নির্মল বিদ্যালয় অভিযান কর্মসূচির সার্থকতা নিয়ে প্রশ্ন
নির্জলা স্কুলে নিত্য ভোগান্তি
স্কুল চত্বরে জলের ব্যবস্থা নেই। মিড-ডে মিল রান্নার জন্য তাই আশপাশের বাড়ি থেকে জল চেয়ে আনেন রাঁধুনিরা। খোদ ঝাড়গ্রাম শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সত্যবানপল্লি এলাকার রবীন্দ্রনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এটাই রোজনামচা। তবুও নির্মল বিদ্যালয় সপ্তাহ পালন হচ্ছে স্কুলে। যেখানে পানীয় জল মেলে না, সেখানে এই কর্মসূচির সার্থকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষকদের মধ্যেই।
স্কুল ভবনের দু’টি ঘর ও এক ফালি বারন্দায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণির পাঁচটি ক্লাস নেওয়া হয়। ক্লাসঘরের মধ্যেই থাকে মিড-ডে মিলের চাল-ডাল। একটি ক্লাস ঘরের একপাশে আলমারি ও চেয়ার টেবিল পেতে বসে প্রশাসনিক কাজ সারেন প্রধান শিক্ষক। ৭৪ জন পড়ুয়ার সিংহভাগই দরিদ্র পরিবারের। শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা ৪। স্কুলে ছাত্রীদের শৌচাগার থাকলেও সর্বসাধারণের শৌচাগারটি নেই। পাতকুয়োর জলই শৌচাগারে ব্যবহার করা হয়। স্কুলে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। নেই প্রাচীর।
গত বছর এপ্রিলে ঝাড়গ্রাম পশ্চিম চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতরে জমা দেওয়া ‘নির্মল বিদ্যালয় অভিযান’ কর্মসূচি সংক্রান্ত প্রতিবেদনে স্কুলের প্রধান শিক্ষক অরূপ মহাপাত্র আক্ষেপ করে লিখেছিলেন, ‘সমস্ত উদ্যোগই আড়ম্বরে পরিণত হয়, যখন দেখা যায় বিদ্যালয়ে কোনও রকম জলের ব্যবস্থা নেই।’ তারপর এক বছর কেটে গেলেও হুঁশ ফেরেনি প্রশাসনের।
জলের বোতল হাতে রবীন্দ্রনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
প্রধান শিক্ষক বলেন, “২০০৭ সালে স্কুল চালু হওয়ার পর পুরসভা একটি অসম্পূর্ণ পাতকুয়ো করে দিয়েছিল। কিন্তু পরিত্যক্ত পাতকুয়োটির জল ব্যবহারের অযোগ্য। গত কয়েক বছর ধরে পুর-কর্তৃপক্ষ-সহ প্রশাসনের সব মহলকে জলের সমস্যার কথা জানানো হয়েছে। লাভ হয়নি। এ বারও জলের সমস্যার মধ্যেই পড়ুয়াদের নিয়ে নির্মল বিদ্যালয় সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে।”
স্কুলের সহ-শিক্ষক মহেশ্বর পাতর, হীরক গিরি ও সহ শিক্ষিকা চম্পা চন্দ্র ভৌমিক জানালেন, “খাওয়ার আগে ছাত্রছাত্রীদের ভাল করে সাবান দিয়ে হাত ধুতে শেখাচ্ছি। অথচ স্কুলে পরিস্রুত জলের ব্যবস্থা নেই। অভিভাবকেরা মাঝে মধ্যেই এসে প্রশ্ন করেন, কেন স্কুলে নলকূপ নেই। কিন্তু আমরা নিরুপায়।”
বৃহস্পতিবার সকালে স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, হাতে বড়-বড় জলের বোতল নিয়ে পড়ুয়ারা স্কুলে আসছে। দ্বিতীয় শ্রেণির তানিয়া নামাতা, সুদীপ্ত ঘোষ, তৃতীয় শ্রেণির শিবা রানা, ছবি দোলই, চতুর্থ শ্রেণির ভাগ্যশ্রী মাহাতো ও সাহেব হেমব্রম-দের কথায়, “গরমে বেশি তেষ্টা পায়। তাই বাড়ি থেকে আনা জল অনেক সময় ফুরিয়ে যায়।’’ স্কুলের শিশু সংসদের ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী’ চতুর্থ শ্রেণির সুধা মল্লিকের কথায়, “এ বার আমরা শিশু সংসদের পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে জলের দাবি জানাব।”
স্কুল প্রাঙ্গণের একটি চালাঘরে মিড-ডে মিল রান্না করছিলেন স্থানীয় স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীর মালতী দোলই, কল্যাণী সিংহরা। বালতি করে জল বয়ে আনছিলেন তাঁরা। মালতীদেবীরা জানালেন, পাতকুয়োর জল ব্যবহার করা যায় না। কিছুটা দূরে পুরসভার টাইম কল আছে বটে। কিন্তু সেখানে অনিয়মিত জল আসে। অগত্যা স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে পালা করে জল চেয়ে নিয়ে আসা হয়।
সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক শাশ্বতী দাস জানান, স্কুল প্রাঙ্গণে জলের বন্দোবস্ত করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট এলাকার পুরসভা অথবা পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের। পাশাপাশি, অনগ্রসর এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পেও সরাসরি জলের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর জল সমস্যা সরেজমিনে দেখে গিয়েছেন ঝাড়গ্রাম পুরসভার পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার। তারপরেও কিছু হয়নি। সিপিএম পুরপ্রধান প্রদীপবাবুর অবশ্য বক্তব্য, “পুরসভার তরফে ওই এলাকার বস্তিবাসীদের জন্য শীঘ্রই একটি মিনি ডিপ টিউবওয়েল করা হবে। সেখান থেকে জল নিতে পারবেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।” কেবলমাত্র স্কুলের জন্য স্কুল প্রাঙ্গণে নলকূপ বসিয়ে বা রিজার্ভার করে পরিস্রুত জলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না কেন? প্রদীপবাবুর জবাব, “ওই স্কুলে পড়ুয়া সংখ্যা কম। তাই পৃথক ব্যবস্থা করা হয়নি।”
পরিসংখ্যান বলছে, ২০১১ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত জেলার ১,৪৮৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে। মাত্র ১৩৬টি প্রাথমিক স্কুলে পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বলা বাহুল্য, সেই তালিকায় নেই রবীন্দ্রনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.