পথ দেখাচ্ছে রায়বরেলী।
সমাজের দরিদ্র ও অসচ্ছল মহিলাদের স্বনিযুক্তি প্রকল্পে যুক্ত করে ‘রাজীব গাঁধী মহিলা বিকাশ পরিযোজনা’ চালু হয়েছে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর রায়বরেলীতে। সেই ধাঁচে পুরুলিয়ায় ‘পুরোধা প্রকল্প’ চালু করে দিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
রায়বরেলীতে মহিলাদের ওই প্রকল্পের কাজকর্ম সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে কয়েক মাস আগে সেখানে গিয়েছিলেন রাজ্যের স্বনিযুক্তি দফতরের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো ও সচিব আরিজ আফতাব। আর এক দফায় রায়বরেলী যান পুরুলিয়ার জেলাশাসক এবং অতিরিক্ত জেলাশাসক। এ বার পাল্টা সফরে আসছেন রায়বরেলীর বিশেষজ্ঞেরা। পুরুলিয়ার মহিলাদের হাতেকলমে কাজ শেখাবেন তাঁরা।
দারিদ্রসীমার নীচের মহিলাদের স্বনির্ভর করার জন্য কেন্দ্রের পরিচালনায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ‘স্বর্ণজয়ন্তী গ্রাম স্বরোজগার যোজনা’ কর্মসূচি চলছে গোটা দেশে। সেই কর্মসূচিকেই মহিলাদের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য সম্প্রতি দেশের ১০০টি জেলার চারটি করে ব্লকে ‘জাতীয় গ্রামীণ জীবিকানির্বাহ মিশন’ প্রকল্প চালু হয়েছে। নতুন এই প্রকল্পের আওতায় আছে পশ্চিমবঙ্গের আটটি জেলার চারটি করে মোট ৩২টি ব্লক। মুখ্যমন্ত্রী তার নাম দিয়েছেন ‘আনন্দধারা’।
৩২টি ব্লকে সেই মূল প্রকল্পের সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের সব ব্লকে (৩৪১টি) এই উদ্যোগকে আরও কার্যকর ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যই ‘রায়বরেলী মডেল’কে বেছে নিয়েছে রাজ্য সরকার। রায়বরেলীর মতো পুরুলিয়ার পুরোধা প্রকল্পও হবে জাতীয় গ্রামীণ জীবিকানির্বাহ মিশনের অতিরিক্ত। রায়বরেলীর মতো এই প্রকল্পেও সরকারের সহযোগী ভূমিকায় রয়েছে নাবার্ড। আপাতত পুরুলিয়া-১ এবং বলরামপুর ব্লকে শুরু হচ্ছে পুরোধা প্রকল্পের কাজ। সাত কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে এই প্রকল্পে। তার মধ্যে রাজ্য সরকার দিচ্ছে চার কোটি, বাকি তিন কোটি টাকা আসবে নাবার্ড থেকে।
রায়বরেলীতে যে-প্রকল্প চলছে, সেটির বিশেষত্ব কী?
রাজ্য সরকারের এক মুখপাত্র জানান, রায়বরেলীতে প্রকল্পটি চালু হয়েছে কার্যত রান্নাঘর থেকে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে দারিদ্রসীমার নীচের তো বটেই, সেই সঙ্গে তার সামান্য উপরে থাকা অসচ্ছল পরিবারের মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর উপকারিতার কথা বোঝানো হচ্ছে। ১০ জন মহিলাকে নিয়ে তৈরি হচ্ছে এক-একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী। হাতের কাজ থেকে পশুপালন, সবই থাকছে এই প্রকল্পে। যিনি যে-ধরনের কাজে স্বচ্ছন্দ, তাঁকে সেই কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। শেখানো হচ্ছে, ব্যাঙ্ক থেকে কী ভাবে ঋণ নিতে হয় এবং কোন পদ্ধতিতে ব্যাঙ্কের সঙ্গে লেনদেন চালানো হয়। শুধু প্রশিক্ষণই নয়। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর উৎপাদিত পণ্য বিপণনের ব্যবস্থাও করে দিচ্ছে রায়বরেলীর প্রশাসন।
সেই পথে হাঁটতে তৈরি হচ্ছে পুরুলিয়াও। রাজ্য সরকারের এক মুখপাত্র জানান, দু’বছরের মধ্যে পুরুলিয়ার ২০টি ব্লকের পাঁচ হাজার স্বনিযুক্তি গোষ্ঠীর ৫০ হাজার মহিলা সদস্যাকে এই বিশেষ প্রকল্পের আওতায় আনার পরিকল্পনার হয়েছে। ভবিষ্যতে অন্যান্য জেলাগুলিতেও এই প্রকল্প রূপায়ণের ব্যবস্থা হবে।
এই প্রকল্পে কী কী কাজ হবে?
সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, পুরুলিয়ায় আপাতত সব্জি চাষ, হাঁস-মুরগি-শূকর পালন, লাক্ষা চাষের মতো কাজে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের উৎসাহিত করা হবে। উদ্দেশ্য, রোজগারের নানা ধরনের উপায়ের সঙ্গে যুক্ত করে পরিবার-পিছু মাসে অন্তত তিন হাজার টাকা আয়ের ব্যবস্থা করা। |