সদিচ্ছায় আস্থা শিক্ষামন্ত্রীর
রাজনীতি এড়িয়ে ছাত্রভোট কী ভাবে, কথা চান মুখ্যমন্ত্রী
ক্ষমতায় আসার আগে-পরে শিক্ষার আঙিনাকে রাজনীতিমুক্ত করার কথা বলেছিলেন। এ বার ছাত্র সংসদের নির্বাচনকে কী ভাবে দলীয় রাজনীতির প্রভাব থেকে মুক্ত করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই আলোচনা হবে এক দিকে রাজনৈতিক পরিসরে এবং একই সঙ্গে নাগরিক সমাজের মধ্যে।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সোমবার এ কথা জানিয়ে বলেন, “উচ্চশিক্ষা দফতরের একার পক্ষে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। দরকার রাজনৈতিক দলগুলির সদিচ্ছা। নাগরিক সমাজ যদি বিষয়টি রাজনৈতিক শিবিরকে বোঝাতে পারে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথ অনুকূল হবে।”
ছাত্রভোটের হাত ধরে নেতা-নেত্রী-সমর্থক তৈরি করাটা এ রাজ্যের প্রায় সব দলেরই পরম্পরা। তাই ছাত্র সংসদের কাজকর্মে পঠনপাঠন সংক্রান্ত বিষয়ের তুলনায় দলীয় রাজনীতির স্লোগানই প্রাধান্য পেয়েছে। এলাকা দখল খুবই গুরুত্ব পায় রাজনীতিতে। ছাত্রভোটে লক্ষ্য হয়ে ওঠে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের দখল নেওয়া।
এ রাজ্যের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকেরই উত্থান কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-রাজনীতি থেকে। সিপিএমের মতো বাম দলগুলির ক্ষেত্রে এ কথা যতটা সত্য, কংগ্রেস বা তৃণমূলের ক্ষেত্রেও কমবেশি তা-ই। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু’জনেই ছাত্র-রাজনীতির ফসল। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের রাজনৈতিক পরম্পরা এর সঙ্গে জড়িত। ছাত্র সংসদ নির্বাচন হল রাজনৈতিক দলগুলির নেতা জোগানের পথ (সাপ্লাই লাইন)।” এ কথা মাথায় রেখেই এ দিন তিনি ছাত্র সংসদের নির্বাচনকে রাজনীতির প্রভাব থেকে মুক্ত করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলির সদিচ্ছার উপরে জোর দেন।
দীর্ঘ বাম জমানায় তো বটেই, পালাবদলের পরেও ছাত্রভোট আর হিংসা-হানাহানি সমার্থক হয়ে উঠেছে। ইদানীং এই প্রবণতা বেড়েছে বলেও প্রবীণ শিক্ষকদের অনেকে মনে করেন। শিক্ষাঙ্গনকে রাজনীতিমুক্ত করার স্লোগান তুলে ক্ষমতায় এলেও তৃণমূল সরকারের আমলে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। বরং বাম আমলের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালন সমিতির মাথায় বসানো হয়েছে নেতা-মন্ত্রীদের। ছাত্রভোটে হিংসার ঘটনা ঘটলেও সরকার বা শাসক দল বহু ক্ষেত্রেই সমর্থকদের সমর্থন দিয়েছে।
সাম্প্রতিক কালে কলেজ নির্বাচন ঘিরে হিংসা-হানাহানি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, বিশিষ্ট শিক্ষকদের অনেকেই আপাতত ছাত্রভোট স্থগিত রাখার আর্জি জানান। ১২ ফেব্রুয়ারি হরিমোহন ঘোষ কলেজে ছাত্রভোটের মনোনয়নপত্র তোলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে মারা যান এক পুলিশকর্মী। তার পরে রাজ্যের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আপাতত ছাত্রভোট বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করে সরকার। সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় গত মঙ্গলবার আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দিয়ে মারা যান এসএফআই নেতা সুদীপ্ত গুপ্ত।
