দলের অন্য নেতা-কাউন্সিলর, কর্মীরা যখন গ্রেফতার বরণ করছেন, সেই সময়ে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা পুরসভার বিরোধী দলনেতা নুরুল ইসলাম ও শিলিগুড়ি শহরের জোনাল সম্পাদক মুকুল সেনগুপ্তের ভূমিকা নিয়ে সিপিএমের অন্দরেই নানা প্রশ্ন ও অভিযোগ উঠেছে। রাত ৮টা থেকে রাতভর প্রাক্তন পুরমন্ত্রী, জীবেশবাবুরা থানায় বসে থাকায় অনেকে দেখা করতে গিয়েছেন, কিন্তু নুরুলবাবু ও মুকুলবাবু কেন যাননি সেই প্রশ্নে থানায় চত্বরে সরব হতে দেখা গিয়েছে অনেককে। এমনকী, অশোকবাবু, জীবেশবাবুদের গ্রেফতারের সময়ে প্রাক্তন মেয়র নুরুলবাবু দলীয় অফিসের শৌচাগারে ঢুকে পড়েছিলেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি, দলের অপিসের পিছন দিয়ে মুকুলবাবু গা ঢাকা দিয়েছিলেন বলেও সিপিএমের নেতা-কর্মীদের একাংশের অভিযোগ। শুধু তাই নয়, ধৃত নেতা-কর্মীদের বাড়ির লোকজনদের তরফেও কয়েকজন আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ক্ষুব্ধ সিপিএম কর্মীদের অনেকেই দলীয় পর্যায়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন।
এই ব্যাপারে দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “এটা নিয়ে সমালোচনার কোনও ব্যাপার নেই। দলের কেউ নুরুলবাবু, মুকুলবাবুর ব্যাপারে এ সব বলছেন তা ঠিক নয়। পুলিশ দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে ধরপাকড় শুরু করলে তাড়া খেয়ে নুরুলবাবু শৌচাগারে গিয়েছিলেন বলে শুনেছি। পুলিশ তাঁকে ধরতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি বার হননি বলে পুলিশ হয়তো ধরতে পারেনি। মুকুলবাবু পুলিশের তাড়া খেয়ে পিছনের দরজা দিয়ে চলে গিয়েছিলেন। এ ছাড়া অন্য কোনও ব্যাপার নেই।” দলের ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেছেন, “ওই সময় কী হয়েছিল বলতে পারব না। আমাদের দলীয় কার্যালয়ে অনেক ঘর রয়েছে। পুলিশ এলে কোথায় তারা গিয়েছিলেন জানি না।”
নুরুলবাবু বা মুকুলবাবু অবশ্য তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। নুরুলবাবু বলেন, “এ সব কথা ঠিক নয়। বৃহস্পতিবার আদালত চত্বরেও ছিলাম। আসলে বুধবার কলকাতা থেকে ফিরেছি। দলীয় মিছিলের পর বৈঠক করে পার্টি অফিস থেকে চলে গিয়েছিলাম। বিষয়টিকে অন্য ভাবে দেখা ঠিক নয়।” যাঁরা দলের হয়ে গ্রেফতার হয়েছেন, তাঁদের খাবার প্রস্তুত করা থেকে নানা কাজে তিনি বৃহস্পতিবার ব্যস্ত ছিলেন বলেও দাবি করেছেন। মুকুলবাবু বলেন, “এ সব ভাবার ব্যাপার নেই। যখন পুলিশ দলী কার্যালয়ে ঢুকে আমাদের নেতাদের গ্রেফতার করছিল তখন ছিলাম না।”
ওই ঘটনা নিয়ে শিলিগুড়ি থানায় রাতভর ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে আলোচনা শোনা গিয়েছে। সেখানে সিপিএমের যে নেতা-কর্মীরা ছিলেন, তাঁদের অনেকেই জানিয়েছেন, তাঁরা বিষয়টি ভাবতেই পারছেন না। ধৃতদের কয়েকজন আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে জানান, সারা রাত গল্পের সময়ে ঘুরেফিরে দুই নেতার অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। উপরন্তু, প্রায় রাত দুটো পর্যন্ত শিলিগুড়ি থানা লাগোয়া এলাকায় লোডশেডিং চলে। মোমবাতি জ্বালিয়ে বসে থাকেন সকলে। মশার কামড়ে মাঝে মধ্যে অতিষ্ঠ হয়েছেন। অশোকবাবু বলেন, “সারাটা রাত গল্প করেই কেটেছে। লোডশেডিং থাকাতে কিছুটা অসুবিধে হয়েছে। মশার কামড় খেতে হয়েছে।” ওই দলেই ছিলেন এসএফআইয়ের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক সৌরভ দাস, সভাপতি সৌরভ সরকার। তাঁরা বলেন, “গ্রেফতার করে আমাদের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না।”
এ দিকে, শিলিগুড়ির রাজনৈতিক উত্তেজনার আঁচ এড়াতে বৃহস্পতিবার দিনভর পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে জলপাইগুড়িতে। জেলা পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “জলপাইগুড়ি জেলা জুড়েই সর্তকতা জারি করা হয়েছে।” |