|
|
|
|
মাওবাদী-বিরোধী অভিযান |
ছত্তীসগঢ় পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ সিআরপি |
তাপস সিংহ • রায়পুর |
ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদী হামলা মোকাবিলায় কার ভূমিকা কত বড়, তা নিয়েই এ বার কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী ও রাজ্য পুলিশের মধ্যে তীব্র বিতর্ক দানা বাঁধল।
ছত্তীসগঢ় প্রশাসনের শীর্ষস্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে সিআরপিএফ অভিযোগ এনেছে, মাওবাদী প্রভাবিত এলাকায় অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে রাজ্য পুলিশের ভূমিকায় তারা আদৌ সন্তুষ্ট নয়। অধিকাংশ অভিযানের ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, সিআরপিএফ-এর তুলনায় রাজ্য পুলিশের সংখ্যা অনেক কম। কেন্দ্রীয় বাহিনীর আরও অভিযোগ, প্রতিটি অভিযানেই যেখানে তাঁদের উচ্চপদস্থ অফিসারেরা সামিল হন, সেখানে রাজ্য পুলিশ তাঁদের নিচুতলার অফিসারদের পাঠিয়েই কাজ সারেন। এর ফলে রাজ্য পুলিশের কর্মী-অফিসারদের মনোবল তলানিতে এসে ঠেকেছে। প্রকাশ্যে মুখ খুলতে না চাইলেও এই চিঠিকে কেন্দ্র করে অস্বস্তিতে পড়েছে রাজ্য প্রশাসনও।
রাজ্য প্রশাসন ও কেন্দ্রীয় বাহিনী সূত্রের খবর, এ বছরের প্রথম তিন মাসে, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত যে ৮৪টি অভিযান হয়েছে, তাতে সিআরপিএফ-এর অফিসার ও জওয়ানের সংখ্যা যেখানে ২৭১৪, সেখানে ছত্তীসগঢ় রাজ্য পুলিশের সংখ্যা মাত্র ৫২২।
এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বললেন, “এই বিতর্ক একেবারেই অনভিপ্রেত। কেন্দ্রীয় বাহিনী শুধু এই একটি কাজের জন্যই এসেছে। কিন্তু আমাদের অফিসারদের আরও অনেক কাজ করতে হয়। আইনশৃঙ্খলা সামলানো, নানা বিষয়ের তদন্ত, ভিআইপি ডিউটি ছাড়াও বিভিন্ন মামলায় আদালতে যেতে হয়। তাই সব সময় আমাদের উচ্চপদস্থ অফিসারেরা অভিযানে সামিল হতে পারেন না। তার মানে এই নয় যে আমাদের দিক থেকে এ ব্যাপারে কোনও গাফিলতি রয়েছে।” মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছত্তীসগঢ় পুলিশের অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল আর কে ভিজ আনন্দবাজারকে বলেন, “সব পক্ষকেই এই সমস্যার মোকাবিলায় এক ভাবে কাজ করতে হবে। এখানে কেউ বড় বা ছোট নয়।” পাশাপাশি, সিআরপিএফ-এর ইনস্পেক্টর জেনারেল (অপারেশনস) জুলফিকার হাসান এই চিঠির ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
গত ২৫ মার্চ তারিখের ওই চিঠিতে এই বছরের প্রথম তিন মাসে চালানো কয়েকটি যৌথ অভিযানের তালিকা দিয়ে দু’টি বাহিনীর লোকসংখ্যার অনুপাত বুঝিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। যেমন, গত ১৮ জানুয়ারি নারায়ণপুর জেলার ছোটে উসরি-তে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে যে অভিযান চালানো হয়, সেখানে অংশ নিয়েছিলেন সিআরপিএফ-এর ৩৯, ১৩৯ এবং ২১২ ব্যাটেলিয়নের মোট ২৮০ জন জওয়ান। কেন্দ্রীয় বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন তিন জন কম্যান্ডিং অফিসার। কিন্তু এই অভিযানে এক জন সাব ইনস্পেক্টরের নেতৃত্বে রাজ্য পুলিশের কর্মীর সংখ্যা ছিল ২৫। আবার গত ২২ ফেব্রুয়ারি সুকমা জেলার ভেজি-র বোরগালঙ্কা এলাকায় যে অভিযান চলে, সেখানে এক কম্যান্ডিং অফিসারের নেতৃত্বে সিআরপিএফ-এর জওয়ানের সংখ্যা ছিল ২৯০। এই অভিযানেই এক সাব-ইনস্পেক্টরের নেতৃত্বে রাজ্য পুলিশের কর্মী সংখ্যা ছিল ২০।
লাগাতার এই সব অভিযানে সাফল্য আসছে বলে দাবি সিআরপিএফ-এর। যেমন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিজাপুর জেলার কুরচানিতে এক অভিযানে মাওবাদীদের সেন্ট্রাল টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য সামাইয়া রেড্ডি মারা যান। গত বছরের মে থেকে এ বছরের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত মোট ১৭০টি অভিযান চালিয়েছে এই বাহিনী। এই সব অভিযানে চার জন জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। গত মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩২ জন মাওবাদীর দেহ উদ্ধার হয়েছে বলে সিআরপিএফ-এর দাবি। কোনও বিতর্কে জড়াতে না চাইলেও ছত্তীসগঢ় পুলিশের অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল (গোয়েন্দা বিভাগ) মুকেশ গুপ্তের কথায়: “আমাদের দেওয়া সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী অভিযান চালায়। কোনও কোনও সময় রাজ্য পুলিশও আলাদা করে অভিযান চালায়। অনেক অভিযানে আমাদের লোক ওদের তুলনায় বেশি থাকে।” যেমন, রাজ্য পুলিশ সূত্রে খবর, গত ৪ জানুয়ারি সুকমা-র বীরাভাট্টি এলাকায় এক অভিযানে যেখানে সিআরপিএফ-এর ৯১ জন জওয়ান ছিলেন, সেখানে রাজ্য পুলিশের সংখ্যা ছিল ১৫০। মুকেশ গুপ্ত জানান, এই মুহূর্তে রাজ্য পুলিশে ন’শোরও বেশি সাব-ইনস্পেক্টরের পদ খালি। খালি পড়ে রয়েছে ডিএসপি পদমর্যাদার দেড়শোটি পদ। চেষ্টা হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব ওই সব পদে লোক নেওয়ার।
গোটা দেশের মধ্যে মাওবাদী সমস্যা সব থেকে বেশি এই ছত্তীসগঢ়েই। তাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নজরও এই রাজ্যের উপর বেশি। বিজেপি-শাসিত ছত্তীসগঢ় সরকারের আর্জি মেনে এখানে প্রচুর কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো হয়েছে। এই মুহূর্তে রাজ্যে ২১ ব্যাটেলিয়ন সিআরপিএফ মোতায়েন আছে। আরও ৬ ব্যাটেলিয়ন পাঠানো হচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সব থেকে বেশি মাথাব্যথা হিংসা কবলিত ছত্তীসগঢ়ের বস্তার ডিভিশন নিয়ে। শুধুমাত্র বিজাপুর, দন্তেওয়াড়া ও সুকমা জেলায় এই মুহূর্তে সিআরপিএফ-এর মোট একশোটি ক্যাম্প রয়েছে। |
|
|
|
|
|