ধৃত দলের ৫ ছাত্রকর্মী, কাজিয়া শুরু তৃণমূলে
প্রেসিডেন্সি-কাণ্ডে ক্রমশ অস্বস্তি বাড়ছে শাসক তৃণমূলের।
তৃণমূল নেতৃত্ব বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দাবি করে এসেছেন, প্রেসিডেন্সিতে হামলার সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগ নেই। কিন্তু এই ঘটনায় এ পর্যন্ত যে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের সকলেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মী বলে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি, প্রেসিডেন্সির ভিতর থেকে ইট ছোড়া হয়েছে বলে তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগের জেরে শুক্রবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে আত্মসমর্পণ করেন প্রেসিডেন্সির দুই ছাত্র। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে প্রমাণের অভাবের কথা বলেছেন বিচারক নিজেই। ফলে জামিন পেয়ে গিয়েছেন তাঁরা।
প্রেসিডেন্সিতে হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বৃহস্পতিবার বিকেলে শুভজিৎ বর্মন ও জয়ন্ত হাওলাদার নামে যে দু’জন ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাঁরা কোন দলের কর্মী পুলিশ তা জানায়নি। তৃণমূল নেতারাও বলেছিলেন, ওঁরা দলের কেউ নন। কিন্তু ওই দুই ছাত্রেরই বাড়ির লোক শুক্রবার জানিয়েছেন, তাঁরা তৃণমূল ছাত্র পরিষদই করেন।
ধৃত মুন্নাকুমার সিংহ এবং শুভজিৎ বর্মন। —নিজস্ব চিত্র
বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার সকাল মিলিয়ে আরও তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অনন্যব্রত চক্রবর্তী, চিরঞ্জিৎ গায়েন এবং মুন্নাকুমার সিংহ নামে ওই তিন ছাত্রও সরাসরি টিএমসিপি-র সঙ্গে যুক্ত বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। মুন্না বি কম পরীক্ষা দেবেন। অন্য দু’জন মধ্য কলকাতার একটি কলেজের ছাত্র। ধৃত পাঁচ জনই যে ছাত্র, তা বোঝাতে এ দিন আদালতে নথিপত্রও জমা দেওয়া হয়। ধৃতদের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর এবং সংঘর্ষ বাধানোর অভিযোগে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে।
প্রেসিডেন্সির ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের যোগ এই ভাবে স্পষ্ট হতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই শাসক দলের অন্দরে গোষ্ঠী-লড়াই মাথা চাড়া দিচ্ছে। হামলার দায় কাদের, তা নিয়ে শুরু হয়েছে পারস্পরিক দোষারোপ। দলের বদনাম করার জন্য অন্তর্ঘাত করা হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও তোলা শুরু হয়েছে!
তৃণমূলের মহাসচিব তথা শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে দলের রং না-দেখে প্রেসিডেন্সির গোলমালের সঙ্গে যুক্ত সকলের বিরুদ্ধেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পার্থবাবুর কথায়, “যারা দলের পতাকাবাহী, তারাই যে দলের কর্মী এমন দায়িত্ব দল নেয়নি! তবে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, দলের রং বা পতাকা দেখা হবে না। দুষ্কৃতীরা দুষ্কৃতীই।” কার্যক্ষেত্রে কিন্তু এই রাজধর্ম পালন করতে গিয়ে অস্বস্তি বাড়ছে দলেরই।
শুধু দলীয় কর্মী গ্রেফতার হওয়া নয়, জোড়াসাঁকো থানায় প্রেসিডেন্সির ছাত্রদের বিরুদ্ধে দায়ের করা পাল্টা অভিযোগ ঘিরেও কার্যত কোণঠাসা তৃণমূল! ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্সির সামনে দিয়ে বুধবার দিল্লির ঘটনার প্রতিবাদে যখন তৃণমূলের একটি মিছিল যাচ্ছিল, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর থেকে একটি ঢিল বাইরে এসে পড়ে। তাতে মিছিলে থাকা এক জনের মাথা ফাটে। প্রশ্ন উঠেছে, তৃণমূল বা তাদের ছাত্র সংগঠনের কেউ যখন ঘটনাস্থলে ছিলই না, তখন তাদের তরফে অভিযোগ আনা হল কী করে? সুতরাং প্রেসিডেন্সির আশপাশে তৃণমূল এবং টিএমসিপি-র সমর্থকেরা যে ছিলেন, ওই অভিযোগই তা প্রমাণ করে। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের মন্তব্য, “এ তো ঠাকুরঘরে কে, আমি তো কলা খাইনি-র মতো!” পার্থবাবু অবশ্য এ দিন ব্যাখ্যা দিয়েছেন, “দিল্লির ঘটনার প্রতিবাদে ওই দিন রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলের প্রতিবাদ মিছিল হয়েছিল। প্রেসিডেন্সির সামনে দিয়ে মিছিল যাচ্ছিল। তৃণমূলের সমস্ত শাখা সংগঠনের লোকেরা ছিল মিছিলে। প্রেসিডেন্সির ভিতর থেকে ইট পড়েছে।”
