গাড়িতে করে দিল্লি পাচারের সময় বালক-সহ এক কিশোরীকে উদ্ধার করল পুলিশ। এই ঘটনায় যুক্ত সন্দেহে আন্তঃরাজ্য পাচারচক্রের পাণ্ডা এক ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ওই নাবালিকা-সহ এক কিশোরকে দিল্লিতে পাচার করা হচ্ছে বলে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের থেকে পুলিশ খবর পায়। বৃহস্পতিবার সকালে বানারহাটের কাছে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ ধৃতকে ধরে দুইজনকে উদ্ধার করে।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম রণ বাহাদুর কামি ওরফে অজয় সিংহ। তার ডুয়ার্সের ভুটান সীমান্ত জয়গাঁ ও দিল্লিতে বাড়ি-সহ ধাবা রয়েছে। রণ বাহাদুরের অসম ও ডুয়ার্সে প্রচুর এজেন্ট রয়েছে বলে পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে। বেশ কয়েক বছর ধরে এজেন্টদের মাধ্যমে চা শ্রমিক পরিবারের ছেলেমেয়েকে সে দিল্লি, মুম্বইয়ে পাচার করেছে বলে অভিযোগ সামনে আসছে। পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “বেশ কয়েকটি ধারায় ধৃতের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তাকে জিঞ্জাসাবাদ করলে বহু তথ্য উঠে আসবে।” পুলিশ সূত্রের খবর, উদ্ধার হওয়া কিশোরের নাম অনিল লাকড়া। তার বাড়ি কালচিনির ভোজপাড়া বাগানে। সে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। |
ধৃত রণবাহাদুর কামি। —নিজস্ব চিত্র। |
১৫ বছর বয়সী উদ্ধার হওয়া কিশোরীর বাড়ি অসমের রঙ্গিয়ার এক চা বাগানে। চার বছর আগে কয়েক হাজার টাকার বিনিময়ে মা বাবার কাছ থেকে ওই কিশোরীকে কেনে রণ বাহাদুর। তাকে দিল্লির বিভিন্ন বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করানো হত। চারটি বাড়িতে চুক্তির ভিত্তিতে তাকে কাজ করানো হয়েছে। এমনকী, ধৃত ব্যক্তি ওই কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় বলে অভিযোগ। কালচিনির বাগানের বাসিন্দা অপর উদ্ধার হওয়া বালকের বাবা চা শ্রমিক ছিলেন। কয়েক বছর আগে বাবা মারা যান। মা অস্থায়ী শ্রমিক। তিন সন্তান প্রতিপালন কঠিন বলে বুধবার তিনি দালালের হাতে ছেলেকে তুলে দেন বলে অভিযোগ। জবলা অ্যাকশন রিসার্চ অর্গানাইজেশন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ডুয়ার্সের কেস অফিসার রুবি বাগদাস জানান, চা বাগানের শ্রমিক পরিবারগুলি খুবই দুঃস্থ। তাই পাচারকারীরা এর সুযোগ নিচ্ছে। প্রতি মাসে টাকা পাঠানোর নাম করে সন্তানদের ভিনরাজ্যে পাচার করছে চক্রগুলি। প্রথম কয়েক মাস টাকা পাঠানো হলেও পরে তা বন্ধ করা হচ্ছে। গত এক বছরে পাচার হওয়া এমন ৪৫ জনকে উদ্ধার করে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। এখনও ডুয়ার্সে বিভিন্ন থানায় ৩৫ জনের নামে নিখোঁজের ডায়েরি রয়েছে। ছেলেদের পোশকের জড়ির কাজ ও সোনার গয়না তৈরির কাজে এবং মেয়েদের পরিচারিকা বা পতিতাপল্লিতে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। |