ছিলেন সবেধন নীলমণি এক জন। তিনিও সরকারি চাকরি ছেড়ে বেসরকারি হাসপাতালে যোগ দেওয়ায় বন্ধ হয়ে গেল সরকারি পরিকাঠামোয় রাজ্যের একমাত্র নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগ। অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন থাইরয়েড, হাড়, হার্ট এবং লিভার ক্যানসারের অসংখ্য রোগী। কবে এই বিভাগ ফের চালু হবে, তার নির্দিষ্ট উত্তর স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে নেই।
স্বাস্থ্য পরিষেবায় কর্মীর আকাল একটি বড় সমস্যা। তা সত্ত্বেও রাজ্য জুড়ে হাসপাতালে শয্যা বাড়ছে, চালু হচ্ছে একাধিক নতুন বিভাগ। কিন্তু তাতে সত্যি পরিষেবার উন্নতি হচ্ছে, না কি কাগজে-কলমে সংখ্যাই বাড়ছে শুধু? এসএসকেএম হাসপাতালের ‘নিউক্লিয়ার অ্যান্ড এক্সপেরিমেন্টাল মেডিক্যাল সায়েন্সেস’ এই প্রশ্নই ফের সামনে আনল। কিছু দিন আগেই এই বিভাগটিকে রাজ্যের আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবার অন্যতম নজির বলে তুলে ধরেছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা। সেই ‘নজির’ই এ ভাবে মুখ থুবড়ে পড়ায় এখন অস্বস্তিতে গোটা স্বাস্থ্য দফতর।
তিন বছর আগে এসএসকেএমে এই বিভাগটি চালু হয়। তারও আগে প্রস্তুতি চলেছিল পাঁচ বছর ধরে। কয়েক কোটি টাকা দামের যন্ত্র কিনতে ও ভাবা পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রের ছাড়পত্র পেতেও যায় অনেকটা সময়। বিভাগ চালু হতেই উপচে পড়েছিল রোগীর ভিড়। থাইরয়েড ক্যানসার ঠিক কতটা অংশে ছড়িয়েছে, ইস্কিমিক হার্টের নানা খুঁটিনাটি, লিভার কিংবা হাড়ে ক্যানসার ছড়িয়েছে কি না, তার যাবতীয় তথ্য জানার পরীক্ষানিরীক্ষা চালু ছিল এই কেন্দ্রেই। শুধু কলকাতা নয়, দূর-দূরান্তের জেলা থেকেও রোগীরা এখানে আসতেন পরীক্ষার জন্য। বেসরকারি কেন্দ্রের চেয়ে অনেক কম খরচে এখানে পরীক্ষাগুলি করা যেত। এ বছরের গোড়া থেকে সব বন্ধ।
বিভিন্ন বিভাগের রোগীদের এখানে ‘রেফার’ করেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু পরীক্ষা হচ্ছে না। ক্ষোভ দানা বাঁধছে অন্য বিভাগের চিকিৎসকদের মধ্যেও। ক্যানসার বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, “বহু ক্ষেত্রেই ক্যানসার এক অঙ্গ থেকে অন্য অঙ্গে অথবা হাড়ে ছড়িয়ে যায়। কতটা ছড়াল, তা বোঝা যায় বোন স্ক্যান করলে। সেটাই এখন বন্ধ। অধিকাংশ রোগীর পক্ষেই বাইরে থেকে এটি করানো সম্ভব নয়। তাই তাঁদের চিকিৎসাও অসম্পূর্ণ থাকছে।”
বিভাগের প্রধান চিকিৎসক জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় বললেন, “টেকনিশিয়ান ছাড়া বিভাগটি চালানো সম্ভব নয়। মাত্র দু’জন টেকনিশিয়ান ছিলেন। এক জন বেশ কয়েক মাস আগে কাজ ছেড়ে চলে যান। তার পরে কোনওমতে এক জনকে দিয়েই কাজ চালানো হচ্ছিল। কিন্তু ডিসেম্বরে তিনিও চাকরি ছেড়ে দেন। এক জনও টেকনিশিয়ান না থাকলে বিভাগ চালানোর অনুমতি দেয় না ভাবা পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র। তাই বাধ্য হয়েই বন্ধ করে দিতে হয়েছে।”
কেন সময় থাকতে টেকনিশিয়ানের বন্দোবস্ত করল না স্বাস্থ্য দফতর? কর্তাদের রুটিনমাফিক বক্তব্য, “প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে আগেই। কিন্তু সব শেষ হতে খানিকটা সময় লাগছে।”
সরকারি নিয়মের ফাঁস কি তা হলে রোগীদের ভোগান্তির চেয়েও বড়? রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রশিক্ষিত কর্মী না পেলে এই কাজ তো চালানো সম্ভব নয়। অবশেষে এক জনকে পেয়েছি। এখন তাঁর কাগজপত্র তৈরি হচ্ছে।”
কিন্তু প্রথম জন চাকরি ছাড়ার পরেই কেন এই নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হল না, তার কোনও জবাব তিনি দিতে পারেননি তিনি। |