চৈত্রশেষের বারবেলায় খাতা খুলল
কালবৈশাখী, স্বস্তির ছোঁয়া নগরে
বশেষে সে এল। সঙ্গে দমকা হাওয়া, ঘন ঘন বিদ্যুতের ঝলকানি আর বৃষ্টি নিয়ে। মরসুমের প্রথম কালবৈশাখীতে বৃহস্পতিবার চৈত্রের শেষবেলায় কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরল কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বড় অংশে।
মার্চের মাঝামাঝি থেকেই কালবৈশাখীর অপেক্ষায় দিন গুনছিল কলকাতা। গত প্রায় এক মাস ধরে নানা তোড়জোড় হচ্ছিল ঠিকই। কিন্তু আসল জিনিসটার অভাবে সব আয়োজন ভেস্তে যাচ্ছিল। সকালে কখনও আকাশ থাকছিল মেঘলা, কখনও সন্ধের মুখে তার মুখ ভার। বাতাসে কিছু কিছু জলীয় বাষ্প ঢুকছিল। দিনের বেলা তাপমাত্রাও বাড়ছিল চড়চড়িয়ে। অথচ এত অনুকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও কাজের কাজটা হচ্ছিল না। ধেয়ে আসছিল না কালবৈশাখী।
কারণ যা ভেঙে কালবৈশাখী সৃষ্টি হয়, উপাদানের সামান্য হেরফেরে সেই উল্লম্ব মেঘই তৈরি হতে পারছিল না। এ দিন বিকেলে ওড়িশা-ঝাড়খণ্ডের সীমানায় সেই মেঘ তৈরি হয়েছে। তা ভাঙতে ভাঙতে চলে এসেছে কলকাতা পর্যন্ত। তীব্রতা খুব বেশি না-থাকলেও তাতে বাইপাসের ধারে দত্তাবাদে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর গার্ড রেলের একাংশ ভেঙে জখম হন এক মহিলা। শীলা দাস নামে ওই মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঝড়ের জেরে এ দিন সন্ধ্যায় বেশ কিছু ক্ষণের জন্য উড়ান পরিষেবাও ব্যাহত হয় কলকাতা বিমানবন্দরে। রাঁচি থেকে আসা একটি বিমান ভুবনেশ্বরে ঘুরিয়ে দেন কৃর্তপক্ষ। আর বেশ কয়েকটি উড়ান নির্দিষ্ট সময়ে নামতে না পেরে প্রায় কুড়ি-পঁচিশ মিনিট আকাশে চক্কর কাটে।
এত দিন কালবৈশাখী নিরুদ্দেশ ছিল কেন, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, উল্লম্ব মেঘ তৈরির তিনটে শর্ত। এক, দক্ষিণবঙ্গের বাতাসে থাকতে হবে যথেষ্ট পরিমাণ জলীয় বাষ্প। দুই, ঝাড়খণ্ডের উপরে চাই ঘূর্ণাবর্ত। আর তিন, দক্ষিণবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে তাপমাত্রা থাকতে হবে বেশি। তাপমাত্রা বাড়লে গরম বাতাস উপরে উঠে যায়। অন্য দিকে ঝাড়খণ্ডের ঘূর্ণাবর্ত নিজের দিকে টেনে নেয় জলীয় বাষ্প, যা গরম হাওয়ার সংস্পর্শে এসে উল্লম্ব মেঘ তৈরি করে।
উল্লম্ব মেঘের গভীরতা যত বেশি থাকবে, সে নিজের কেন্দ্রে তত বেশি বাতাস টানবে, তাতে তীব্রতা বাড়বে ঝড়ের।
তাই ঝাড়খণ্ডের দিকে উল্লম্ব মেঘ দেখলে আবহবিদেরা দক্ষিণবঙ্গে কালবৈশাখীর পূর্বাভাস দিয়ে থাকেন। কিন্তু চলতি মরসুমে এত দিন উল্লম্ব মেঘ সৃষ্টির তিনটি শর্তের কিছুটা কিছুটা পূরণ হলেও সবগুলো একসঙ্গে পুরোপুরি মিটতে পারছিল না। আলিপুর আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথের কথায়, “তাপমাত্রা বেশি ছিল তো যথেষ্ট জলীয় বাষ্প ছিল না। পরিমণ্ডলে জলীয় বাষ্প যেটুকু ঢুকছিল, তা-ও ঝাড়খণ্ডের বদলে চলে যাচ্ছিল উত্তর-পূর্বে।”
ঝড়-পঞ্জি
সাল মার্চ এপ্রিল মে
২০১০
১৩
২০১২
১* -
**হওয়া উচিত
অগত্যা গত এক মাস ঝড়ের ঠিকানা হারিয়ে দগ্ধে মরেছে মহানগর। বস্তুত চেনা চেহারা পাল্টে আবহাওয়া গত ক’মাস ধরেই ভেল্কি দেখিয়ে চলেছে। আষাঢ়-শ্রাবণে বৃষ্টি হয়নি, কিন্তু আশ্বিন ভেসে গিয়েছে। এমনকী, বর্ষা ধাওয়া করেছে হেমন্তের গোড়া পর্যন্ত। প্রলম্বিত শীতের প্রকোপে প্রথম বসন্তের আমেজ মালুম হয়নি।
আবার বসন্তের শেষাশেষি বাতাসে জলীয় বাষ্প উধাও হয়ে তাপমাত্রা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, খাস কলকাতায় তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি দেখা দেয়! পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মহানগরে কালবৈশাখীর নির্ঘণ্টও যে বদলে গিয়েছে, গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যানে তা পরিষ্কার বলে দাবি করছেন আবহবিদদের একাংশ।
তাই এই চৈত্রে কালবৈশাখীর দেখা আদৌ মিলবে কি না, সে সংশয়ও দানা বাঁধছিল। বৃহস্পতিবারের বারবেলায় কলকাতার ঝড়-ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ার পরে গোকুলবাবু বলেন, “গত দু’দিন ধরে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে অনুকূল হয়েছে। ওড়িশা-ঝাড়খণ্ড সীমানায় এ দিন তৈরি হওয়া উল্লম্ব মেঘ সন্ধের পরে কালবৈশাখীর জন্ম দিয়েছে। ঝড়-বৃষ্টির শুরু পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রামে। রাতে সে এসে কলকাতায় পৌঁছেছে।”
আপাতত মহানগরে ঝড়ের খরা কাটল বলেই মনে করছেন আবহবিদেরা।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.