পঞ্চায়েতে প্রার্থী বাছাই
বহিরাগত বনাম ভূমিপুত্রদের কাজিয়া তীব্র তৃণমূলের অন্দরে
তৃণমূলের অন্দরে ‘বহিরাগত’ বনাম ‘ভূমিপুত্র’দের লড়াইটা ক্রমেই জটিল হচ্ছে হুগলিতে।
‘বহিরাগত’ অর্থাত্‌ জেলার ১০ জন তৃণমূল বিধায়ক (পাঁচ জন কলকাতার বাসিন্দা। বাকি পাঁচ জন জেলার হলেও যে বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত, সেখানকার বাসিন্দা নন)। ‘ভূমিপুত্র’ অর্থাত্‌ জেলার বিভিন্ন ব্লকের তৃণমূল সভাপতি এবং স্থানীয় নেতারা। লড়াইটা পঞ্চায়েত ভোটে দলের টিকিট বিলি নিয়ে।
পঞ্চায়েত ভোটের জট কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ালেও বিভিন্ন জেলায় ইতিমধ্যেই প্রার্থী নির্বাচন হয়ে গিয়েছে শাসক দলের। শুরু হয়ে গিয়েছে দেওয়াল-লিখনও। কিন্তু হুগলিতে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী বাছাই নিয়েই কাজিয়া তুঙ্গে। কেননা, সম্প্রতি দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি চন্দননগরে একটি দলীয় বৈঠকে ঘোষণা করেন, পঞ্চায়েত ভোটে এ বার প্রার্থী নির্বাচনের মূল দায়িত্ব সামলাবেন এলাকার বিধায়কেরা। এর কারণ হিসেবে সুব্রতবাবুর ব্যখ্যা ছিল, বিধায়কদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তাঁরাই সরাসরি দলনেত্রীকে এলাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে সঠিক ভাবে অবহিত করতে পারবেন। এই ঘোষণা থেকেই গোলমালের সূত্রপাত।
তৃণমূলের সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী, প্রতিটি ব্লকেই এক জন করে দলীয় সভাপতি রয়েছেন। সুব্রতবাবুর ওই ঘোষণার পরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকটি ব্লকের তৃণমূল সভাপতি পঞ্চায়েত ভোটে তাঁদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা মনে করছেন, ওই ঘোষণা করে আসলে তাঁদের উপেক্ষা করা হল। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তাঁদের এবং এলাকার নেতাদের মতামত গুরুত্বহীন হয়ে গেল। ক্ষোভ এতটাই তীব্র হয়েছে যে, সম্প্রতি দিন কয়েকের ব্যবধানে প্রার্থী বাছাই নিয়ে আলোচনা চলাকালীন মশাট, কানাইপুর, নৈটি এবং ফুরফরায় বিধায়কদের অনুগামী নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের হাতাহাতিও হয়। স্থানীয় ভাবে নানা বৈঠকও তপ্ত হচ্ছে প্রায় রোজই।
এই পরিস্থিতি নিয়ে সুব্রতবাবু অবশ্য আর কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, “যা বলার চন্দননগরেই বলেছি। নতুন করে কিছু আর বলব না।” দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত নিজে সপ্তগ্রামের বিধায়ক। চুঁচুড়ার বাসিন্দা। সমস্যা যে হচ্ছে তা মেনে নিয়ে তিনি বলেন, “আমি দলে কোনও রকম ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে জেলার প্রত্যেক ব্লক সভাপতিকে রেখে এবং বিধায়কদের চেয়ারম্যান করে শুধুমাত্র পঞ্চায়েত নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি কমিটি তৈরি করেছি। ওই কমিটিই প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে নির্বাচন সংক্রান্ত সব কাজ করছে।”
হুগলিতে মোট বিধায়কের সংখ্যা ১৮। তার মধ্যে ১৬ জন তৃণমূলের। এর মধ্যে ১০ জনকে ‘বহিরাগত’ হিসেবেই দেখে জেলা তৃণমূলের একাংশ। যে দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রে বাম বিধায়ক রয়েছেন, তার মধ্যে পাণ্ডুয়ায় তৃণমূলের তরফে প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে হুগলির সাংসদ রত্না দে নাগকে। গোঘাটের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি দিলীপ যাদবকে।
কী বলছেন ‘বহিরাগত’ তৃণমূল বিধায়কেরা?
শ্রীরামপুরের বিধায়ক সুদীপ্ত রায় বরাহনগরের বাসিন্দা। তিনি বলেন, “ব্লকে দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে যাঁদের জেতার সম্ভাবনা সব চেয়ে বেশি তাঁদেরই প্রার্থী করা হবে।” চাঁপদানির বিধায়ক মুজফ্ফর খান কলকাতার বাসিন্দা। তিনি বলেন,“প্রথমে অঞ্চল, তারপর ব্লক, এর উপর বিধায়ক, সাংসদেরা রয়েছেন। সবাই মিলেই টিকিট বিলির কাজ করা হবে। তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের বিষয়টি এখন আদালতের বিচার্য।”
কিন্তু ‘বহিরাগত’ বিধায়কেরা সকলকে নিয়ে চলার কথা বললেও বাস্তবে তা হচ্ছে না বলেই মত ব্লক স্তরের অনেক তৃণমূল নেতারই। যেমন, খানাকুলের এক তৃণমূল নেতা বলেন, “সকলের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হলে প্রার্থী বাছাই নিয়ে কোনও গোলমালই হত না। কিন্তু তা হচ্ছে না।” পোলবার এক নেতা বলেন, “গোটা বছর দলের হয়ে মাঠে-ময়দানে আমরা ঘাম ঝরাচ্ছি। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনে গুরুত্বহীন হয়ে গেলাম কেন তা মাথায় ঢুকছে না। ঠিক আছে, আমরা যখন কেউ নই, তখন ওঁরাই ভোট করাক। আমাদের ছুটি দেওয়া হোক।” নৈটিতে কেউ কেউ নির্দল হিসেবে ভোটে লড়ার বিষয়ে মনস্থ করে ফেলেন। তাঁদেরই এক জন বলেন, “দল প্রার্থী না করলে জোড়া পাতা প্রতীকে দাঁড়িয়ে পড়ব।”
পঞ্চায়েত ভোটের জট কবে কাটবে, তা এখনও অনিশ্চিত। কিন্তু সেই জট কাটার পরেও হুগলিতে প্রার্থী বাছাই নিয়ে জটিলতা থাকলে তা যে ভাল হবে না, মেনে নিচ্ছেন জেলা তৃণমূলের অধিকাংশ নেতাই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.