হিংসা ছড়াচ্ছে এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের আক্রমণ করছে, তা বন্ধ করতে রাজ্য সরকারের তরফেও কোনও সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে না।” কংগ্রেসের অভিযোগ, বিভিন্ন জেলায় কংগ্রেস পার্টি অফিস ভাঙচুর হয়েছে। তৃণমূলের হামলায় আক্রান্ত হয়ে ১২ জন কংগ্রেস নেতা-কর্মী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
গোটা পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে, তাতে বিব্রত তৃণমূল নেতৃত্বও। কারণ, বাম, কংগ্রেস উভয়েরই অভিযোগ, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ক্রমেই ভেঙে পড়ছে। রাজ্য সরকার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এই অবস্থায় দিল্লির ঘটনার প্রতিবাদ আন্দোলনের রাশ টেনে ধরার প্রক্রিয়া শুরু করছে তৃণমূল। বস্তুত, আজ, শনিবার দুপুরে মৌলালি থেকে গাঁধী মূর্তির পাদদেশ পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিল করার পরে আপাতত প্রতিবাদ আন্দোলন স্থগিত রাখা হবে। প্রশ্নের জবাবে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, ‘‘আমরা দলের সর্বস্তরে জানিয়ে দিয়েছি, গাজন, নববর্ষ সামনে। বাঙালির উৎসব-পার্বণের দিন। এখন কোনও আন্দোলন নয়। পার্বণ মিটুক। তার পর পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করব।”
বিমান বসু শাকিল আহমেদ
এ দিন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন ভাঙচুরের ঘটনার যে নিন্দা করেছেন, তাতে তিনিও কার্যত আইনশৃঙ্খলার অবনতির দিকে আঙুল তুলেছেন। রাজ্যপালের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিমানবাবু বলেন, “রাজ্যপাল তাঁর কাজ করেছেন। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা দেখার বিষয়টি রাজ্যপালের এক্তিয়ারে পড়ে। কেন শিলিগুড়ি থেকে প্রেসিডেন্সি পর্যন্ত আক্রান্তদের বিরুদ্ধেই পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে আর আক্রমণকারীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে, রাজ্যপালের তা দেখা উচিত।” স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে চিঠিতেও বলা হয়েছে, রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা, মানুষের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য প্রশাসনকে কড়া হাতে কার্যকরী ভূমিকা নিতে হবে। প্রশাসনের দৃঢ় অবস্থানই দুষ্কৃতীদের হিংসাত্মক কার্যকলাপ থেকে বিরত করতে পারে। শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবিতে ১ বৈশাখের পর জেলায় জেলায় বামফ্রন্ট সভাও করবে।
হিংসা ও সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গে যখন তৃণমূল-সিপিএম দ্বৈরথ চলছে, তখন নিজেদের রাজনৈতিক পরিসর বাড়াতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা নিয়ে এ দিন দিল্লিতে তৃণমূল এবং সিপিএম উভয়েরই তীব্র সমালোচনা করেন কংগ্রেস কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে শাকিলের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং মানস ভুঁইয়া। দু’জনেই শাকিলকে জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, দিল্লিতে যোজনা কমিশনের ঘটনার জন্য কংগ্রেসও দায়ী। তার পর থেকেই জেলায় জেলায় কংগ্রেস কর্মীদের উপরেও হামলা শুরু করেছে তৃণমূলের কর্মীরা।
তবে তৃণমূলের সমালোচনার পাশাপাশি বৃহস্পতিবার এইমসে গিয়ে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের সঙ্গে দেখা করেন মানসবাবু। এ দিন নার্সিংহোমে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁর আরোগ্য কামনা করেন কংগ্রেসের মায়া ঘোষ ও মনোজ পাণ্ডে। সিপিএমের বিমানবাবুও মুখ্যমন্ত্রীর দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন। তবে তির্যক মন্তব্য করতেও ছাড়েননি। বিমানবাবু বলেন, “দিল্লিতে রিপোর্ট ছিল, মুখ্যমন্ত্রী আহত হননি। কিন্তু পরে ট্রমাজনিত কারণে অসুস্থ হতে পারেন। তাই তাঁর দ্রুত আরোগ্য চাই।”
তৃণমূল-সিপিএমের দ্বৈরথের বাতাবরণে রাজনৈতিক লাভের হিসেব কষছে কংগ্রেস। দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, লোকসভা ভোটের সময় কংগ্রেস-তৃণমূল ফের জোট হবে কি না, তা সময় বলবে। কিন্তু তার আগে কংগ্রেসের শক্তি বাড়াতে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে আগ্রাসী সমালোচনা চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। শাকিলের কথায়, “পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। তৃণমূলেরও জনপ্রিয়তা কমছে। এই অবস্থায় লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গে একাই লড়তে চায় কংগ্রেস। আর কংগ্রেস একা লড়লে তৃণমূলের বিপর্যয় অনিবার্য।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.