বাড়িতে বোমা মজুত রাখার অভিযোগে দুই সিপিএম এবং এক ডিওয়াইএফ নেতাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে তালড্যাংরা থানার বিবরদা এলাকার দুলেপাড়ায়। পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃতেরা হলেন সিপিএমের বিবরদা লোকাল কমিটির সম্পাদক হারাধন ঘোষ, ওই কমিটির সদস্য নেপাল দুলে এবং ডিওয়াইএফের বিবরদা লোকাল কমিটির সম্পাদক সমর দত্ত রয়েছেন। এঁরা প্রত্যেকেই দুলেপাড়ার বাসিন্দা।
পুলিশের দাবি, নেপালবাবুর বাড়ির উঠোনে খড়ের পালুইয়ের নীচ থেকে ও সমরবাবুর বাড়ির খাটের নীচ থেকে একটি করে বোমা উদ্ধার হয়। তাঁর বাড়িতে বোমা না মিললেও ঘটনায় জড়িত অভিযোগে হারাধনবাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে দু’জনের বাড়ি থেকে বোমা উদ্ধার করে। পরে ওই তিন জনকে ধরা হয়।”
পুরো ঘটনাটি তৃণমূলের ‘সাজানো’ বলে দাবি করেছে সিপিএম। দলের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্র বলেন, “এটা পুরোটাই সাজানো ঘটনা। তৃণমূলের লোকেরা জোর করে আমাদের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বোমা ঢুকিয়ে তাঁদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।” তাঁর সংযোজন, “এখন পরিস্থিতি এমনই যে, আমাদের যে কোনও নেতা যে কোনও সময় গ্রেফতার হয়ে যাবেন।”
নেপালবাবুর ছেলে তুফান দুলের অভিযোগ, “তৃণমূলের হুমকিতে বাবা তিন দিন ঘরছাড়া। ওরা বাড়িতে এসে ভয় দেখিয়ে যাচ্ছে। এ দিন সকালে তৃণমূলের লোকজন আমাদের বাড়িতে চড়াও হয়। পুলিশও ছিল।” তুফানের দাবি, প্রথমে নেপালবাবুর বাড়ির ভিতরে বোমাটি ঢোকাতে চেয়েছিল হামলাকারীরা। বাধা দিলে নেপালবাবুর স্ত্রীকে লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়। বাড়িতে না ঢুকতে পেরে খড়ের পালুইয়ের নীচে বোমাটি রেখে দেওয়া হয়। বাড়ির লোকেদের বক্তব্য, পুলিশ ১০০ মিটার দূরে দাঁড়িয়ে সব দেখছিল। তৃণমূলের লোকেরাই বোমাটি খুঁজে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
বস্তুত, দিল্লিতে এসএফআইয়ের হাতে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের হেনস্থা হলেন যে দিন, সেই মঙ্গলবার রাতেই তালড্যাংরায় সিপিএমের জোনাল পার্টি অফিসে ভাঙচুর চালিয়েছিল তৃণমূল। ভিতরে থাকা সিপিএম নেতা-কর্মীরা দোতলায় উঠে দরজা আটকে দিয়েছিলেন। এলাকার এক সিপিএম নেতার কথায়, “ইদানীং পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। আমরা বাজারহাটেও যেতে পারছিলাম। কিছু ঘরছাড়া ফিরে এসেছিলেন। দিল্লি-কাণ্ডের পর থেকেই আমাদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তৃণমূলের হুমকিতে অনেকে এলাকা ছাড়ছেন। যাঁরা আছেন, তাঁরা পারতপক্ষে বাড়ির বাইরে বেরোচ্ছেন না।” ডিওয়াইএফের রাজ্য সহ-সভাপতি তথা সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সুজয় চৌধুরী বলেন, “এই ভাবে জোর করে বোমা রেখে আমাদের কর্মীদের ফাঁসাচ্ছে তৃণমূল। পুলিশ সব জেনেও কিছু করছে না।” তালড্যাংরা ব্লক তৃণমূল সভাপতি সুধীন ভুঁই অবশ্য বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা। বোমা-গুলি ওই সিপিএম নেতাদের বাড়িতেই ছিল। আমাদের কর্মীরা কারও বাড়িতে বোমা রেখে আসেননি।” |