ংগ্রেসের হাত ধরে বন্দর এলাকায় নব্বই দশকের শুরুতে উত্থান মহম্মদ জাহাঙ্গীর ওরফে মোগলের। পরিবহণ ব্যবসায়ী মোগল বুঝেছিলেন, বন্দরের ক্ষমতা দখল করলে হাতে আসবে অঢেল টাকা। বন্দরের অলি-গলি চিনতেন হাতের তালুর মতো। এলাকা কব্জা করতে তাই তাঁর বেশি সময় লাগেনি। আজকের মুন্না সেই মোগলের দাদা।
২০০১ পর্যন্ত মোগল-জমানায় একাধিপত্য ছিল কংগ্রেসের। তখন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। সিপিএমের সেই রমরমাতেও বন্দরে বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি সিপিএম। উল্টে ফরওয়ার্ড ব্লকের কিছুটা অস্তিত্ব ছিল খিদিরপুর-গার্ডেনরিচ-মেটিয়াবুরুজে, মূলত কলিমুদ্দিন শামসের প্রচেষ্টায়। সূত্রের খবর, মোগলের একাধিপত্য ভাঙতে কসমা ও চিকনা অনিল নামে দুই যুবককে নাকি দায়িত্ব দেন কলিমুদ্দিনই। কিন্তু পুলিশের তথ্য বলছে, গুলি করে কসমাকে মারা হয়। চিকনা অনিল মারা যান পুলিশের সঙ্গে এনকাউন্টারে। সেই সময়ে মুন্নার নাম কেউ জানতেন না।
মোগলের চেহারা ছিল অনেকটা হিন্দি সিনেমার হিরোর মতো। বন্দরে নিয়মিত দরবার বসাতেন। রবিনহুড-মার্কা ইমেজ ছিল তাঁর। অনেক গরিব মানুষ নাকি উপকৃত হন। সেই দরবারের সামনে ২০০১-এর ফেব্রুয়ারির এক সন্ধ্যায় গুলিতে এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যায় মোগলের দেহ। পুলিশের সূত্র জানাচ্ছে, মোগলকে বাগে পেতে মরীয়া সিপিএম শেষ পর্যন্ত নাকি হাত মেলায় কংগ্রেসের সঙ্গে। মোগল তখন কংগ্রেসেরও মাথাব্যথার কারণ। শোনা যায়, রাজনৈতিক দাদার অঙ্গুলি-হেলন মেনে নেননি মোগল। কারও বশ্যতা স্বীকার তাঁর রক্তে ছিল না। তাই কংগ্রেসের সঙ্গে শুরু হয় বিবাদ। সোমেন মিত্রের ঘনিষ্ঠ মোগলের সঙ্গে এক সময়ে ভাল যোগাযোগ ছিল তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী, আজকের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। গার্ডেনরিচে মমতা যখন আক্রান্ত হন, সেই গাড়িতে মোগল ছিলেন তাঁর পাশে।
শোভন চট্টোপাধ্যায় ফিরহাদ (ববি) হাকিম
মোগলের মৃত্যুর পরে সিপিএমের হাত ধরে ওঠেন মোক্তার। বন্দরের ক্ষমতা ছিল তাঁর দখলে। সিপিএমের সদস্যও ছিলেন। শোনা যায়, ২০০৯ পর্যন্ত বন্দরের টাকার ভাগ কে পাবে, তা ঠিক করতেন মোক্তার। বন্দরের রাজনৈতিক জমির অনেকটাই তখন সিপিএমের দখলে। উঠে আসেন ঝুন্নু আনসারি। সেই আনসারি পরিবারের এক ভাই।
কথিত আছে, এক বার এই পরিবারে আয়কর হানা হয়। বাইরে ছিল সরকারি চারটি গাড়ি। বাড়িতে ঢুকে ভাইদের সম্পত্তির হিসেব নিচ্ছিলেন অফিসারেরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই কেউ বাইরে দাঁড়ানো চারটি অ্যাম্বাসাডারে আগুন লাগায়।
খাটালের ব্যবসা করা, সাতে পাঁচে না থাকা ইকবাল ওরফে মুন্না বন্দরের রাজনীতি বা ক্ষমতা দখলের লড়াই থেকে শত হস্ত দূরে ছিলেন। কিন্তু, ২০০৯ সালে অন্তরালে থাকা সেই মুন্নার নিয়তি তাঁকে টেনে আনে বন্দরের রাজনীতিতে। তখন রাজনৈতিক পালাবদলের হাওয়া রাজ্যের সর্বত্র। মুন্নাকে দলে টানে তৃণমূল কংগ্রেস। সেই বছরেই পুর-নির্বাচনে জিতে কাউন্সিলর হন মুন্না। আনুগত্যের পুরস্কার হিসেবে পান বরো চেয়ারম্যানের পদ। তৃণমূল অভ্যন্তরের খবর, মুন্নার মাথায় সেই থেকেই আশীর্বাদের হাত রাখেন দাপুটে তৃণমূল নেতা ফিরহাদ (ববি) হাকিম। মুন্না-বাহিনী থাবা বসায় মোক্তারের সাম্রাজ্যে। কয়েক মাসেই ববি-মুন্নার যুগলবন্দি মোক্তারকে কোণঠাসা করে ফেলে। একটি পুরনো মামলায় গ্রেফতার হয়ে যান মোক্তার।
মুন্নার একাধিপত্য বেশি দিন থাকেনি। ছাড়া পেয়ে মোক্তার ফেরেন পুরনো এলাকায়। বন্দরে পা দিয়েই বুঝে যান সিপিএমের যুগ শেষ। এক কালের পার্টি সদস্য এক কথায় যোগ দেন কংগ্রেসে। শুরু হয় মুন্না-মোক্তার লড়াই। লড়াই, ক্ষমতা ধরে রাখার। লড়াই, বন্দরে উড়ে বেড়ানো টাকার ভাগ নিয়ে।
এ বার পাল্টাচ্ছে সমীকরণ। তবরেজ উঠে আসার অর্থ, ঝুন্নু আনসারির হাত ধরে ওঠার চেষ্টা করতে পারে সিপিএম। তবরেজের বাবা ও স্ত্রী তৃণমূল কাউন্সিলর। কিন্তু, এই দলে এখন মেরুকরণ স্পষ্ট। তবরেজের বাবা সামসুজ্জামান আনসারি তৃণমূলের মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ। তাঁর আধিপত্য বিস্তারের অর্থ, বন্দরে প্রভাব বাড়বে শোভনের। মুন্না ছিলেন ববি হাকিমের ঘনিষ্ঠ। ববি ওই এলাকারই বিধায়ক।
খুব স্বাভাবিক অঙ্কে, মুন্নার পরে তাঁর মেয়ে সাবার উপরে ববির আশীর্বাদের হাত থাকলে ববি তাঁকে সামনে রেখে জমি দখলের চেষ্টা করতে পারতেন। কিন্তু, মুন্নার গ্রেফতারের পরে যে ভাবে সরে গিয়েছেন তিনি, তাতে আপাতত সাবার পক্ষে ববির সমর্থন পাওয়া দুষ্কর। বন্দরের অলিগলিতে প্রশ্ন, মন্ত্রীর সমর্থনে নতুন মুখ কি উঠে আসতে পারে? তবরেজ-সাবার পরে তৃতীয় কেউ? নাকি এক জনের নিরাপত্তা ও অন্য জনের জমি দখলের প্রয়োজনীয়তা কাছাকাছি আনতে পারে ববি-সাবাকে?

(শেষ)
পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.