তৃণমূল সূত্রের খবর, দিল্লির ঘটনার প্রতিবাদে সে দিন কলেজ স্ট্রিট এলাকায় মিছিল ও সমাবেশের ডাক দেন দলের স্থানীয় কাউন্সিলর পার্থ বসু। মিছিল শেষ হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কলেজ স্ট্রিট চত্বরে। তখনই স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার মাথায় ইটের আঘাত লাগে। কে মারল ইট, তা নিয়ে হইচই পড়ে যায়। পার্থবাবুর দাবি, আহত তৃণমূল নেতাকে নিয়ে তিনি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চলে যান। মধ্য কলকাতার তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য, “টিএমসিপি-র তমোঘ্ন ঘোষ ও শিয়ালদহ এলাকার তৃণমূল নেতা দেবু বন্দ্যোপাধ্যায়দের সেখানে দেখা গিয়েছে।”
প্রেসিডেন্সির ওই তাণ্ডবের পিছনে দলেরই কারও ‘অন্তর্ঘাত’ রয়েছে কি না, এখন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে তৃণমূলে। ঘটনার দায় দলীয় নেতৃত্বের একাংশ চাপিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ সোমেন মিত্রের অনুগামীদের উপরে। অভিযোগ, টিভি ফুটেজে সে দিন প্রেসিডেন্সিতে যাঁদের দেখা গিয়েছে, তাঁরা অধিকাংশই সোমেন-ঘনিষ্ঠ। দলের এক নেতার কথায়, “তমোঘ্ন, তথাগত সবই তো সোমেন মিত্রের ছেলে!” সোমেনবাবু অবশ্য বলেন, “মধ্য কলকাতায় তৃণমূলের সবাই তো আমার ছেলে! কিন্তু আমার ছেলে বলে তাদের তো অন্যায় করার লাইসেন্স আমি দিইনি! কেউ অন্যায় করলে তার শাস্তি পেতেই হবে।” তাঁর পাল্টা দাবি, “যারা গোলমাল করেছে, তারা কেউ আমার লোক নয়।” দলের কাউন্সিলর পার্থ বসুকে নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, তা কার্যত সমর্থন করে সোমেনবাবু বলেন, “লালুর (পার্থর ডাক নাম) সঙ্গে যারা যায়, তাদের বেশির ভাগই মদ্যপ ছিল।”
তৃণমূল সূত্রের খবর, ঘটনার সঙ্গে দলের যোগাযোগের খবর পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁরই নির্দেশে দলের মহাসচিব পার্থবাবু টিএমসিপি’র একাধিক নেতাকে তিরস্কারও করেন। এমনকী, দোষীদের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয় পুলিশকে। তার পরেই ধরপাকড় শুরু হয়। মুখ্যমন্ত্রীর মনোভাব বুঝেই তৃণমূল নেতৃত্ব বলছেন, ওই ঘটনায় যুক্তদের রেয়াত করা হবে না। দলের সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় এ দিন বলেছেন, “এমন ঘটনা দল কখনওই অনুমোদন করে না।” কিন্তু তৃণমূল কাউন্সিলর-সহ দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের ঘটনার সময় দেখা গিয়েছে। এই ব্যাপারে পার্থবাবুর বক্তব্য, “বিভিন্ন কাগজপত্র, তথ্য সংগ্রহ করছি।”
তবে সিপিএমকে কাঠগড়ায় তুলে পার্থবাবু এ দিনও অভিযোগ করেছেন, “প্রেসিডেন্সির ঘটনায় পাপ্পু নামে এক যুবককে পুলিশ খুঁজছে। পাপ্পু সিপিএমের পিছনের সারির নেতা। কী ভাবে সামনের সারিতে এসে গোলমাল তৈরি করল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” পার্থবাবুর মতোই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়েরও অভিযোগ, “আমি মনে করি বেকার ল্যাবরেটরিতে ভাঙচুরে সিপিএম আশ্রিত সমাজবিরোধীরাই যুক্ত।” সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু অবশ্য পাল্টা বলেছেন, “পাপ্পু কে, পার্থবাবু জানতে পারেন। আমি এই নামের কাউকে জানি না!”
ঘটনাচক্রে, এ দিন রাতে সন্তোষ সিংহ ওরফে পাপ্পু নামে প্রেসিডেন্সির এক দারোয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য জোড়াসাঁকো থানায় ডেকে আনতে যায় পুলিশ। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়ায়। রেজিস্ট্রারের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত অবশ্য রাতে পাপ্পুকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়নি।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.