|
|
|
|
কলেজ নির্বাচন |
পুনর্বিবেচনা চেয়ে মমতাকে চিঠি সূর্যের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
আপাতত ছ’মাসের জন্য কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তের কড়া বিরোধিতা করল রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সিপিএম। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে মঙ্গলবার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র ওই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন। চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিরোধী দলনেতার প্রশ্ন, ‘শিক্ষাঙ্গনের এই সমস্যাই যদি সমাধান করতে না পারা যায়, তবে আসন্ন ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্য সরকার আইনশৃঙ্খলা সুষ্ঠু ভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে কী ভাবে?’ সূর্যবাবুর কথায়, “গামলায় বাচ্চাকে স্নান করানোর পরে জলটা ফেলে দিতে হয়। এই সরকার বাচ্চাটাকেই ফেলে দিতে চাইছে!” ঘটনাচক্রে, সরকারের ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলাও দায়ের হয়েছে।
সূর্যবাবুর অভিযোগ, কলেজে কলেজে নির্বাচন উপলক্ষে গোলমাল বাধাচ্ছে বহিরাগতেরা। শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীদের মন্তব্য এবং আচরণ পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে। প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ভাবে রাজ্য সরকার এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারছে না। ‘রাজনৈতিক সদিচ্ছা’ না-দেখিয়ে কলেজের ভোট বন্ধ করে দিলে পঞ্চায়েত ভোটের সময় রাজ্য সরকার কী করবে, সেই প্রশ্নই তুলেছেন বিরোধী দলনেতা। সূর্যবাবু এ দিন বলেন, “বহিরাগত লোকজন এনে পরিকল্পিত হামলা হচ্ছে। বারংবার শিক্ষাঙ্গন কলুষিত হচ্ছে। সরকার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। তারই পরিণতি গার্ডেনরিচ। কিন্তু শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীদের মতামত না-নিয়ে, তাদের অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে কোনও ব্যবস্থা মেনে নেওয়া যায় না।”
এই সিদ্ধান্তকে ‘অগণতান্ত্রিক’ আখ্যা দিয়ে সূর্যবাবুর মন্তব্য, “এর ফলে একটা বার্তা যাচ্ছে যে, ছাত্র নির্বাচন পরিচালনা করতে সরকার অক্ষম! এর পরে মুখ্যমন্ত্রী যখন বলেন, এক দিনে পঞ্চায়েত নির্বাচন করতে হবে, বোঝা যায় অবস্থা কোথায় দাঁড়াবে! সরকার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করুক। অব্যবস্থা দূর করতে উদ্যোগী হোক।” সরকারের তরফে এ দিন অবশ্য পুনর্বিবেচনার কোনও ইঙ্গিত মেলেনি। বরং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন, নির্দেশ অমান্য করে নির্বাচন করা হলে যথাবিহিত ব্যবস্থা নেবে সরকার। তাঁর কথায়, “কেউ নির্দেশ না-মানলে আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে যথাবিহিত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রাজ্য সরকার যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট নিরাপত্তা দিতে পারছে না, এ দিন ব্রাত্যবাবু স্পষ্ট করেই সে কথা জানান। তিনি বলেন, “মাদ্রাসা, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ইত্যাদি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। যথেষ্ট নিরাপত্তা দিতে পারব না বলে সরকার আপাতত নির্বাচন স্থগিত রাখছে।” সেই সঙ্গেই তাঁর ঈষৎ তির্যক মন্তব্য, “এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় কেউ কেউ বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। এ থেকেই সহজে অনুমান করা যায় যে, কারা এত দিন নির্বাচনে সন্ত্রাস চালাত! বাম জমানায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হত না বলে সংঘর্ষ হত।” তাঁর দাবি, তৃণমূল সরকারের দ্বিতীয় বছরে বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা হয়েছে। তাই আপাতত নির্বাচন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
হাইকোর্টে এ দিনই দায়ের-করা জনস্বার্থের মামলায় কুণাল গুহরায় নামে এক ব্যক্তি অবশ্য দাবি করেছেন, রাজ্য সরকার যে ভাবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন স্থগিত করে দিয়েছে, তা অগণতান্ত্রিক। এটা করা যায় না। আগামী শুক্রবার প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটির শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা।
দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ, যোগেশচন্দ্র চৌধুরী-সহ কয়েকটি কলেজের কিছু পড়ুয়ার তরফে গত বছর মার্চে হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের হয়। তাতে জানানো হয়, ছাত্র সংসদ নির্বাচনে যথাযথ নিরাপত্তার বন্দোবস্ত হচ্ছে না। মনোনয়ন তোলা, জমা দেওয়াও যাচ্ছে না। বিচারপতি তপেন সেন তখন বেশির ভাগ কলেজের নির্বাচন বা নির্বাচনের ফলপ্রকাশ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। তিনি জানতে চান, লিংডো কমিশনের সুপারিশ মেনে কেন ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। রাজ্য সরকার সেই সময় হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিল, লিংডো কমিশনের সুপারিশ কী ভাবে কার্যকর করা যায়, তা দেখার জন্য একটা কমিটি গড়া হয়েছে। এই কাজের জন্য ছ’মাস সময় চায় রাজ্য।
জনস্বার্থের মামলায় কুণালবাবুর বক্তব্য, প্রায় এক বছর কেটে গেলেও সরকার এখনও লিংডো কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করার ব্যাপারে কিছুই জানায়নি। অথচ কলেজের প্রাপ্তবয়স্ক ছাত্রছাত্রীদের মতামত জানানোর অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। নির্বাচন স্থগিত রাখা সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকারের বিরোধী।
সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এ দিনই যাদবপুর ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করেন এক দল পড়ুয়া। ছাত্র সংগঠন ডিএসও-র রাজ্য সম্পাদক অংশুমান রায়ও দাবি করেছেন, তৃণমূলের যে নেতা-মন্ত্রীরা গোলমাল বাধাচ্ছেন, তাঁদের সংযত না-করে কলেজে নির্বাচনই বন্ধ রাখা যুক্তিহীন! যদিও দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তারাই পরে জানিয়েছেন, সরকারি নির্দেশ না মেনে উপায় নেই। |
|
|
|
|
|