ওই তরুণ নেতার মৃত্যু ফের প্রশ্ন তুলেছে: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রথাগত ছাত্র সংসদের নির্বাচনের আদৌ কোনও প্রয়োজন আছে কি? সুপ্রিম কোর্ট গঠিত লিংডো কমিটির অন্যতম সুপারিশ ছিল, ক্যাম্পাস নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের সংস্রব থাকা চলবে না। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হয়নি। ব্রাত্যবাবু বলেন, “কোনও রাজ্যই তো এখনও লিংডো-র সুপারিশ গ্রহণ করেনি। আমাদের সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু এই নিয়ে আলোচনা চান। বিগত সরকার তো তা-ও করেনি।”
ছাত্রভোট বন্ধ রাখলে ক্যাম্পাসে যে শান্তি ফেরে, তার উদাহরণ শিবপুরের বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি (বেসু)। ছাত্র-অসন্তোষের জেরে এক সময় লাগাতার শিরোনামে থাকা বেসু-তে ছাত্রভোট বন্ধ রাখা হয়েছে বেশ কয়েক বছর হল। আইআইটি, আইআইএম, আইএসআই, সেন্ট জেভিয়ার্স, নরেন্দ্রপুর ও বেলুড় মঠের রামকৃষ্ণ মিশন পরিচালিত কলেজ, লোরেটো, লেডি ব্রেবোর্নের মতো রাজ্যের অগ্রণী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রচলিত পদ্ধতির ছাত্র সংসদ নির্বাচন নেই।
শিক্ষামন্ত্রী এ দিন বলেন, “আমরা তো আলোচনা চাইছি। পক্ষে-বিপক্ষে মতামত উঠে আসুক না। এখনকার সামাজিক প্রেক্ষাপটে মতামত উঠে আসার প্রয়োজন যে রয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীও তা মানেন।” সরকারের এই মনোভাবকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রবীণ শিক্ষকদের অনেকেই। দুনিয়া জুড়ে প্রথম সারির বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী জানান, ছাত্রভোট বন্ধ রাখা নিয়ে সরকার আলাপ-আলোচনার কথা ভাবলে সেই উদ্যোগ স্বাগত। তাঁর কথায়, “ব্রাত্যবাবু ঠিক কী বলেছেন, জানি না। তবে তিনি যদি আলোচনা আহ্বান করেন, সেটা খুবই ভাল কথা। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কথা। ছাত্রদের রাজনীতিতে টেনে আনার বিপক্ষে বিভিন্ন স্তরে আলোচনা তো হচ্ছে। এটা বাঞ্ছনীয়।”
আইএসআইয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক অভিরূপ সরকার বলেন, “কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগঠন থাকতেই পারে। তারা দাবিদাওয়া জানাবে। আইএসআই-এও এমনটা রয়েছে। কিন্তু তার পিছনে রাজনৈতিক দলের জোর কেন দরকার হবে?” অভিজ্ঞতায় অভিরূপবাবু দেখেছেন, অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীই রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন। তাই ছাত্রভোট ঘিরে যে হিংসা-হানাহানি চলে, তাতে অধিকাংশ পড়ুয়ার সায় থাকে না। তাঁরা পড়াশোনা করতেই আসেন। প্রবীণ শিক্ষক সুনন্দ সান্যালের প্রশ্ন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কি রাজনৈতিক নেতানেত্রী তৈরির কারখানা? রাজনীতির কাছে শিক্ষা ক্রমশ গৌণ হয়ে পড়ছে।”

নেই ভোট
আইআইটি • আইআইএম • আইএসআই
• বেসু • সেন্ট জেভিয়ার্স • নরেন্দ্রপুর
• বেলুড় মঠের রামকৃষ্ণ মিশন পরিচালিত
কলেজ • লোরেটো • লেডি ব্রেবোর্ন

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.