সম্পাদক সমীপেষু...
তসলিমা নাসরিন ও বিবাহ
তসলিমা নাসরিনের লেখা (‘বিয়ে বাতিল’, রবিবাসরীয়, ৩১/৩) পড়ার পর কিঞ্চিৎ অসুস্থ বোধ করছিলাম। তসলিমার লেখায় ‘বিবর্তন আমাদের পূর্বপুরুষদের লেজ খসিয়েছে’-র সঙ্গে ‘বিয়ে বাতিল’ ঠিক হজম হচ্ছে না। একটা মানুষের বহিরাকৃতির পরিবর্তন আর অপরটি মানসিক ও মূল্যবোধের প্রতিফলন। উনি লিখেছেন, ‘অসভ্য-অশিক্ষিত সমাজে বিয়ের প্রথা চলছে’। ‘অসভ্য’ ও ‘অশিক্ষিত’ বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন বোধগম্য হয়নি। ‘সভ্যতা’ বলতে আমরা সাধারণ ভাবে বুঝি, ‘সামাজিক বোঝাপড়া’। যে সামাজিক বোঝাপড়া সবাইকে শান্তি দেয় এবং সবাই মিলে আনন্দ করার পরিবেশ সৃষ্টি করে। বিয়ে করার কারণ দেখাতে গিয়ে তসলিমা লিখেছেন, ‘নির্বিঘ্নে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা, সন্তান জন্ম দেওয়া’। আমি সত্যিই বিস্মিত। কত দম্পতির সন্তান হয় না কিন্তু তাঁরা পরস্পরকে ভালবাসেন, পরস্পরকে দোষারোপ করেন না। যাঁদের সন্তানরা অসুস্থ থাকে, তাঁরা তাঁদের সন্তানকে সুস্থ করার জন্য কতই না চেষ্টা করেন। এটা কি প্রেম, ভালবাসা না কি যৌন সম্পর্কের জন্য? পরস্পরের প্রতি আস্থা ও ভালবাসা না-থাকলে এই ধরনের বা এর চেয়েও কঠিন সমস্যার মধ্য থেকে তসলিমার ভাষায়, ‘অসভ্য ও অশিক্ষিত’ মানুষেরা জীবনকে উপলব্ধি করে জীবনযাপন করছেন। এক দিকে আমরা ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’র কথা বলছি আর অপর দিকে ‘গুচ্ছ বিয়ে’ বা ‘দাম্পত্য জীবনের বৈচিত্র্য’ নিয়ে সরব হচ্ছি। এই ধরনের পরস্পর-বিরোধী বক্তব্য সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে।
দুনিয়ার সব ধর্মই মেয়েদের সতীত্ব নিয়ে হেদিয়ে মরে। কারণ সকলের জানা। শুক্রাণুর দায়টি বইতে হয় নারীকেই। সুতরাং সতীত্ব রক্ষার ভয়ানক দায় নারীর। সমস্যাটা থেকে নারীকে মুক্তি দিতে এগিয়ে এল বিজ্ঞান গবেষণা। নারীর হাতে তুলে দিল কন্ডোমের প্যাকেট ও কনট্রাসেপটিভ পিল। বহু বিবাহ পুরুষ করবে, নারী করলে ক্ষতি কী? এই প্রশ্নটির উত্তর বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর ‘বিষবৃক্ষ’ উপন্যাসে নগেন্দ্রকে দিয়ে বলাচ্ছেন: ‘যদি এক পুরুষের দুই স্ত্রী হইতে পারে, তবে এক স্ত্রীর দুই স্বামী না হয় কেন? উত্তর:... এক স্ত্রীর দুই স্বামী হইলে সন্তানের পিতৃনিরূপণ হয় না’। পুরাকালে শকুন্তলা ছেলেকে নিয়ে দুষ্মন্তের কাছে গিয়ে ঠিক এই সমস্যাটিতে পড়েছিলেন। এখন সে সমস্যার সমাধান করে দিয়েছে ল্যাবরেটরি। ডি এন এ রিপোর্ট বলে দিচ্ছে সন্তানের বাবা কে। সুতরাং বঙ্কিমবাবুর যুক্তি খাটছে না।
আরও অনেক কুপ্রথা মেয়েরা নিজেরাই ভেঙেছেন। মেয়েরা করবে পড়াশোনা? সমাজ উচ্ছন্নে যাবে। আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়ে শ্রীমতী রাসসুন্দরী দেবী গোপনে পড়াশোনা করে বাঙালি সমাজের এই কুপ্রথা ভেঙেছিলেন। মেয়েরা পড়বে ডাক্তারি? কী নিন্দা! কী নিন্দা! প্রথা ভেঙেছিলেন প্রথম বাঙালি মহিলা ডাক্তার কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়। বিধবা কিংবা ডিভোর্সি মহিলার বিবাহ? নিষিদ্ধ প্রথা ভেঙে গেছে। কারণ, মেয়েরা এখন চাকরি করছেন। টাকা রোজগার করছেন। তাই তাঁদের বিয়ে কিংবা ডিভোর্স অথবা পুনর্বিবাহ স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হচ্ছে। যে কোনও প্রথা/সংস্কার ভাঙে সমাজের উঁচুতলার মানুষেরা। তার ঢেউ ধীরে ধীরে সমাজের অন্যান্য স্তরে ছড়িয়ে পড়ে। শুধু সময়ের অপেক্ষা।
বিবাহ প্রথাটি সাধারণত দুটি প্রয়োজন মেটায়।
এক, যৌন আনন্দের সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা। দুই, মানব শিশুর জন্মদান। প্রথম প্রয়োজনটি বিয়ে ছাড়াও সম্ভব। দ্বিতীয় প্রয়োজনটি অর্থাৎ সন্তান জন্মদানের লক্ষ্যটি বহৎ। কিন্তু সমস্যাটি হল, দায় বইতে হয় নারীকেই। সুতরাং বিবাহের প্রয়োজন আছে। আবার সমস্যাও আছে।
যেখানে সমস্যা, বিজ্ঞান তার সমাধান খুঁজবেই। ইতিমধ্যে আমরা ক্লোন্ড বেবি, টেস্ট টিউব বেবি, সারোগেট মাদার ইত্যাদি শব্দগুলির সঙ্গে পরিচিত হয়ে উঠেছি। বাকিটা কেবল সময়ের অপেক্ষা। বিজ্ঞান এমন একটা সমাধান-প্রযুক্তি আমাদের হাতে তুলে দেবে, যখন নারীর গর্ভধারণের ব্যাপারটিই আর থাকবে না।
আর তখনই বিবাহ নামক প্রথাটি তার প্রয়োজনীয়তা হারাবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.