গ্রেফতার ২, দূরত্ব বাড়িয়ে সিপিএমকেই দুষছে তৃণমূল
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে বুধবারের হামলার ঘটনা থেকে দূরত্ব তৈরি করতে তৎপর হল তৃণমূল কংগ্রেস।
বুধবার ঘটনার পরেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তরফে দাবি করা হয়েছিল, তাদের কেউ এই হামলায় জড়িত নয়। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও হাসপাতাল থেকেই ফোনে এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “প্রেসিডেন্সির ঘটনায় যদি তৃণমূলের কোনও কর্মী জড়িত থাকেন, তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর যেটুকু জানতে পেরেছি, তাতে দেখা যাচ্ছে বিক্ষোভকারীরা তৃণমূলের কেউ নয়।” এ দিনই ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য, তা জানানো হয়নি। অনেকেরই মতে, গোটা ঘটনা থেকে তৃণমূলের দূরত্ব তৈরি করে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার পথ পরিষ্কার করে দিলেন মমতা। যা নিরপেক্ষ প্রশাসক হিসেবে তাঁর ভাবমূর্তি তৈরি করতে সাহায্য করবে।
তৃণমূল দায় এড়াতে চাইলেও টেলিভিশন চ্যানেলের ছবিতে অবশ্য ঘটনার আগে প্রেসিডেন্সি কলেজের গেটে ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের দলীয় কাউন্সিলর পার্থ বসুকে দেখা গিয়েছে।
বুধবার কলেজ স্ট্রিটে মিছিলে ছিলেন পার্থ বসুও। —ফাইল চিত্র
যদিও ওই তৃণমূল নেতার দাবি, “দিল্লিতে রাজ্যের মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে সিপিএমের হামলার প্রতিবাদে ওই দিন আমি কলেজ স্ট্রিটে মিছিল করি। কিন্তু মিছিল নিয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজে যাইনি। হামলার ঘটনায় আমার উপস্থিতি প্রমাণিত হলে কাউন্সিলর-সহ সব পদে ইস্তফা দেব।” প্রেসিডেন্সিতে হামলার যে ছবি টিভি-র পর্দায় দেখা গিয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও।
এ দিন তিনি বলেন, “ভাঙচুর, হইচইয়ের আলাদা আলাদা ছবি জুড়ে দেখানো হচ্ছে।”
গোটা ঘটনার পিছনে সিপিএমের ষড়যন্ত্র থাকতে পারে বলেও তৃণমূলের আশঙ্কা। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তরফে বুধবার অভিযোগ করা হয়েছিল, প্রেসিডেন্সির সামনে দিয়ে তাদের মিছিল যাওয়ার সময় কলেজের ভিতর থেকে এসএফআই সমর্থকেরা ইট ছোড়ে। এই মর্মে এ দিন পুলিশে অভিযোগও দায়ের করেছে তারা। তবে অভিযোগে সুনির্দিষ্ট ভাবে কারও নাম করা হয়নি বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
প্রেসিডেন্সিতে শিক্ষামন্ত্রী। বৃহস্পতিবার।—নিজস্ব চিত্র
মমতা নিজেও এ দিন বলেন, “আমার দলের অনেকের আশঙ্কা, যোজনা কমিশনের সামনে হামলার ঘটনা লঘু করার জন্য এটা সিপিএমের কৌশল। কিন্তু আমি চাই, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হোক। সত্য উদ্ঘাটিত হোক। এবং যে-ই এ ধরনের কাজ করে থাকুন, তাঁর শাস্তি হোক।” এ দিন বিকেলে প্রেসিডেন্সি কলেজে গিয়ে একই অভিযোগ করেছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও এ দিন বলেছেন, “যারা গোলমাল করেছে তারা তৃণমূলের কেউ নয়। ওই গোলমালের পিছনে কারা আছে তা তদন্তে ধরা পড়বে। এর পিছনে কাদের ষড়যন্ত্র, তা প্রকাশ করতে চাই।”
সিপিএম অবশ্য তৃণমূলের এই অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছে। এসএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক দেবজ্যোতি দাসের তির্যক প্রশ্ন, “তৃণমূলের কাউন্সিলররাও কি আজকাল এসএফআই করছেন?”
বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ জোড়াসাঁকো থানায় যে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন, তাতেও তৃণমূলকেই দায়ী করা হয়েছে। গোটা ঘটনার বৃত্তান্ত জানিয়ে বৃহস্পতিবার রাজ্যপাল তথা আচার্যের কাছে রিপোর্টও পাঠিয়েছেন তাঁরা।
প্রেসিডেন্সির ক্যাম্পাসে পড়ুয়াদের প্রতিবাদ। প্ল্যাকার্ডে ভুল বানান অবশ্য
প্রতিষ্ঠানের সুনাম নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে শিক্ষাজগতে। —নিজস্ব চিত্র
রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন এ দিন বলেন, প্রেসিডেন্সিতে যারা ভাঙচুর চালিয়েছে, তাদের অপরাধী হিসেবেই দেখা উচিত। তিনি বলেন, “হামলাকারীরা কেউ ছাত্র ছিল না। তারা বহিরাগত।’’ পুলিশ অবশ্য এ দিন দু’জন ছাত্রকেই গ্রেফতার করেছে। তাঁদের নাম শুভজিৎ বর্মন এবং জয়ন্ত হাওলাদার। শুভজিতের বাড়ি হাওড়ার বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায়। জয়ন্ত ক্যানিংয়ের শক্তিপল্লির বাসিন্দা। পুলিশ জানিয়েছে, এঁরা কেউই প্রেসিডেন্সির ছাত্র নন।
ভাঙচুরের প্রতিবাদে এ দিন পথে নেমেছিল প্রেসিডেন্সি। ঐতিহ্যবাহী ওই প্রতিষ্ঠানের বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা বৃহস্পতিবার কলেজ স্ট্রিট থেকে ধর্মতলার রানি রাসমণি রোড পর্যন্ত মিছিল করেন। শিক্ষিক-শিক্ষিকা, আধিকারিকেরাও তাতে সামিল হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা দলমত নির্বিশেষে এ দিন ধর্মঘট পালন করেন। ফলে ক্লাস হয়নি। সওয়া দুটো নাগাদ মিছিল শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, রেজিস্ট্রার ও অন্য আধিকারিকেরাও তাতে পা মেলান। পরে রাজভবনে গিয়ে তাঁরা স্মারকলিপি দেন।
তবে বুধবারই কেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রাজ্যপালের কাছে যাননি, তা নিয়ে এ দিন কটাক্ষ করেছেন পার্থবাবু। তাঁর কথায়, “দু’জনের প্রতি সম্মান জানিয়েই বলছি, উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রার সংবাদমাধ্যমের সামনে কথা না বলে আচার্য তথা রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। ওঁদের তো গাড়ি রয়েছে। সোজা রাজভবনে গিয়ে কথা বললে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বজায় থাকত।”
প্রেসিডেন্সি-কাণ্ডে কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। বলা হয়েছে, বিশেষ বা অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার কোনও অফিসারকে দিয়ে ঘটনার তদন্ত করে তিন সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে হবে। কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়েও এই ঘটনার তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছে প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায়কে।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.