ঠাকুরপুকুর
নাতির ‘খুনে’ ধৃত ঠাকুরদা-ঠাকুরমা
নাতিকে বিষ খাইয়ে খুন করেছেন ঠাকুরদা ও ঠাকুরমা— এমনই অভিযোগে তুমুল বিক্ষোভ হল ঠাকুরপুকুরের একটি পাড়ায়। ওই যুবকের মৃত্যুর পরে মঙ্গলবার এলাকার লোকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত ঠাকুরদা, ঠাকুরমা ও কাকাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে মৃতের পিসিকেও।
পুলিশ জানায়, কেনারাম গাঙ্গুলি রোডে থাকতেন সম্রাট চক্রবর্তী (২৩)। সোমবার রাতে অচৈতন্য অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। পুলিশ দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠায়। এ দিন সকালে সম্রাটের মৃত্যুর খবর জানাজানি হতেই এলাকায় তুমুল উত্তেজনা ছড়ায়। ওই যুবকের ঠাকুরদা সিদ্ধেশ্বর চক্রবর্তী, ঠাকুরমা শিখাদেবী, কাকা নীলাঞ্জন থাকেন একই বাড়িতে। বিবাহিত পিসিও যাতায়াত করেন ওই বাড়িতে। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, সম্পত্তি দখলের লোভে ওই যুবককে খুন করেছেন তাঁর পরিজনেরাই। তাঁরা জানান, সম্রাটের মা-বাবারও বেশ কয়েক বছর আগে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয়েছিল সম্রাটের মা আলপনাদেবীর। ২০০১ সালে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় সম্রাটের বাবা সন্দীপ চক্রবর্তীর। তবে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের না-হওয়ায় ওই সময়ে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলাই রুজু করেছিল পুলিশ।
সম্রাট চক্রবর্তী।
ওই এলাকার শিবানী বন্দ্যোপাধ্যায়, তপতী ঘোষ, নলিনী মহান্তিরা এ দিন অভিযোগ তোলেন, মা-বাবার মৃত্যুর পর থেকেই নিয়মিত শারীরিক, মানসিক অত্যাচার চলত সম্রাটের উপরে। পৈতৃক বাড়ি হলেও একতলার একচিলতে ঘরে থাকতেন সম্রাট। সে জন্য মাসে-মাসে দু’হাজার টাকা করে ‘ভাড়া’ নিতেন তাঁর ঠাকুরমা। টাকা না-পেলে বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হত। সম্রাটের এক বন্ধুর মা শিবানীদেবী বলেন, “কয়েক মাস আগে ও আমার কাছ থেকে একটা মোমবাতি নিতে আসে। জিজ্ঞাসা করায় বলল, টাকা না-দিতে পারায় ঠাকুরমা ঘরের বিদ্যুতের লাইন কেটে দিয়েছেন।” খুনের অভিযোগ তুলেছেন সম্রাটের দিদিমা পাপিয়া মুখোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, “ওরা আমার মেয়ে-জামাইকেও মেরেছে। এ বার নাতিটাকেও ছাড়ল না। সম্রাট মাঝেমধ্যেই বলত, ওর ঠাকুরমা-কাকারা খুব মারধর করে। রোজগারের টাকা কেড়ে নেয়।”
ঠাকুরপুকুরের সেই পাড়ায় পুলিশের সামনে ক্ষুব্ধ পড়শিরা। —নিজস্ব চিত্র।
সোমবার রাতে সম্রাটের এক বন্ধু তাঁর বাড়িতে তাঁকে ডাকতে গিয়েছিলেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ডাকাডাকিতে প্রথমে সাড়া মেলেনি। পরে নীলাঞ্জনবাবু দরজা খোলেন। সম্রাটের ওই বন্ধু দেখেন, দোতলার একটি ঘরের খাটে শুয়ে রয়েছেন সম্রাট। তাঁর মুখ থেকে রক্ত, গ্যাঁজলা বেরোচ্ছে। স্থানীয় এক জন চিকিৎসককে ডেকে আনা হলে তিনি দ্রুত ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য, ওই বাড়ির একতলার পিছন দিকে একটি ছোট্ট ঘরে থাকতেন সম্রাট। কখনওই তিনি দোতলায় যেতেন না। তা হলে ওই রাতে দোতলায় কেন গিয়েছিলেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসীরা।
মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জমা দেওয়া জন্য পাড়ার সই সংগ্রহ চলছে। প্রচণ্ড গরমেও রাস্তায় নেমেছেন এলাকার মহিলা, যুবকেরা। মহিলারা জানালেন, এই ঘটনায় শোকস্তব্ধ সকলেই। এলাকার প্রায় কারও বাড়িতেই রান্না হয়নি। তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের কাছে অভিযুক্তদের কড়া শাস্তির আর্জিও জানান তাঁরা।
স্থানীয় একটি স্কুলের প্রাতর্বিভাগের শারীরশিক্ষার শিক্ষক ছিলেন সম্রাট। স্কুলের সচিব গ্রেস জর্জ বলেন, “বিনয়ী, নম্র স্বভাব ছিল সম্রাটের। বাড়িতে একাই থাকত। ওকে বলেছিলাম ছেলের মতো আমার কাছেও থাকতে পারে। রাজি হয়নি। তা হলে হয়তো এমন হত না।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.