কেটে গিয়েছে দু’-দু’টো সপ্তাহ। কিন্তু তৃণমূল ছাত্রনেত্রী তথা আইনজীবী পিয়ালি মুখোপাধ্যায়ের অপমৃত্যু নিয়ে এখনও পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনও তদন্ত রিপোর্ট পেশ করতে পারল না পুলিশ। এই রহস্যমৃত্যুর জট খোলা দূরের কথা, সেটা আরও ঘোরালো হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর কিনারা করতে না-পারাটা কি নিছক পুলিশেরই ব্যর্থতা? নাকি কিছু মন্ত্রী-সহ
উঁচু তলার কিছু ভারী নাম জড়িয়ে যাওয়াতেই রহস্যভেদ করতে পুলিশের এই গড়িমসি?
পুলিশের কাছ থেকে সদুত্তর মিলছে না। তারা বলছে, পিয়ালির বাপের বাড়ি বা স্বামীর বাড়ির তরফে পুলিশের কাছে কেউ কোনও রকম লিখিত অভিযোগ না-করায় এটাকে এখনও নিছক একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। এবং সেই অনুসারেই তদন্ত করছে পুলিশ। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে, অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্তে যা যা করণীয়, তার সবই করা হচ্ছে। তদন্ত মোটেই
থেমে নেই। নিয়মবিধি মেনেই তা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
গত ২৬ মার্চ অর্থাৎ দোলের আগের দিন রাতে রাজারহাটের নারায়ণপুরে পিয়ালির ভাড়াবাড়ি থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পাওয়া যায় একটি সুইসাইড নোটও। পেশায় ব্যাঙ্কশাল কোর্টের আইনজীবী পিয়ালির পৈতৃক বাড়ি বর্ধমানে। কর্মসূত্রে কয়েক মাস ধরে তিনি নারায়ণপুরের ওই ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন। পুলিশ জানায়, গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করলে সাধারণ ভাবে যে-সব লক্ষণ ফুটে ওঠে, ময়না-তদন্তের রিপোর্টে
তা-ই মিলেছে।
কিন্তু মৃত্যুর আগের রাতে ভাড়ার ফ্ল্যাটে পিয়ালির সঙ্গে তাঁর বান্ধবী রূপকথা গঙ্গোপাধ্যায় ছাড়া আরও কেউ ছিলেন বলে জানাজানি হয়ে যাওয়ায় রহস্য ঘোরালো হয়ে ওঠে। সেই ব্যক্তি কে, তা এখনও জানা যায়নি। ওই লোকটির পরিচয় জানা গেলে রহস্যভেদ হবে বলে আশা করছে পুলিশ। এর মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে পিয়ালির বিলাসবহুল জীবনযাপন নিয়েও। নারায়ণপুরের ফ্ল্যাটের ভাড়া কে জোগাতেন, পিয়ালি যে-দামি গাড়িতে চড়তেন, সেটি তিনিই কিনেছিলেন নাকি কেউ তাঁকে উপহার দিয়েছিল এই সব প্রশ্ন জোরালো হয়ে উঠেছে। এবং সেই সব প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর না-মেলায় জট খোলার চেষ্টা সফল হচ্ছে না।
পিয়ালির পরিবারের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, ওই নেত্রীর মৃত্যু নিয়ে পুলিশ যে-ভাবে তদন্ত করছে, তাতে তারা সন্তুষ্ট। এই নিয়ে তাদের এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ নেই। সেই সঙ্গে তারা জানিয়েছে, আইনজীবীর পেশায় পিয়ালি যথেষ্টই সফল ছিলেন। এবং তিনি সেই সাফল্য পেয়েছিলেন নিজের যোগ্যতাতেই। আইনজীবী হিসেবে তাঁর যা আয় ছিল, তা দিয়েই তিনি যথেষ্ট সচ্ছল ভাবে জীবন যাপন করতেন। স্বামী ও মেয়েকে নিয়ে পিয়ালির পারিবারিক জীবনে যথেষ্টই সুখের ছিল। পেশাগত কারণেই বর্ধমান ছেড়ে রাজারহাটে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকতে হত তাঁকে।
|