মামলার জের, পুরসভার কাজ শিকেয়
রাজনৈতিক দলের গোষ্ঠী-কোন্দল। আর তার জেরে সমস্যায় পড়েছেন সিউড়ির বাসিন্দারা। পুরসভা বা নিজেদের বাড়িতে নয়, সিউড়ির পুরপ্রধান থেকে কাউন্সিলরদের একটি বড় অংশকে দেখা যাচ্ছে কলকাতায়। ফলে দরকারি কাগজে সই বা শংসাপত্র নেওয়া বিভিন্ন প্রয়োজনে এসে খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে সিউড়ির বাসিন্দাদের। অভিযোগ, ব্যাহত হচ্ছে পুরসভার বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কাজও। একই কারণে নির্দিষ্ট সময়ের থেকে অনেক পরে বেতন পাচ্ছেন পুরসভার অস্থায়ী কর্মীরাও।
সম্প্রতি তৃণমূল পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অনিয়ম-সহ নানা অভিযোগ তুলে অনাস্থা এনেছিলেন দলেরই ছয় কাউন্সিলর। সেই অনাস্থা প্রস্তাবে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন পাঁচ কংগ্রেস কাউন্সিলরও। কিন্তু ভোটাভুটির দিন, ফল দাঁড়ায় ৯-৯। দু’ পক্ষই দাবি করে ফলাফল গিয়েছে তাঁদেরই দিকে। পদ ধরে রাখতে পেরেছি দাবি করে উজ্জ্বলবাবুরা কিছুদিন পরে বাজেট অধিবেশনও ডেকে ফেলেন। তৃণমূলেরই কাউন্সিলর দীপক দাসের নেতৃত্বে ‘বিদ্রোহী’ কাউন্সিলরেরা কিন্তু ওই অধিবেশনকে ‘অবৈধ’ দাবি করে বয়কট করেন। অনাস্থা ভোটের ফল নিয়ে দীপকবাবুরা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলাও ঠুকে বসেন। যার জেরে দু’পক্ষকেই বারবার ছুটতে হচ্ছে কলকাতায়। তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর এই লড়াইয়ে নাকাল হচ্ছেন পুরবাসী।
‘রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট’ পাওয়ার জন্য বেশ কয়েকদিন ধরে পুরসভায় এসে হন্যে হয়ে ঘুরছেন সিউড়ির নাসির্ং ট্রেনিং প্রার্থীরা। কিন্তু যাঁর থেকে ওই সার্টিফিকেট মিলবে, সেই পুরপ্রধান বা উপপুরপ্রধান দু’জনকে পাওয়া ভার হয়ে উঠেছে তাঁদের পক্ষে। দু’জনেই মামলার কারণে প্রায়দিনই থাকছেন কলকাতায়। গত শুক্রবারই ওই সার্টিফিকেট নিতে এসে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে ৬ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকজনকে। তাঁদেরই একজন ফাল্গুনি কাহার-এর অভিজ্ঞতা, “সার্টিফিকেটের জন্য এসেছিলাম। কিন্তু পুরকর্মীরা বলছেন, পুরপ্রধান-উপপুরপ্রধানরা সবাই কলকাতায়। কবে ফিরবেন, কেউ বলতে পারছেন না। কী যে হবে, কিছুই ভেবে পাচ্ছি না।” আবার সংখ্যালঘুদের জন্য বিধবা ও বার্ধক্য অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে ওয়াকফ বোর্ড। ওই অনুদান পেতে গেলে কাউন্সিলরদের শংসাপত্র লাগবে। কিন্তু দুই গোষ্ঠীর বেশ কয়েক জন কাউন্সিলর হাইকোর্টের মামলার জন্য প্রায়দিনই কলকাতায় চলে যাচ্ছেন। ফলে শংসাপত্র জোগাড় করতে সমস্যায় পড়ছেন সিউড়ি শহরের বিপিএল তালিকাভুক্ত সংখ্যালঘুরা। পুরপ্রধানের