পুলিশের আঠারো ঘা এড়াতে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতে হল এক দম্পতিকে।
এবং আদালতের হস্তক্ষেপেই অবশেষে একমাত্র সন্তানকে নিয়ে সুখে ঘরসংসার করার আশ্বাস পেলেন মহসিন আলি খান ও রাজুনা খাতুন। হাওড়ার আমতা থানা এলাকার তাজপুরের ওই দম্পতিকে আর কোনও রকম পুলিশি হেনস্থার শিকার হতে হবে না। মহসিনের নামে পড়ে থাকা মামলাগুলি বৃহস্পতিবার খারিজ করে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। ফলে আর ছুতোনাতায় তাঁদের উত্ত্যক্ত করার সুযোগ পাবে না পুলিশ।
গৃহশিক্ষক মহসিনের সঙ্গে ২০০৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পালিয়ে গিয়েছিলেন রাজুনা। দিঘায় চার দিন ছিলেন তাঁরা। সেই সময়েই রাজুনা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। বাড়ি ফিরে আসার পরে তাঁর গর্ভপাত হয়। আমতা থানায় মহসিনের বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন রাজুনার বাবা-মা। গ্রেফতারি এড়াতে মহসিন হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন জানান। বিচারপতি জানিয়ে দেন, মহসিন যদি রাজুনাকে বিয়ে করেন, তা হলেই তাঁকে আগাম জামিন দেওয়া হবে। হাইকোর্টের শর্তে রাজি হন মহসিন। তার পরে রাজুনার সঙ্গে তাঁর বিয়েও হয়ে যায়।
রাজুনার পরিবার এই নিষ্পত্তি মেনে নিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ ছাড়ার পাত্র নয়। বিয়ের পর থেকেই পুলিশ মহসিনকে হেনস্থা করতে শুরু করে পুরনো অভিযোগের সূত্র ধরে। ইতিমধ্যে ওই দম্পতির একটি সন্তানও হয়েছে। পুলিশি উৎপীড়ন এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, মহসিন-রাজুনা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হন। আবেদনকারীদের আইনজীবী দেবব্রত চট্টোপাধ্যায় বিচারপতিকে জানান, আদালতের নির্দেশ অনুসারেই তাঁর মক্কেলরা নিয়ম মেনে বিয়ে করে ঘরসংসার করছেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে পুলিশ মহসিনকে হেনস্থা করেই চলেছে। সব শোনার পরে বিচারপতি কানোয়ালজিৎ সিংহ অহলুওয়ালিয়া হাওড়ার পুলিশ সুপারকে বিষয়টির তদন্ত করে রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে মহসিনকে বলেন, বৃহস্পতিবার তিনি যেন স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে আদালতে হাজির থাকেন।
হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে দু’বছরের মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে মহসিন এ দিন হাইকোর্টে হাজির হন। বিচারপতি কানোয়ালজিৎ সিংহ অহলুওয়ালিয়া মহসিন এবং রাজুনার সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন। জানতে চান, তাঁরা সুখে আছেন কি না। দু’জনেই জানান, তাঁরা সুখেই আছেন। তার পরেই বিচারপতি জানান, বিয়ের আগে মহসিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে যে-ক’টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল, সবই খারিজ করা হল। বিচারপতি একই সঙ্গে নির্দেশ দিয়েছেন, ওই দম্পতি আর যাতে কোনও ভাবেই পুলিশের হাতে হেনস্থা না-হন, তা নিশ্চিত করতে হবে পুলিশকেই। |