প্রধানমন্ত্রী গ্রাম-সড়ক যোজনায় পিছিয়ে পূর্ব |
ঠিকাদার মেলেনি, রাস্তা পাকা করার কাজ থমকে |
আনন্দ মণ্ডল • তমলুক |
অনুমোদনের পরেও ঠিকাদার না মেলায় প্রধানমন্ত্রী গ্রাম-সড়ক যোজনায় রাস্তা পাকা করার কাজ ধীর গতিতে চলছে পূর্ব মেদিনীপুরে। গত কয়েক বছরে জেলায় প্রায় ৭৫টি গ্রামীণ রাস্তা পাকা করার কাজের অনুমোদন থাকলেও, তার এক তৃতীয়াংশের ঠিকাদারই মেলেনি।
২০০৭-০৮ আর্থিক বছরে জেলায় ১৯টি গ্রামীণ রাস্তা পাকা করার অনুমোদন মিলেছিল। ওই সব রাস্তায় কাজের জন্য সাত-সাত বার টেন্ডার ডাকা হয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ১৩টি রাস্তায় মাত্র ঠিকাদার নিয়োগ হয়েছে। বাকি ৬টি রাস্তার এখনও ঠিকাদার মেলেনি। একই ভাবে
২০০৯-১০ আর্থিক বছরে জেলার ১৯টি রাস্তা অনুমোদন পায়। এ ক্ষেত্রেও একাধিকবার টেন্ডার হলেও এখনও পর্যন্ত মাত্র ৯টি রাস্তায় ঠিকাদার নিয়োগ হয়েছে। ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে ৩৭টির মধ্যে মাত্র ৪টি রাস্তার ঠিকাদার নিয়োগ হয়েছে। অর্থাৎ তিনটি আর্থিক বছর মিলিয়ে জেলার ৭৫টির মধ্যে এখনও পর্যন্ত মাত্র ২৬টি রাস্তার কাজের ঠিকাদার মিলেছে। একাধিকবার টেন্ডারের পরেও ঠিকাদার মেলেনি তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের সোয়াদিঘি থেকে মহাশ্বেতা পর্যন্ত গ্রামীণ রাস্তার। |
|
এমনই বেহাল পাঁশকুড়া থেকে নারায়ণ পাকুড়িয়া যাওয়ার রাস্তা। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস। |
ওই রাস্তার দু’ধারে রয়েছে ব্লকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাঁকটিয়া বাজার-সহ একাধিক হাট-বাজার ও হাইস্কুল। কিন্তু ঠিকাদার নিয়োগ না হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ওই রাস্তার কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে।
কেন মিলছে না ঠিকাদার? ঠিকাদাররা তিনটি যুক্তি দেখাচ্ছেন। প্রথমত, রাস্তা তৈরির সামগ্রীর দাম যে হারে ধরা হয় কার্যক্ষেত্রে তা দ্রুত বেড়ে গিয়ে নির্মাণ খরচ বেশি হয়ে যায়। ফলে লোকসানের ঝুঁকি থাকে।
দ্বিতীয়ত, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম-সড়ক যোজনায় রাস্তা তৈরির শর্ত হিসেবে রয়েছে প্রথম ৫ বছর মেরামতির দ্বায়িত্ব নিতে হবে। ঠিকাদারদের অভিযোগ, গ্রামীণ এই সব রাস্তায় ১৮ টনের বেশি মালপত্র নিয়ে গাড়ি চলাচল করা নিয়ম নয়। নজরদারির অভাবে সেই নিয়ম আর কেউ মানে না। ভারী-ভারী গাড়ি চলাচলের ফলে কিছু দিনের মধ্যেই রাস্তা ভেঙেচুরে একাকার। দোষ হয় ঠিকাদারদের। বারবার সারাতে গিয়ে খরচ হয়ে যায় প্রচুর। এ দিকে, না সারিয়েও উপায় নেই। কারণ ১০ শতাংশ টাকা বকেয়া থাকে। পাঁচ বছর ঠিক ভাবে মেরামত করলে তবেই সেই টাকা পাওয়া যায়। |
টেন্ডার হয়েছে |
গত ১৩ বছরে ১১৪টা রাস্তার |
মোট দৈর্ঘ্য |
৭৩৮.৬২ কিমি |
কাজ হয়েছে |
৯৯টির |
পাকা হয়েছে |
৬৫০.৫০ কিমি |
|
তৃতীয় ও শেষ কারণটিই অবশ্য প্রধান। রাস্তা পাকা করার সময় যতটা চওড়া হওয়া দরকার অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা থাকে না। এ ক্ষেত্রে রাস্তার জন্য জমি নিতে গেলে স্থানীয় বাধার মুখে পড়তে হয়। রাজনৈতিক মদতে অনেক সময় সেই বাধা বড় হয়ে দাঁড়ায়। পাশাপাশি তোলাবাজি-সহ স্থানীয় নেতাদের বিভিন্ন অন্যায় আবদার তো রয়েছেই।
এ দিকে, এতদিনেও রাস্তাগুলি না হওয়ায় জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে সিপিএম। বিরোধী দলনেতা তথা প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি নিরঞ্জন সিহি বলেন, ‘‘আমাদের সময়ে সাড়ে ৬ বছরে গ্রাম-সড়ক যোজনায় ৪৮৫ কিলোমিটার রাস্তা পাকা হয়েছিল। তৃণমূলের সময়ে গত ৫ বছরে প্রায় তাঁর অর্ধেক কাজও হয়নি। জেলা পরিষদের ব্যর্থতা ও উদ্যোগের অভাবে ঠিকাদাররা কাজে আগ্রহ প্রকাশ করছেন না।” জেলা পরিষদের সভাধিপতি গান্ধী হাজরা ঠিকাদার নিয়োগে সমস্যার কথা স্বীকার করলেও জেলা পরিষদের ব্যর্থতার অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “গ্রামে পাকা রাস্তা তৈরির ক্ষেত্রে বেশ কিছু ঠিকাদারের অনীহা রয়েছে। কারণ, টেন্ডারে এক রকম দরপত্র হলেও পরে কাজের সময় তা বেড়ে যায়।” তিনি আরও বলেন, “সড়ক যোজনার কাজে অভিজ্ঞতা রয়েছে এ রকম নতুন ঠিকাদারদের নিয়োগে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার জন্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।” |
|