|
|
|
|
সিসিটিভিতে তিন আততায়ী |
সাতসকালে দুই গুলিতে শেষ দেশের সব চেয়ে ধনী প্রার্থী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
সকাল ন’টা। দক্ষিণ দিল্লির রাজোকরি এলাকার এক খামারবাড়ির সামনে দাঁড়াল ধূসর রঙের স্কোডা। যাত্রীরা নেমে সটান ঢুকে গেলেন বাড়ির মালিকের সঙ্গে দেখা করতে। কয়েক মুহূর্তের নিস্তব্ধতা। আর তার পরই গুলির আওয়াজ।
মাটিতে রক্তাক্ত লুটিয়ে পড়লেন বাড়ির মালিক তথা ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সব চেয়ে ধনী প্রার্থী দীপক ভরদ্বাজ। নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, সেই নির্বাচনে বসপার প্রার্থী ছিলেন দীপক। মঙ্গলবার সাতসকালে যাঁর মৃত্যু হল তিন অজ্ঞাতপরিচয় আততায়ীর গুলিতে।
কী হয়েছিল এ দিন?
পুলিশ সূত্রে খবর, দীপকের খামারবাড়ি ‘নীতেশ-কুঞ্জ’ বিয়েবাড়ি হিসেবে প্রায়ই ভাড়া দেওয়া হয়। বিয়েবাড়ির খদ্দের সেজেই দীপকের সঙ্গে দেখা করতে আসেন আততায়ীরা। কিছু ক্ষণ কথাবার্তা হয় বলেও পুলিশের অনুমান। আর তার পরেই পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে দু’বার গুলি চালানো হয় বাষট্টি বছরের দীপকের উপরে। তাঁর বুকে এবং পিঠে গুলি লাগে। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে ধউলাকুয়াঁ সেনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মারা যান তিনি। এইমসে তাঁর দেহের ময়না-তদন্ত করা হবে। |
|
খুনের পর খামারবাড়ি থেকে বেরোচ্ছে আততায়ীরা। ছবি: পিটিআই |
তদন্তে নেমে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করেছে দিল্লি পুলিশ। সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, গুলি চালানোর পর তিন আততায়ীর এক জন স্কোডায় চড়ে বসে। বাকি দু’জন রিভলভার হাতে মূল ফটক খুলছে। এবং তার পর গাড়িতে উঠে পড়ে ওই দু’জন। পুলিশের ধারণা, ওই তিন জনই ভাড়াটে খুনি। তবে খুনের আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে।
কিন্তু কে এই দীপক ভরদ্বাজ? তথ্য বলছে, ২০০৯ সালে যখন বহুজন সমাজ পার্টির টিকিটে পশ্চিম দিল্লি নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি, তখন তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ছ’শো কোটির উপর। হোটেল, রিয়েল এস্টেট-সহ একাধিক ব্যবসা ফেঁদেছিলেন দীপক। তবে শুরুর দিকে কিন্তু সাধারণ স্টেনোগ্রাফার ছিলেন তিনি। পরে চাকরি ছেড়ে প্রথমে অটোমোবাইল যন্ত্রাংশের ব্যবসা এবং পরে জমির কারবার। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ব্যবসা। দিল্লিতে একের পর এক খামারবাড়ি কিনতে শুরু করেন দীপক। শুরু হয় চাষের জমি কেনাও। মূলত পশ্চিম দিল্লিতেই বাড়তে থাকে তাঁর প্রতিপত্তি।
রাজনীতির কারবারিদের একাংশের ধারণা, এই অর্থের জোরেই বসপা-র টিকিট পেয়েছিলেন তিনি। দীপকের অবশ্য লক্ষ্য ছিল দিল্লির লাগোয়া উত্তরপ্রদেশের বেশ কিছু এলাকাতেও প্রতিপত্তি বিস্তার। অনুমান সে জন্যই উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন শাসকদলের ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। নির্বাচনে হেরে যান দীপক। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তার পর নিজেদের দলের এই ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি বসপা নেতৃত্ব। কেন? খুব স্পষ্ট ভাবে জানা না গেলেও একাংশের অনুমান, জালিয়াতি এবং প্রতারণার মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত দীপকের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগ করতে চেয়েছিল বসপা।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, দীপকের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী এবং পুত্র থাকতেন না। তাঁরা থাকেন দ্বারকায়। সব মিলিয়ে বাড়ছে ধন্দ। এই হত্যার আসল কারণ রাজনৈতিক, পারিবারিক নাকি অর্থনৈতিক, সে ব্যাপারে আঁধারে পুলিশ। তবে সমস্ত সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখছে তারা। |
|
|
|
|
|