নিজস্ব সংবাদদাতা • জলপাইগুড়ি |
শিলিগুড়ির রাজনৈতিক উত্তেজনার আঁচ এড়াতে বৃহস্পতিবার দিনভর পুলিশি নজরদারিতে থাকল পাশের জলপাইগুড়ি শহর। সকাল থেকেই শহরের প্রাণকেন্দ্র কদমতলা মোড়ে পুলিশ পিকেট বসানো হয়। শহরে টহলদারিতে নামানো হয় অতিরিক্ত দুটি মোবাইল ভ্যান। বাড়তি নিরাপত্তার জন্য শুরু হয় বাইকে টহলদারি। রাজনৈতিক দলগুলির পার্টি অফিসের সামনে মোতায়েন করা হয় সাদা পোশাকের পুলিশ কর্মী। কোতোয়ালি থানার সামনে মজুত রাখা হয় বাড়তি বাহিনী। পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার জন্য দুপুর পর্যন্ত কোতোয়ালি থানায় বসেছিলেন ডিএসপি সদর প্রভাত চক্রবর্তী। থানার আইসি অভিজিৎ দাস শহরের উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাগুলিতে নিজেই নজরদারি চালিয়েছেন দুপুর পর্যন্ত। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া কুকুরজান, বেলাকোবাতেও পুলিশ পিকেট বসানো হয়। প্রতি ঘণ্টায় জেলা পুলিশ সুপারের দফতরে থেকে পরিস্থিতির রিপোর্ট তলব করা হয়।
জেলা পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “জেলা জুড়েই সর্তকতা জারি করা হয়েছে। জলপাইগুড়ি শহরের ক্ষেত্রে বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা রয়েছে। মোবাইলে টহলদারি বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ পিকেট-সহ সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে শহরে।” |
পুলিশি টহল জলপাইগুড়িতে। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |
গত মঙ্গলবার দিল্লিতে রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর হেনস্থার ঘটনার পরেই সন্ধ্যায় তৃণমূলের মিছিল থেকে জলপাইগুড়িতে সিপিএমের কামারপাড়ার পার্টি অফিসে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ ওঠে। তৃণমূলের তরফে সিপিএমের পার্টি অফিস থেকে পাল্টা উসকানির অভিযোগ ওঠে। কামারপাড়া পার্টি অফিসে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগে তৃণমূলের জেলা যুব সভাপতি বুবাই কর সহ ৬ জনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। এই মামলা দায়ের নিয়ে জলপাইগুড়িতেও তৃণমূল-সিপিএমের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা ছিলই। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পাশাপাশি অবস্থানের কারণে অতীতেও এক শহরে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক উত্তেজনা অন্য শহরে ছড়িয়ে পডার ঘটনা ঘটেছিল। তার পুনরাবৃত্তি রুখতেই পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
জলপাইগুড়িতে এদিন কোনও সভা বা সমাবেশ না করার আর্জি জানানো হয়েছে প্রশাসনের তরফে। সিপিএমের একাধিক কর্মসূচী থাকায় সেগুলি স্থগিত করার আবেদন জানানো হয় প্রশাসনের তরফে। জলপাইগুড়ি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি চন্দন ভৌমিক বলেন, “সিপিএম যে প্ররোচণা জারি রেখেছে তার প্রমান হল মিথ্যে মামলা দায়ের করা। গত মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত দলের যুব সভাপতি বুবাই কর আমার সঙ্গে মালবাজার মহকুমায় ছিলেন। মালবাজারের পুলিশ প্রশাসন সে কথা জানে। অথচ সেদিন বিকেলে তাঁর নেতৃত্বেই হামলা চালানোর অভিযোগ করেছে সিপিএম। আমাদের কর্মীদের শান্ত ও সংযত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
সিপিএমের জেলা সম্পাদক কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যা ঘটেছে তাই অভিযোগ হয়েছে। জলপাইগুড়িতে কামারপাড়ার পার্টি অফিসে হামলা, শিলিগুড়ির ঘটনা, এবং রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের সন্ত্রাসের প্রতিবাদে আমাদের একাধিক কর্মসূচী ছিল। তবে আপাতত শান্তি রক্ষার স্বার্থেই সেগুলি স্থগিত রাখা হয়েছে। তৃণমূলের তরফে প্ররোচণা অব্যাহত রয়েছে।”
এদিকে দিল্লির ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার গভীর রাতে জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বাম প্রভাবিত কারারক্ষী সমিতির অফিসে ঢুকে পতাকা ছেঁড়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের সংগঠনের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের কারারক্ষী সমিতির পাল্টা দাবি, রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে বামদের তরফে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছে। |