টেকনিশিয়ান্স স্টুডিও-র ওই ফ্লোরেই কয়েক বছর আগে আগুনের জেরে চিত্র পরিচালক স্বপন সাহার একটি ছবির শ্যুটিং ভেস্তে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার ঠিক সেখানেই অগ্নি-সুরক্ষার বিষয়ে টিভি বিনোদনের প্রযোজক ও স্টুডিও-মালিকদের কড়া বার্তা দিল রাজ্য সরকার। সরকারি টেলি অ্যাকাডেমির কর্তা তথা রাজ্যের যুব-কল্যাণমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, আর ঠিক দু’মাস বাদে, ১৫ জুনের পরে দমকল-পুরসভার ছাড়পত্র ছাড়া কোথাও কোনও সেটেই শ্যুটিং করা যাবে না।
সপ্তাহখানেক আগে ম্যুর অ্যাভিনিউয়ের দাসানি স্টুডিওয় একটি টিভি গেম শো-র ফ্লোরে অগ্নিকাণ্ডের পরেই নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য সরকার। বিস্তর যন্ত্রপাতি-কলাকুশলী নিয়ে শ্যুটিং চলাকালীন নিরাপত্তায় এক ফোঁটাও আপস করা যাবে না বলে বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়। স্টুডিওমালিক-প্রযোজকদের সঙ্গে প্রশাসনের কর্তাদের এ দিনের বৈঠক তারই পরিণতি। অভিযোগ, স্টুডিওগুলির মধ্যে ভগ্নাংশমাত্র অগ্নি-বিধি মেনে চলে। এ ছাড়া, কলকাতা ও শহরতলিতে বিক্ষিপ্ত ভাবে বিভিন্ন বাড়িতে শ্যুটিং হয়। তাদের নিরাপত্তার হাল নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। আগুনের ঘটনা তো বারংবার ঘটেইছে, বিপজ্জনক ভাবে নির্মিত বাড়ি শ্যুটিং চলাকালীন ভেঙে যাওয়ারও নমুনা রয়েছে। অরূপবাবু এ দিন বলেছেন, নিরাপত্তার নিয়ম না-মেনে কোথাওই শ্যুটিং করা যাবে না। ১৫ জুনের মধ্যে প্রতিটি স্টুডিওয় ট্রেড লাইসেন্স, দমকলের ছাড়পত্র ও নির্মাণ-নকশার ছাড়পত্র হাতে থাকতে হবে।
কিন্তু স্টুডিও-ফ্লোরের বাইরে কোনও বাগানবাড়ি, অনুষ্ঠানবাড়ি বা ফ্ল্যাটে শ্যুটিং হলে সুরক্ষার বিষয়টা কী ভাবে যাচাই করা হবে? অরূপবাবু বলেন, সে ক্ষেত্রেও প্রযোজকদের উপরেই দায়িত্ব বর্তাবে। কোনও আবাসনে শ্যুটিং হলে সেখানকার অন্য বাসিন্দা বা মালিকের কাছ থেকে সম্মতি আদায় করতে হবে প্রযোজকদের। যেখানে এত লোকের জীবনের ঝুঁকি, সেখানে সব শ্যুটিংস্থলের খামতি খতিয়ে দেখে প্রযোজককেই পুলিশ ও প্রশাসনের ছাড়পত্র নিতে হবে। নানা ধরনের বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম, দাহ্য পদার্থ নিয়ে কলাকুশলী-শিল্পীরা কাজ করেন সেখানে আগাম সতর্কতা জরুরি।
যাঁদের কথা ভেবে এত নিয়ম-কানুন জারি হচ্ছে, তাঁরা কী বলছেন? বোড়ালের কাছে একটি স্টুডিওর কর্ণধার প্রীতিময় চক্রবর্তী রাজ্য সরকারের ভূমিকাকে স্বাগত জানাচ্ছেন। তাঁর দাবি, “আমার স্টুডিওয় নিরাপত্তার ব্যাপারে কোনও আপস নেই। দু’মাসের মধ্যে বাকিরাও এটুকু করতে পারবেন।” এমনিতে সেটের ক্ষতি হতে পারে ভেবেও জলের জোগান রাখা নিয়ে স্টুডিও-মালিক বা প্রযোজকদের কারও কারও আপত্তি থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের প্রস্তাব বিবেচনায় সায় দিয়েছে প্রযোজকদের সংগঠন ও বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের কর্তা।
‘ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন অফ টেলিভিশন প্রোডিউসার্স’ (ডব্লিউবিএটিপি)-এর সম্পাদক ইন্দ্রনীল সেন যেমন বলেন, “আমাদের সদস্যদের কী কী করতে হবে, ই-মেলে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।” আর একটি সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ টেলিভিশন অ্যাফিলিয়েট্স’ (ডব্লিউবিএটিএ)-এর সহ-সভাপতি বিশ্বজিৎ গুহও প্রশাসনকে পুরোপুরি সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রশাসনের তরফে দমকলের অফিসার-অন-স্পেশাল ডিউটি দেবপ্রিয় বিশ্বাস সমন্বয়কারী আধিকারিকের ভূমিকায় থাকছেন। ঠিক হয়েছে, পুরসভার তরফে আগামী ৫ মে-র মধ্যে স্টুডিও-বিষয়ক একটি সমীক্ষা সারা হবে।
সরকারি জায়গা, টেকনিশিয়ান্স স্টুডিও-ও কিন্তু দীর্ঘদিন ছিটেফোঁটা সুরক্ষা ছাড়া বিপজ্জনক ভাবে চলেছে। মাস ছয়েক হল, তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের উদ্যোগে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। মেরামতির কাজ করছে পূর্ত দফতর। তথ্য-সংস্কৃতি সচিব অত্রি ভট্টাচার্য বলেন, “কয়েকটা ফ্লোরে অনেকটাই মেরামতি হয়েছে। কাজ চলছে বলেই স্টুডিওয় সর্বত্র কাজ হচ্ছে না। কয়েক মাসের মধ্যে টেকনিশিয়ান্স স্টুডিও অন্য চেহারায় ফিরবে।”
|