নিজের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ফতেমা বেগম, উপপুরপ্রধানের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জাকেরা বিবি কিংবা প্রাক্তন পুরপ্রধান কংগ্রেসের তপন শুকুলের (পুরপ্রধানের বিরোধী গোষ্ঠীর কাউন্সিলর) ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের হাসিমা বিবি সবার অভিজ্ঞতায় কার্যত এক। হাসিমা বিবি-রা বলেন, “এলাকার কাউন্সিলরকে না পেয়ে দূরে গিয়ে অন্য কাউন্সিলরের শংসাপত্র নিতে হয়েছে।”
পুরপ্রধান না থাকায় এ বারে বেতন পেতে অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে পুরসভার অস্থায়ী কর্মী পরিমল কোঁড়া, সুশান্ত হাজরাদের। তাঁদের দাবি, “২-৩ তারিখের মধ্যে বেতন পেতাম। এ বার বেতন পেতে পেতে ৬ তারিখ হয়ে গেল। আমরা দোকানে ধারে মাল নিই। মাসের ২-৩ তারিখে মাইনে পেয়ে সেই ধার মেটাই। ঠিক সময়ে মাইনে না পেলে বিপুল সমস্যা হয়।” সহকর্মীদের অনেকে অনুপস্থিত থাকার জন্যে সমস্যা তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর ইয়াসমিন আখতারও। তাঁর বক্তব্য, “অনাস্থা ভোট নিয়ে হাইকোর্টে মামলা চলায় শুধু পুরপ্রধানই নন, বহু কাউন্সিলরকেই বারবার কলকাতায় ছুটতে হচ্ছে। যার জন্য পুরসভার নানা কাজে সমস্যা তো হচ্ছেই।” সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন খোদ পুরপ্রধানও। উজ্জ্বলবাবু বলেন, “মামলা চালাতে গত সোমবার থেকে কলকাতায় ছিলাম। শনিবার ফিরেছি। ফের বুধবার গিয়েছি। আগামী বুধবার ফের যেতে হবে। জানি, সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু আদালতের ব্যাপার। তাই আমি বাধ্য হয়ে পড়েছি।” তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “মার্চ-এপ্রিল মাসে কাজের চাপ থাকে সব থেকে বেশি। দীপকবাবুরা সব জেনেও কেন মামলা করতে গেলেন জানি না। ওই মামলার জেরে পুরসভার বহু উন্নয়নমূলক কাজ থমকে পড়েছে। মামলা করে দীপকবাবুরা শহরবাসীর ব্যাপক ক্ষতি করে দিলেন।”
এ দিকে সিউড়ি পুরসভার ‘বিদ্রোহী’ কাউন্সিলরদের নেতা, তৃণমূলের দীপক দাসের পাল্টা দাবি, “পুরপ্রধান নিজে বেনিয়মের কাজ করেছেন। আমরা কার্যত বাধ্য হয়েই মামলা করেছি। এখন উন্নয়নের বড় বড় কথা বলে উজ্জ্বলবাবুরা নিজেদের দোষ ঢাকার চেষ্টা করছেন। এই মামলার যদি কোনও মানেই না থাকত, তা হলে হাইকোর্ট তা গ্রহণই করত না। এই মামলা সিউড়িবাসীর স্বার্থেই করা হয়েছে।”
দলীয় কাউন্সিলরদের এই বিবাদের জেরে সিউড়ি পুরসভায় তৈরি হওয়া ‘অচলাবস্থা’ কবে কাটে, সিউড়িবাসী এখন তারই অপেক্ষায়।

আটকে যে যে কাজ
• বাসস্থানের শংসাপত্র মিলছে না প্রশিক্ষণ প্রার্থীদের।
• বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতার অনুদান পাওয়ার জন্য মিলছে না কাউন্সিলরের শংসাপত্র।
• বেতন মিলছে না অস্থায়ী কর্মীদের।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.