গুটখার হাত থেকে বাঁচতে এ বার ফাইবার গ্লাসের শরণে হাওড়া ব্রিজ। বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক বৈঠকে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানান, ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সেতুর ৮৬টি হ্যাঙ্গারের গোড়ায় এই নতুন ঢাল বসছে। দৃশ্য দূষণ এড়াতে পানের পিকের মতো লাল রঙে রাঙানো হচ্ছে নতুন ঢালের একাংশ।
বন্দরের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অমলকুমার মেহরা জানান, ২০০৭ সালে হ্যাঙ্গারের গোড়ায় বসানো ঢাল বদলানো হয়। তিন বছরেই দেখা যায়, ৬ মিমি ইস্পাতের পাত ক্ষয়ে ৩ মিমি হয়ে গিয়েছে। এর মূল কারণ গুটখা-পানের পিক। বন্দরের এক মুখপাত্রের দাবি, এর পরেই ওই ঢাল বদলানোর ভাবনাচিন্তা শুরু হয়। |
প্রথমে কাঠের ঢালের কথা ভাবা হলেও শেষ পর্যন্ত ফাইবার গ্লাসের কথাই ঠিক করেন বিশেষজ্ঞরা। কেন?
ইঞ্জিনিয়ারদের দাবি, হ্যাঙ্গারগুলিই ব্রিজের ভার বহন করে। সেখান থেকে তা ছড়ায় দু’ধারের মূল স্তম্ভে। ৮০ বছরের পুরনো সেতুর হ্যাঙ্গারগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা আশঙ্কার।
এ দিন হাওড়া ব্রিজে গিয়ে দেখা গেল, সেতুর কাঠামো ও রেলিংয়ে পান-গুটখার পিকের দাগ। বিভিন্ন হ্যাঙ্গারে অল্পবিস্তর ক্ষতও। তার মধ্যেই হ্যাঙ্গারের গোড়ায় ফাইবার গ্লাসের ঢাল লাগানো হচ্ছে। ঢালের নীচে লাল রং, উপরে রুপোলি। বন্দরের অফিসারেরা জানান, সেতুর কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই উপরের দিকে রুপোলি রং করা হয়েছে। তবে রেলিঙে পান-গুটখার পিকের প্রভাব তেমন পড়বে না বলেই কর্তৃপক্ষের দাবি। তাঁরা বলছেন, রেলিংগুলি ঢালাই লোহার হওয়ায় তেমন ক্ষতি হবে না। |
পান-গুটখার পিকে ফাইবার গ্লাসের ক্ষতি হবে না? বন্দরের এক মুখপাত্রের জবাব, ফাইবার গ্লাসে পান-গুটখার পিক ধোয়া যাবে। বিষয়টি ন্যাশনাল টেস্ট হাউস থেকে পরীক্ষা করে আনানো হয়েছে। বন্দর সূত্রে খবর, ঢালগুলিকে বিজ্ঞাপনের কাজে লাগানো হতে পারে। তা থেকে আয় হতে পারে। ঢালগুলি যে বিজ্ঞাপনে ব্যবহার হবে, তা মানছেন অমলবাবুও। তবে তাঁর দাবি, আয়ের থেকেও বড় বিষয় বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলি নিজেদের স্বার্থেই ঢালগুলি পরিষ্কার রাখবে।
পান-গুটখার পিক ফেললে পথচারীদের জরিমানার কথা ভাবছে না বন্দর। ঘটনাচক্রে, মেট্রো কর্তৃপক্ষ স্টেশন নোংরা করার জরিমানা পাঁচশো টাকা করেছেন। হাওড়া ব্রিজের ক্ষেত্রে তা হবে না কেন? অনেকেই মনে করেন, জরিমানা করলে পিক ফেলা কমবে। কিন্তু বন্দরের মুখপাত্রের দাবি, দিনে গড়ে ৫ লক্ষ পথচারী ও এক লক্ষ গাড়ি যাতায়াত করে এই সেতু দিয়ে। তাই নজরদারি ও জরিমানা করা সম্ভব নয়। |