ডাকাতির সময়ে চারটি সিসিটিভি ক্যামেরাই বিকল হয়ে পড়ল কী ভাবে, সে ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার বরাকরে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় ভরদুপুরে ঢুকে লুঠপাট চালায় কিছু দুষ্কৃতী। তার ২৪ ঘণ্টা পরেও জড়িতদের ধরতে পারেনি পুলিশ। লুঠপাটের আগে ক্যামেরা ও বিপদঘণ্টি খারাপ হয়ে পড়ল কী ভাবে, সে ব্যাপারে বিভাগীয় তদন্ত হবে বলে জানিয়েছেন ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের জোনাল ম্যানেজার আর পি প্রসাদ।
বৃহস্পতিবার ঘটনার পরেই ব্যাঙ্কে দাঁড়িয়ে খারাপ ক্যামেরা ও ঘণ্টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল পুলিশ। শুক্রবার বর্ধমান থেকে ওই ব্যাঙ্কে আসেন জোনাল ম্যানেজার আরপি প্রসাদ। তিনি বলেন, “আমি জেনেছি, ঘটনার সময়ে সিসিটিভি কাজ করেনি। এ বিষয়ে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করতে পারেন না। আমি বিষয়টির বিভাগীয় তদন্ত করাতে বাধ্য। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি জানান, ওই ব্যাঙ্কে চারটি সিসিটিভি রয়েছে। একটিতেও ডাকাতির সময়ের ছবি ওঠেনি। পুলিশের প্রশ্ন, এক সঙ্গে সব ক’টি ক্যামেরা অকেজো হল কী ভাবে? ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কথা অনুযায়ী, দুপুর ১২টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ক্যামেরাগুলি সচল ছিল। পুরো ঘটনা নিয়ে সন্দেহ পুলিশেরও। আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি।” বিপদঘণ্টিও কেন বাজেনি, সে প্রসঙ্গে জোনাল ম্যানেজার আর পি প্রসাদ দাবি করেন, সম্ভবত ব্যাঙ্ককর্মীরা ভয় পেয়ে ওই ঘণ্টির সুই্যচে ঠিক মতো চাপ দিতে পারেনি। যদিও ব্যাঙ্ককর্তার এই বক্তব্য মানতে নারাজ পুলিশ।
পুলিশের একাংশের সন্দেহ, ইচ্ছাকৃত ভাবে সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ করা হয়ে থাকতে পারে। তার পিছনে দু’টি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, ডাকাতিতে জড়িতদের সঙ্গে ব্যাঙ্কের কেউ জড়িত থাকতে পারেন। কারণ, পুলিশ জেনেছে, এই ব্যাঙ্কের ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিমা করানো আছে। অর্থাৎ, এই টাকা খোয়া গেলে ব্যাঙ্কের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তা পূরণ করবেন। সে ক্ষেত্রে এই শাখার জবাবদিহির বিশেষ চাপ নেই। দ্বিতীয়ত, গা ছাড়া মনোভাব থেকে ব্যাঙ্ককর্মীরা ক্যামেরা বন্ধ করে দিয়ে থাকতে পারেন। কারণ, প্রাথমিক তদন্তের শেষে পুলিশ জেনেছে, পৌনে ৩টে নাগাদ দুষ্কৃতীরা চড়াও হয়। গ্রাহকদের লেনদেনের জন্য ব্যাঙ্কটি বিকেল সাড়ে ৩টে পর্যন্ত খোলা থাকে। কিন্তু সাধারণত দুপুর ২টোর পরে গ্রাহকদের যাতায়াত প্রায় থাকে না। তা ছাড়া বৃহস্পতিবার বরাকরের বাজার বন্ধ ছিল। তাই ব্যাঙ্কে এ দিন গ্রাহকদের উপস্থিতিও খুব কম ছিল। গরমে এলাকা সুনসান হয়ে যাওয়ায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ গা ছাড়া ভাব দেখিয়ে সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ করে থাকতে পারেন, অনুমান পুলিশের।
ক্যামেরা বন্ধ থাকায় অন্ধকারে পুলিশ। তবে ডাকাতির ধরণ, দুষ্কৃতীদের পালানোর পদ্ধতি দেখে এবং কয়েক জন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, ডাকাতির আগে একাধিক বার মহড়া দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। বৃহস্পতিবার এলাকার ব্যবসা বন্ধের সুযোগও নিয়েছে তারা। পুলিশ জানায়, মাসখানেক আগে বরাকরে এক গয়না ব্যবসায়ীর দোকানে রাতে লুঠপাট চালায় কিছু দুষ্কৃতী। তখন সিসিটিভি চালু থাকায় দুষ্কৃতীদের শনাক্ত করে কয়েক দিনের মধ্যেই পুরো দলটিকে ঝাড়খণ্ড থেকে ধরে পুলিশ। এ ক্ষেত্রে সে সুযোগ নেই। তাই অন্য নানা সূত্রেই তদন্তে এগোনোর চেষ্টা চলছে, জানিয়েছে পুলিশ।
ডুলিতে আটক। ঝড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ায় ঘণ্টা দুয়েক ওঠার ডুলিতে আটকে রইলেন ২২ জন খনিকর্মী। ঘটনাটি ঘটেছে রানিগঞ্জের জেকে নগর প্রজেক্টে। রাত পর্যন্ত বিদ্যুতের অভাবে উৎপাদনও বন্ধ থাকে। খনি কর্তৃপক্ষ জানান, বিকেল পৌনে ৪টে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন হওয়ায় উপরে ওঠার সময়ে ডুলি প্রায় ২০ ফুট নীচে আটকে পড়ে। এর পরে ২২ জন খনিকর্মীকে সিঁড়ি ও দড়ির সাহায্যে উপরে তোলা হয়। আইএনটিইউসি নেতা বাবলু সিংহ অভিযোগ করেন, ঘটনার পরে এক ঘণ্টারও বেশি সময় কোনও উদ্ধারকারী আসেনি। আরও নীচে ডুলি আটকে পড়লে আতঙ্কে শ্রমিকদের ক্ষতি হতে পারত। কর্তৃপক্ষ অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।
|