একটি খাটের সঙ্গে সেঁটে রয়েছে আর একটি খাট। মশারি টাঙানোর জন্য থাকা বাটামে জামাকাপড়ের স্তূপ। খাটের তলায় একটি ট্রাঙ্ক। তাতে সারা দিনের ব্যবহারের জিনিসপত্র রাখা আছে। সকাল হলে শৌচাগারে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে যান প্রত্যেকে। আবার সময় মতো যেতে হয় ডিউটিতে। তাই স্বস্তিতে বসার সুযোগ নেই। এটা শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট-এর ব্যারাকের ছবি। কিন্তু এমন দেশা নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও কেউই আধিকারিকদের সামনে মুখ খোলার সাহস পান না। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার আনন্দ কুমার সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়ে বলেন, “মাটিগাড়ায় কর্মীদের জন্য একটি ব্যরাকের ব্যবস্থা আছে। সেখানে ১০০ জন থাকতে পারে। আরও ব্যরাক তৈরির জন্য জমি খোঁজা হচ্ছে। বিষয়টি জেলাশাসক ও শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ফুলবাড়ি ট্রাক স্ট্যান্ডের কাছে একটি জমি দেওয়ার কথা চলছে। সেটা পেলে দ্রুত কাজ শুরু হয়ে যাবে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরে মাল্লাগুড়ির পুলিশ ব্যারাক বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। এর আগে ভূমিকম্পের সময় ব্যরাকের বিল্ডিংয়ে ফাঁটল ধরে। সেগুলিও সংস্কার হয়নি বলে অভিযোগ। ওই পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশ কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেওয়ায় বছর দু’য়েক আগে ব্যরাকের জন্য নতুন ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়। এর পরে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট তৈরির ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্যারাকের জন্য তৈরি করা ভবনে সেই সময় শুরু করা হয় কমিশনারেটের অফিস। ফলে পুলিশ কর্মীদের সেই তিমিরে থাকতে হয়েছে। বর্তমানে মাল্লাগুড়ির পুরনো বিল্ডিংয়ের দোতলায় ব্যরাক। এ ছাড়াও নীচুতলার একটি ঘর এবং ওই চত্বরে একটি এটিএম কাউন্টারের সামনে এক ঘরে থাকার ব্যবস্থা আছে। সেখানে রান্না ঘর ও শৌচাগার রয়েছে।
ব্যারাকের আবাসিকেরা জানান, প্রায় সাড়ে ৩০০ জন ওই ব্যরাকে থাকেন। দুটি বড় ঘরে পেতে রাখা খাটের পাশে খাট রেখে সারি দিয়ে বিছানা। প্রায় দিন এক বিছানায় দু’জন শুতে বাধ্য হন। ঘরের সামনে বড় শৌচাগার। এক সঙ্গে ছ’জনের যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। সকাল হলে সাড়ে ৩০০ কর্মীর ডিউটিতে যাওয়ার তাড়া থাকে। ওই অবস্থায় লাইনে দাঁড়ানো ছাড়া উপায় থাকে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী বলেন, “অনেকটা যাযাবরের মতো দিন কাটছে। রাতে যেখানে পারি শুয়ে থাকি। অনেকের বিছানা নেই। এ ভাবে যে আর কত দিন চলতে হবে বুঝতে পারছি না।” |