শখ করে ছোট ছেলে নীতেশের নামে নিজের খামারবাড়িটির নাম রেখেছিলেন ‘নীতেশ-কুঞ্জ’। সপ্তাহ দুয়েক আগে সেই খামারবাড়িতেই খুন হন বসপা নেতা দীপক ভরদ্বাজ। তাঁকে খুনের দায়ে আজ গ্রেফতার হলেন সেই ছোট ছেলে নীতেশ। পুলিশের দাবি, বাবাকে খুন করার কথা স্বীকার করেছেন নীতেশ। তবে তাঁর জবানবন্দি থেকে মনে করা হচ্ছে, এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে আরও বড় চক্র রয়েছে।
|
দীপক ভরদ্বাজ |
এই ঘটনায় নীতেশ ছাড়াও দীপকের আইনজীবী বলজিৎ সিংহ শেরাওয়াতকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, বাবাকে খুন করার জন্য বলজিৎকে পাঁচ কোটি টাকার বরাত দিয়েছিলেন নীতেশ। এর পর বলজিৎ প্রতিভানন্দ স্বামী নামে বাহাদুরগড়ের এক স্বঘোষিত ধর্মগুরুকে খুনের দায়িত্ব দেন। সেই ধর্মগুরু অবশ্য এখন পলাতক। তাঁর ছবি প্রকাশ করেছে দিল্লি পুলিশ।
গত ২৬ তারিখে দক্ষিণ দিল্লির রাজোকরি এলাকার ওই খামারবাড়িতে খুন হন ২০০৯ লোকসভা ভোটের সব চেয়ে ধনী প্রার্থী দীপক ভরদ্বাজ। পশ্চিম দিল্লি নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ছ’শো কোটির টাকারও বেশি। স্টেনোগ্রাফার হিসেবে চাকরি জীবন শুরু করলেও পরে গাড়ির যন্ত্রাংশ ও জমির কারবার শুরু করেন দীপক। বাড়তে থাকে ব্যবসা। দিল্লিতে একের পর এক খামারবাড়ি কিনতে শুরু করেন তিনি। শুরু হয় চাষের জমি কেনাও। মূলত পশ্চিম দিল্লিতেই বেড়ে উঠেছিল তাঁর প্রতিপত্তি।
পুলিশের দাবি, এই বিপুল সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে বাবার উপরে ক্ষুব্ধ ছিলেন নীতেশ। তবে ক্ষোভের আরও অনেক কারণ ছিল। ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ছায়া শর্মা জানিয়েছেন, নীতেশকে বাড়িতে ঢুকতে দিতেন না দীপক। এই সমস্ত মনোমালিন্যের কারণেই গত পাঁচ-ছ’মাস ধরে বাবার উপরে প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টায় ছিলেন নীতেশ।
ডেপুটি কমিশনার জানিয়েছেন, আইনজীবী হিসেবে পরিচিত হলেও আসলে বলজিৎ এক জমি-বাড়ির ব্যবসাদার। তাঁর বাসনা ছিল আগামী বিধানসভা নির্বাচনে মহীপালপুর কেন্দ্র থেকে ভোটে দাঁড়ানোর। তাই শর্ত দিয়েছিলেন, ভোটের সম্পূর্ণ খরচ নীতেশ বহন করলে তবেই তাঁর ‘কাজ’ করে দেবেন। জানুয়ারিতে পাঁচ কোটি টাকায় রফা হয় নীতেশ ও বলজিতের। পুলিশ জানিয়েছে, সেই টাকার মধ্যে বলজিৎ এবং প্রতিভানন্দের বখরা ছিল দু’কোটি টাকা করে। বাকি এক কোটি নিয়েছিল ভাড়াটে খুনিরা।
‘নীতেশ-কুঞ্জ’ খামারবাড়িটি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য প্রায়ই ভাড়া দেওয়া হত। সেখানেই খদ্দের সেজে দীপকের সঙ্গে দেখা করতে আসে তিন আততায়ী। কিছু ক্ষণ কথাবার্তা চালানোর পর পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে দু’বার গুলি করা হয় বাষট্টি বছরের দীপককে। তাঁর বুকে এবং পিঠে গুলি লাগে। রক্তাক্ত অবস্থায় ধৌলাকুয়াঁ সেনা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই মারা যান তিনি।
তদন্তে নেমে একটি সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করে দিল্লি পুলিশ। সেখানে স্পষ্ট দেখা গিয়েছে, গুলি চালানোর পর তিন আততায়ী একটি স্কোডা গাড়িতে চেপে পালায়। তাদের মধ্যে দুই ভাড়াটে খুনি পুরুষোত্তম রাণা এবং সুনীল মানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধরা পড়েছে গাড়ির মালিক রাকেশ এবং চালক অমিতও। তাদের জবানবন্দি থেকে পুলিশের অনুমান, এখনও অনেক কথা গোপন করছেন নীতেশ। এর আগে হরিয়ানার রোহতক এলাকার একটি খাল থেকে উদ্ধার হয়েছিল দু’টি দেশি পিস্তল। অনুমান, দীপক ভরদ্বাজকে খুন করতেই সেগুলি ব্যবহৃত হয়েছিল। বিভিন্ন জায়গায় ইতিমধ্যে তল্লাশি চালিয়ে একটি স্কোডা গাড়ি ছাড়াও উদ্ধার হয়েছে ৩০ লক্ষ টাকা, একটি সুইফ্ট, এবং একটি স্যান্ট্রো গাড়ি।
|