পুরসভার অনুমোদিত নকশার বাইরে গিয়ে অবৈধ ভাবে বাড়তি নির্মাণ করার পরে শুনানির সুযোগে জরিমানা দিয়ে তার বৈধকরণ আটকাতে চাইছে রাজ্য সরকার। শহরে বহুতল নির্মাণের ক্ষেত্রে এমনটা আকছারই হয় বলে অভিযোগ। এর জন্য কলকাতার পুর-আইনে কিছু অদলবদল করার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এর পাশাপাশি যাঁরা বাড়ি তৈরির পুর-বিধি যথাযথ ভাবে মেনে নির্মাণ করেছেন, অথচ নকশা অনুমোদন করাননি, তাঁদের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। পুর-বিশেষজ্ঞদের মতে অবশ্য দুটো বিষয়কে এক করে না দেখাই ভাল। কারণ, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে নির্মাণ-বিধি মেনেই বাড়িটি তৈরি করা হয়েছে।
বেআইনি বাড়ির রমরমা নিয়ে এমনিতেই যথেষ্ট উদ্বিগ্ন ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি ঠাণেতে বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনা তাঁকে আরও বিচলিত করে। তাঁরই নির্দেশে বৃহস্পতিবার মহাকরণে কলকাতা-সহ রাজ্যের পুর এলাকাগুলিতে বেআইনি নির্মাণ ঠেকাতে উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠক হয়। সেখানে ছিলেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, কলকাতার পুর-কমিশনার খলিল আহমেদ, পুরসচিব-সহ দমকল এবং কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং দফতরের পদস্থ কর্তারা।
ফিরহাদ বলেন, “বেআইনি বাড়ির দৌরাত্ম্য বন্ধ করতেই হবে। বেআইনি নির্মাণের ক্ষেত্রে একটা চক্র কাজ করে। কেউ একটা ঠাকুরঘর করলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। কিন্তু বেআইনি ভাবে তলা উঠলেও সবাই চুপ করে থাকে।” তিনি বলেন, “পুর-এলাকায় কোনও বেআইনি নির্মাণ হলে সঙ্গে সঙ্গে এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (বিল্ডিং)-কে জানাতে হবে। তাঁর দায়িত্ব থাকবে পুরসভার এগ্জিকিউটিভ অফিসারকে জানানো। ওই অফিসার জানাবেন পুলিশকে। এ ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা ফাইলে লিখে রাখতে হবে। তার পরেও কোনও কাজ না হলে রাজ্য সরকারকে জানাতে হবে।”
কলকাতার কথা তুলে মন্ত্রী জানান, পুরসভার প্রাক্তন ডিজি (বিল্ডিং) অশোক রায়চৌধুরীকে প্রধান করে একটি টেকনিক্যাল কমিটি তৈরি হচ্ছে। তাঁরাই বেআইনি নির্মাণ সম্পর্কে খুঁটিনাটি সব কিছু দেখবেন। কী কী আইন সংশোধন প্রয়োজন, তারও দিক নির্দেশ করবে কমিটি। ঠাণের ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে পুরমন্ত্রী জানান।
পুরসভা সূত্রের খবর, কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং রুলের ২৩ নম্বর ধারায় বলা আছে, বহুতল বাড়ি বা ফ্ল্যাট তৈরির সময়ে বাড়ির সামনে বোর্ডে লিখতে হবে কত তলা বাড়ি, ইঞ্জিনিয়ারের নাম, নকশা পাশ কে করেছেন এবং স্থপতি কে এমন সব তথ্য। কাগজে-কলমে ওই নিয়ম থাকলেও অনেকেই তা মানেন না। এ দিন ফিরহাদ বলেন, “ওই নিয়ম প্রত্যেককেই মানতে হবে। কোনও নড়চড় হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ দিনের বৈঠকে রাজারহাট ও নিউ টাউনের বিশাল বহুতলগুলি নিয়েও আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে পুরমন্ত্রী জানান, ওই এলাকার বাড়ি বা ফ্ল্যাট নির্মাণ ঠিক মতো হয়েছে কি না, তা-ও পরীক্ষা করে দেখা হবে। সেই পরীক্ষা করবে হিডকো। ফিরহাদ বলেন, “পুলিশকেও বলেছি, বাড়ি তৈরির সময়ে নজর রাখতে। রড, লোহা, সিমেন্ট কী মানের দেওয়া হচ্ছে, তা কেউ জানে না। বাড়ির কাঠামোয় গরমিল হলে প্রয়োজনে প্রোমোটারকেও গ্রেফতার করা হবে।” তিনি জানান, দমকলের অনুমতি ছাড়া ১৪. ৫ মিটারের উপরে বাড়ি তৈরি করা যাবে না। মন্ত্রী স্বীকার করেন, কলকাতা, রাজারহাট ও হাওড়ায় বহু বেআইনি নির্মাণ হয়েছে। সেগুলি নিয়ে কী করা যায়, সে বিষয়ে আইনজীবী-সহ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। আইন সংশোধন করে সে সব ঠিক করা হবে। |