|
|
|
|
অরুণাচলে নিশ্চিহ্ন তৃণমূল, সঙ্কট অসম-মণিপুরেও |
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি |
ছিল ৫, পরে তা বেড়ে হল ৬। কিন্তু তারপরেই ফের ১। এবং শেষ পর্যন্ত হাতে রইল শূন্য।
উত্তর-পূর্বের ভোট-ময়দানে নেমে উপজাতি অধ্যূষিত অরুণাচল প্রদেশে আশাতীত ভাবে ৫টি আসন দখল করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। গত বছর, একটি আসনে বিতর্কিত ফলাফলের বিষয়ে গৌহাটি হাইকোর্ট তৃণমূল প্রার্থীর পক্ষে রায় দেয়। বিধায়কের সংখ্যা পৌঁছে যায় ছয়ে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সেই রায় স্থগিত করে দেয়। ফের পাঁচ। তার পরেই চার তৃণমূল বিধায়ককে টেনে নেয় কংগ্রেস। এবং গত কাল অরুণাচলের সবেধন নীলমণি তৃণমূল বিধায়কটিও দল ছেলে পিপল্স পার্টি অফ অরুণাচলে যোগ দিলেন।
শুধু বিধায়কহীন হওয়াই নয়, তৃণমূলের অস্তিত্বও আপাতত লোপ পেল অরুণাচলে। কারণ, খোদ প্রদেশ সভানেত্রী টোকো শীতল নিজেও পদত্যাগ করে দল ভাঙার কথা ঘোষণা করেছেন। এখন উত্তর-পূর্বে মণিপুরের সাত জন ও অসমের এক জন বিধায়ক রইলেন তৃণমূলের হাতে। অরুণাচল, অসম, মেঘালয়, ত্রিপুরার স্থানীয় তৃণমূল নেতা ও সমর্থকদের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার পরেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তাঁর দলের কেউ উত্তর-পূর্বে সংগঠন মজবুত করার দিকে সামান্য আগ্রহও দেখাননি।
২০০৯ সালে, নাহারলাগানের হোটেলে ঘাঁটি গেড়েছিলেন সৌগত রায়, সোমেন মিত্র, সুলতান আহমেদরা। তখনও পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কিন্তু বিরোধী দল। অরুণাচল প্রদেশের প্রত্যন্ত পাহাড়ি জেলা তো দূরের কথা, খোদ ইটানগরেই তৃণমূলের নাম বেশি মানুষ জানতেন না। তৃণমূলের প্রার্থীরা নিজেদের খরচে প্রচার চালিয়েছিলেন। এমনকী পতাকা, ফেস্টুনও কলকাতা থেকে পাঠানো হয়নি। তবে অরুণাচলের ভোটে রাজনৈতিক বোধ নয়, বেশি কাজ করে ‘উপজাতীয় তাস’ ও ‘টাকা’। তাই প্রাক্তন কংগ্রেসী, টিকিট না পাওয়া ব্যবসায়ী, বিক্ষুব্ধ প্রাক্তন বিধায়করা তৃণমূলের টিকিটে লড়তে নামেন। জেতেন টাপুক টাপু, তানি লোফা, কারিয়া বাগাং, কামথক লোয়াং, লায়েতা উমব্রে। গত বছর,পশ্চিম আলং-এর বিতর্কিত আসনে তৃণমূলের দাতের পাদুকে জয়ী ঘোষণা করে গৌহাটি হাইকোর্ট। কংগ্রেসের প্রার্থী তথা পরিষদীয় সচিব গাদাম এতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দেয়। এরপর মমতা ইউপিএ থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করার পরেই টাপুক টাপু, তানি লোফা, কারিয়া বাগাং, কামথক লোয়াং তৃণমূল ছেড়ে সরাসরি কংগ্রেসে যোগ দেন। বাকি ছিলেন উমব্রে। তিনিও গত কাল সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলন করে জানান, তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে তিনি আঞ্চলিক দল পিপিএ-তে যোগ দিচ্ছেন। উমব্রে একা নন, প্রদেশ তৃণমূল সভানেত্রী টোকো শীতলও পিপিএতে যোগ দিলেন। তিনি সাফ জানান, “কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ক্রমাগত অবজ্ঞা, অবহেলা সহ্য করে দল চালিয়ে যাওয়া অর্থহীন। তৃণমূলের বাকি বিধায়ক ও সদস্যদের নিয়ে তাই আমাদের ভূমিজ দলে যোগ দেওয়াই ভাল।” সামনের মাসে অরুণাচলে পঞ্চায়েত নির্বাচন ও আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে এ রাজ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল তৃণমূল। খানিকটা হলেও শক্তি বাড়াল পিপিএ। বর্তমান ৬০ সদস্যের বিধানসভায় কংগ্রেসের ৫৫ জন ও পিপিএ-র ৫ জন বিধায়ক রয়েছে।
দল ছেড়ে শীতল যে অভিযোগ ছুঁড়ে দিলেন অরুণাচল এবং অসমের তৃণমূল নেতানেত্রীরাও তার সঙ্গে এক মত। অসমের একমাত্র তৃণমূল বিধায়ক দীপেন পাঠক সরকার গড়ার ক্ষেত্রে কংগ্রেসকে সমর্থন করেছেন। দলের অন্য নেতাদের অভিযোগ, কংগ্রেসের ছত্রছায়ায় নিজের সম্পদের বিস্তার ঘটানো ছাড়া দলকে মজবুত করতে তিনি কোনও ভূমিকাই নেননি। বিধানসভায় ভরাডুবির পরে টাকা তছরূপ-সিন্ডিকেট-ভুয়ো প্রতিশ্রুতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগে তৃণমূলের অবস্থা অসমে কার্যত ছন্নছাড়া। রাজ্য থেকে বারবার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে হাল ধরার আবেদন জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। সদ্য হয়ে যাওয়া মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনে প্রথমে লড়ার কথা ঘোষণা করেছিল তৃণমূল। ডেরেক ও’ব্রায়েন নাগাল্যান্ডে, মুকুল রায় মেঘালয়ে আসেন। কিন্তু বিস্তর টালবাহানার পরে তিন রাজ্যের কোথাও লড়েনি তৃণমূল। তৃণমূলের টিকিট প্রত্যাশী স্থানীয় নেতানেত্রীদের হেনস্থা হতে হয়। মণিপুরে আপাতত তৃণমূলই প্রধান বিরোধী দল। সাত বিধায়ক রয়েছে তৃণমূলের হাতে। প্রদেশ নেতৃত্বের মতে, কেন্দ্রীয় তৃণমূল নেতৃত্ব পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে এতটাই ব্যতিব্যস্ত যে উত্তর-পূর্বে নজর দেওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আন্তরিকতা না থাকলে, অদূর ভবিষ্যতে মণিপুরের অবস্থাও অরুণাচলের মতোই হতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা। |
|
|
|
|
|