তালিবান শাসন অবসানের পর, রাষ্ট্রপুঞ্জের চাপে দেশের সামাজিক ব্যবস্থার উন্নতিতে সরকারের তরফে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করা হয়েছিল। মার্কিন চিন্তাধারায় প্রভাবিত শাসকেরা চালু করেছিলেন নারী শিক্ষা, নারী সুরক্ষা আইন। নারী কল্যাণের কথা মাথায় রেখেই পিছিয়ে পড়া আফগান মহিলাদের দেওয়া হয়েছিল মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ।
কিন্তু রাষ্ট্রপুঞ্জেরই সমীক্ষা বলছে এত কিছুর পরেও লাভ হয়নি কিছুই। আফগান নারী সমাজ এখনও সেই তিমিরেই। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নিয়ম কানুন, গোঁড়া ধর্মীয় আচার আচারণের জাঁতা কল থেকে এখনও বেরোতে পারেননি তাঁরা।
বাড়ির অমতে নিজের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করে কেউ হারিয়েছেন মা-বাবার আশ্রয়। মদ্যপ, মাদকাসক্ত স্বামীর হাত থেকে রেহাই পেতে পালাতে গিয়ে কেউ আবার কুড়িয়েছেন দুশ্চরিত্রার তকমা। পারিবারিক বিবাদ মেটাতে বা বড় কোনও ঋণ শোধ করতে কেউ হয়তো স্বামীর ইচ্ছেয় বলি দিয়েছেন নিজেকেই। বেছে নিয়েছেন যৌনবৃত্তি। যাঁরা প্রতিবাদ করেছেন তাঁদের দশা আরও শোচনীয়। সুবিচার তো মেলেইনি, উল্টে আইনের মারপ্যাঁচে ফেঁসে গিয়েছেন নিজেরাই। সামাজিক রীতিনীতি ভাঙার দায়ে আদালত তাঁদের অপরাধী সাব্যস্ত করেছে। ‘নৈতিক’ অপরাধের দায়ে পাঠিয়ে দিয়েছে সংশোধনাগারে।
বাদাম বাগ মহিলা সংশোধনাগার, এটাই দু’শোরও বেশি আফগান মহিলার ঠিকানা। সংশোধনাগারের ডিরেক্টর জারিফ নাইবি জানালেন, বন্দিদের অনেকেই এখানে আসার পর মা হয়েছেন। কেউ আবার সন্তানসম্ভবা। এই মুহূর্তে বাদাম বাগে প্রায় ৬২টি শিশুর বাস। উঁচু পাঁচিল আর কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে ঘেরা সেংশাধনাগারের মধ্যেই ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে তারা। তবে পারিবারিক হিংসার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হেরে গেলেও জীবন যুদ্ধে হেরে যাননি ওই সব মহিলা। জেলের চার দেওয়ালের মধ্যেই তাঁরা পড়াশোনা শিখছেন। নিয়মিত আঁকা, সেলাইয়ের ক্লাসও করছেন। ছাড়া পেলে নিজের পায়ে দাঁড়াবেন। কিন্তু ফিরবেন না বাবা, স্বামী বা ভাইয়ের কাছে। মানবাধিকার কর্মী জুবাইদা আকবর বললেন, কাগজে-কলমে নারী সুরক্ষার কথা বলা হলেও দেশে আইনের শাসন কায়েম হয়নি এখনও। তাই মহিলাদের এত ভোগান্তি। সরকারি হস্তক্ষেপ না হলে বাদাম বাগের মতো সংশোধনাগারগুলিতেই আটকে থাকবে প্রতিবাদীদের ভবিষ্যৎ। |