গত বছর কর্মসূচির নাম ছিল ‘নির্মল বিদ্যালয় অভিযান’। আর এ বছর নাম দেওয়া হয়েছে ‘নির্মল বিদ্যালয় সপ্তাহ’। তবে উদ্দেশ্য একই। স্কুলস্তর থেকে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সচেতনতা গড়ে তোলা। সোমবার থেকে শুরু হয়েছে রাজ্যের শিক্ষা দফতর ও সর্বশিক্ষা মিশনের উদ্যোগে বিশেষ এই সপ্তাহ পালন। চলবে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত। এ ক’দিন প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক, প্রতিটি স্কুলে নানা কর্মসূচি হবে। ইতিমধ্যে পদযাত্রা, সচেতনতা শিবির, সাফাই অভিযান শুরুও হয়েছে। কাল, শুক্রবার জেলার প্রতিটি স্কুলে হবে বসে আঁকো প্রতিযোগিতাও। সর্বশিক্ষা মিশন প্রকল্পের জেলা আধিকারিক শাশ্বতী দাস বলেন, “এর ফলে ছাত্রছাত্রীরাই উপকৃত হবে। তাদের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সচেতনতা গড়ে উঠবে।” |
ইতিমধ্যে শিক্ষার অধিকার আইন চালু হয়েছে। ওই আইনে এমন একটি পাঠ্যক্রমের কথা বলা হয়েছে যা শিশুদের ভয় ও অস্বস্তিকর পরিবেশ থেকে মুক্তি দেয়। যেখানে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ থাকবে। নতুন নতুন কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষা দেওয়া হবে। এই আইন অনুযায়ী ৪ থেকে ১৪ বছর বয়সী সব শিশু বিভিন্ন বিনোদনের মাধ্যমে স্বাধীন মত প্রকাশ করতে পারবে। সেই মতোই ‘নির্মল বিদ্যালয় সপ্তাহ’ কর্মসূচির আয়োজন। এর ফলে বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে শিশুরা তাদের প্রতিভা তুলে ধরার সুযোগ পাবে। বুধবারই যেমন শালবনি থানার ভাদুলতা হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকেরা সাফাই অভিযানে সামিল হন। স্কুল ও তার আশপাশের এলাকার আবর্জনা পরিষ্কার করেন। নিকাশি নালাও সাফাই করা হয়। প্রধান শিক্ষক অমিতেশ চৌধুরীর কথায়, “স্কুলস্তর থেকে যদি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সচেতনতা গড়ে তোলা যায়, তাহলে সমাজের ভালো হবে।” একই বক্তব্য মেদিনীপুর কোতয়ালি থানার অন্তর্গত কেশবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাধন দে-র কথায়, “প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর মধ্যে প্রতিভা রয়েছে। এই কর্মসূচির ফলে এক দিকে যেমন তাদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে উঠবে, অন্য দিকে সেই প্রতিভারও প্রকাশ ঘটবে।” নিয়মিত শৌচাগার পরিষ্কার করা, আবর্জনা সঠিক জায়গায় ফেলা ও নিয়মিত সাফাই করা, বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এ বারের ‘নির্মল বিদ্যালয় সপ্তাহ’ পালন কর্মসূচিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তৈরি হয়েছে নানা স্লোগান। যেমন, ‘দল বেঁধে স্কুলে যাই, সব বই পড়া চাই’। জেলা শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মধ্যে বইয়ের প্রতি একটা ভীতি থাকে। ওই ভীতি কাটানো জরুরি। ওদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।” গত বছর এই কর্মসূচিতে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা আঁকা প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছিল। এ বার নবম-দশম শ্রেণির পড়ুয়ারাও যোগ দিতে পারবে। শ্রেণি-ভিত্তিক বিষয় ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণির অঙ্কনের বিষয় ‘সবর্দাই থাকি পরিচ্ছন্ন’। তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির বিষয় ‘সবাই মিলে স্কুলকে পরিচ্ছন্ন রাখি।’ পঞ্চম-ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির বিষয় ‘আমার কল্পনায় এক নির্মল বিদ্যালয়’। আর অষ্টম-নবম-দশম শ্রেণির আঁকার বিষয় ‘বর্জ্য পদার্থ বাড়িতে ও স্কুলে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলি।’ গত বছর ৭ লক্ষেরও বেশি ছাত্রছাত্রী এই প্রতিযোগিতা যোগ দিয়েছিল। ৪টি বিভাগের ৩টিতেই পশ্চিম মেদিনীপুর প্রথম স্থান অর্জন করে। খুদে শিল্পীদের আঁকা ছবি সর্বশিক্ষা মিশনের ক্যালেন্ডারে জায়গা করে নেয়। |