বহু প্রতীক্ষার পরে, দেড় মাস আগে চালু হয়েছিল ডানকুনি উড়ালপুল। কিন্তু বহু যাত্রীরই দুর্ভোগ এখনও মিটল না। কেননা, উড়ালপুলে তৈরি হয়নি সিঁড়ি। ফলে, ডানকুনি স্টেশনে যাওয়ার জন্য যাঁরা বাস-অটো বা ট্রেকারে চড়ছেন, তাঁরা উড়ালপুলের উপরে নামতে পারছেন না। ঘুরপথে যেতে হচ্ছে স্টেশনে। তাতে সময় বেশি লাগছে। অনেকে নির্দিষ্ট ট্রেনও ধরতে পারছেন না। তা ছাড়া, সমস্যায় পড়ছেন রিকশাচালক বা হাতে-টানা মালবাহী গাড়ির চালকেরা।
দেড় মাস আগে উড়ালপুলের উদ্বোধন ঘিরে রেল এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে চাপান-উতোর কম হয়নি। সেই সময়ে পূর্ত দফতরের তরফে ওই উড়ালপুলের দু’দিকে চারটি সিঁড়ি তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এ সংক্রান্ত পরিকল্পনাও সারা হয়ে গিয়েছে বলে দাবি ওই দফতরের। যে সিঁড়িগুলি উড়ালপুলের মাঝখান থেকে রেললাইনের ধার বরাবর নামার কথা। কিন্তু বহুবার আবেদনেও রেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তাদের জমির নীচের মানচিত্র মেলেনি বলে অভিযোগ পূর্ত দফতরের কর্তাদের।
উড়ালপুলটির এক প্রান্ত গিয়ে মিশেছে লালবাবা রোডে। অন্য প্রান্ত মিশেছে সুভাষ পল্লিতে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, উড়ালপুলের নীচে রেললাইনের ধার বরাবর মাটির তলায় হাওড়া-বর্ধমান কর্ড শাখার সিগন্যাল কেব্ল, টেলিফোন কেব্ল-সহ প্রচুর কেব্ল রয়েছে। সেই কারণেই ওই জমির তলার মানচিত্র জরুরি। এই ম্যাপের জটেই পুরো কাজটি থমকে রয়েছে। |
পূর্ত দফতরের কর্তাদের অভিমত, যে জায়গায় সিঁড়ির কাজ করা হবে তার মাটির নীচেই রয়েছে রেলের কেব্ল। তাঁদের আশঙ্কা, ওই মানচিত্র না দেখে কোনও কারণে মাটির তলায় কাজ করতে গেলে কেব্ল কেটে রেলের সিগন্যাল ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে। তাতে ব্যাহত হবে ট্রেন চলাচল। ওই পথে লোকাল ছাড়াও রাজধানী-সহ দূরপাল্লার নানা গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন যাতায়াত করে।
পরিস্থিতি বিবেচনা করে পূর্ত দফতরের কর্তারা ইতিমধ্যেই সম্ভাব্য কাজের জায়গায় মাটি কিছুটা খুঁড়ে প্রাথমিক ভাবে একটি নকশা (প্ল্যান) তৈরি করেছেন। উড়ালপুলের যে চারটি জায়গায় সিঁড়ি হবে, সেই কাজও কিছুটা এগিয়ে রাখা হয়েছে। তা ছাড়া, ওই পথে রিকশা, মালবাহী হাতে-টানা গাড়ি বা সাইকেল যাতায়াতের জন্য উড়ালপুল লাগোয়া একটি ‘আন্ডারপাস’ (মাটির তলার রাস্তা) তৈরির জন্য ডানকুনি পুরসভার তরফে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে পূর্ত দফতরকে।
কিন্তু না হয়েছে ‘আন্ডারপাস’, না হয়েছে উড়ালপুলের সিঁড়ি। পূর্ত দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার গৌতম ঘোষ বলেন, “রেলের কাছ থেকে মানচিত্র না-পাওয়ায় যেমন উড়ালপুলের সিঁড়ি তৈরির কাজ বিলম্বিত হচ্ছে, তেমনই আন্ডারপাসের বিষয়টি নিয়েএ এগোনো যাচ্ছে না। কারণ, সিঁড়ির নকশা আমরা আন্ডারপাস তৈরির সম্ভাবনার সাপেক্ষেই করতে চাইছি। যাতে কোনও সমস্যা না হয়।”
পূর্ব রেলের এক কর্তা বলেন, “ডানকুনির ওই রেলপথে কেব্ল ব্যবস্থা অনেক আগের তৈরি। তাই মাটির নীচের মানচিত্র পেতে অসুবিধা হচ্ছে। পূর্ত দফতরের সঙ্গে সমন্বয় করেই কাজ করার চেষ্টা চলছে।” |